সাজ্জাদ আলী

গ্রেটার টরন্টো এলাকায় যাঁরা ইতিমধ্যেই বাড়িঘর কিনেছেন তাঁদের জন্য তো বটেই, যাঁরা নিকট ভবিষ্যতে ক্রয়ের কথা ভাবছেন আসলে তাঁদেরও “প্রপার্টি-বিক্রয়ের” গতি-প্রকৃতি এবং মূল্য সূচকের উঠা-নামা নিয়ে ধারণা থাকা আবশ্যক (তা সেটা বাড়ি বা কন্ডোমিনিয়াম যাই হোক)।
এ প্রসঙ্গে সবার জন্য সুখবর হলো বিগত দশকগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গত বছরের তুলনায় এ বছরেও বাড়িঘর বিক্রির মোট সংখ্যা এবং গড় বিক্রয় মূল্য দুটোই ঊর্ধ্বমুখী। এই ঊর্দ্ধমুখীতাকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখবরই বলতে হবে। কারণও সোজাসাপ্টা। বাড়িঘরের বিক্রি-সংখ্যা যদি হ্রাস পায় অথবা দাম পড়ে যায়; তবে বাড়ির মালিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হন। আবার এই দাম পড়ে যাওয়াটা যদি চলতেই থাকে তবে আগ্রহী ক্রেতারাও এই খাতে ডলার লগ্নিতে শঙ্কিত থাকবেন। শুধু বাড়ি বলে কথা নয়, যে কোন ধরণের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই “লোকসানী খাত” বোকারাও এড়িয়ে চলে। “দিনে দিনে বাড়িটির দাম বাড়বে” এ রকমের তীব্র একটা প্রত্যাশা সব মালিকের মনেই থাকে। গত ১৯ বছরে আমি সরজমিনে দেখেছি যে টরন্টো রিয়েল এস্টেট মার্কেট কখনও মালিকদের হতাশ করেনি।

মার্কেটে যাঁরা নতুন, অর্থাৎ প্রথমবারের ক্রেতা, তাঁদের অনেকেরই অন্তর্নিহিত মনের কোনে এমন একটা প্রত্যাশা থাকে যে, “আমি যখন কিনছি তখন দামটা কম হোক, কিন্তু তারপরই তরতর করে তা বাড়তে থাকুক”! কিন্তু তাতো আর হবার না বন্ধু! বছরে বছরে টরন্টোর বাড়িঘরের দাম যদি অধোগতি হতো, তবে ক্রেতারা ভাড়া থাকতেই অধিক স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। আবার এ কথাও অতি বাস্তব যে, দাম বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁলে তা নতুন ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতাকে জটিল করে তোলে বৈকি।
তো টরন্টোতে বাড়িঘরের দামের সেই ঊর্দ্ধগতির দুটো একটা তথ্য-উপাত্ত বলি তবে। প্রথমেই বলি এই বিক্রয় পরিসংখ্যানে টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ডের আওতাধীন এলাকায় বিক্রিত সব ধরণের রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যেমন ডিট্যাচ, সেমি ডিট্যাচ, কন্ডোমিনিয়াম এপার্টমেন্ট, ফ্রিহোল্ড ও কন্ডো টাউনহাউস, ইত্যাদি। ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোট বিক্রিত বাড়ির সংখ্যা ছিলো ৬,৪১৪টি। কিন্তু ২০১৯ সালের সেই সেপ্টেম্বরে বাড়ি বিক্রির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭,৮২৫টি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে ১,৪১১টি বাড়ি বেশি বিক্রি হয়েছে। আবার মূল্যবৃদ্ধির সূচক বলছে যে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের বিক্রিত বাড়িগুলোর গড় মূল্য ছিলো ৭৯৬,৭৮২.০০। কিন্তু ২০১৯ সালের সেই সেপ্টেম্বর মাসেই গড় মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪৩,১১৫.০০ ডলার। অর্থাৎ এক বছর সময়ের ব্যাবধানে ৫.৮% হারে বাড়িঘরের দাম বেড়েছে (শুধু সেপ্টেম্বর মাসের হিসাবে)। দেখা যায় ২০১৮ সালে যাঁরা কিনেছিলেন, তাঁরা ২০১৯ সালেই বেশ খানিকটা লাভের মুখ দেখছেন। উপরের উপাত্তসমূহ টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড থেকে সংগৃহীত। গ্রেটার টরন্টো শহর ছাড়াও হ্যালটন, পিল, সিমকো, ইয়র্ক, ও ডারহাম পৌর এলাকার ছোটবড় সব শহরগুলো নিয়েই টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড গঠিত। বোর্ডের এ ধরণের তথ্যগুলো কখনওই অনুমান নির্ভর বা বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞ-পূর্বাভাস (!) নয়। মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি বিক্রিত প্রপার্টি গুণে গুণে ওরা তথ্যব্যংক তৈরী করে, সবই ঘটমান সত্য। উপরে মাত্র একটি মাসের (সেপ্টেম্বর, ২০১৮/১৯) দর উঠার হিসাব বললাম। পাঠক বন্ধুদের ৯ মাসের হিসাবটি জানা থাকলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টরন্টোতে মোট বিক্রিত বাড়িঘরের সংখ্যা ৬০,১৬১ টি এবং গড় বিক্রয় মূল্য ছিলো ৭৮৭,৮৮০.০০ ডলার। ২০১৯ সালের ওই একই সময়ে গড় মূল্য ছিলো ৮১১,৬০২, আর বিক্রি হয়েছে ৬৭,৯৫৭টি বাড়ি। এই সময়কালে ৩.০১% হারে প্রপার্টির দাম বেড়েছে। আজ এ পর্যন্তই। এত সব অংকের হিসাব লিখে পাঠকদের মাথা ধরাতে চাই না। পরবর্তীতে ভিন্ন বিষয়ে লিখবো আশাকরি। টরন্টো’র রিয়েল এস্টেট নিয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে ফোন করতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে। সাজ্জাদ আলী, রিয়েলটর, ৪১৬-৮৭৯-৭১৪১