অখিল সাহা, টরন্টো : দেশপ্রেমিক রাজনীতির বাতিঘর অধ্যাপক মুজাফ্ফরের মৃত্যু নেই। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত এসেম্বলি সদস্য, ১৯৫৭ সালে পূর্ববাংলার স্বায়ত্ত্ব শাসনের প্রস্তাবক, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর সভাপতি অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুতে কানাডার টরন্টোর বাঙালি পাড়ার কেন্দ্রে অবস্থিত ইউনাইটেড হোপ চার্চে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক উদ্যোগ (পিডিআই) আয়োজিত স্মরণ সভায় ডাকসুর প্রাক্তন এজিএস নাসির উদ দুজা বলেন, অধ্যাপক মুজাফ্ফর ছিলেন সকল দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জন্য আদর্শের বাতিঘর। বর্তমানের রাজনীতিতে আদর্শহীনতা ও স্বার্থবাদিতার অন্ধকারে অধ্যাপক মুজাফ্ফর ছিলেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যিনি সারা জীবন দেশ ও জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেন। তাঁর শুন্যস্থান কোনভাবেই পূরণ হবার নয়। তাঁর মত নির্লোভ ও রাজনীতিতে স্বার্থ ত্যাগের চেতনা সমৃদ্ধ রাজনীতিকের কখনো মৃত্যু হবে না। সভায় অন্যান্য বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবক্ষয়ের মুক্তিই ছিল তাঁর একমাত্র আকাঙ্খা জানিয়ে বলেন, তাঁর রাজনৈতিক পথ অনুসরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক-সামাজিক মুক্তির নতুন পথ নির্দেশনা পাওয়া সম্ভব। বক্তারা তাঁর স্মৃতিকে সামনে রেখে তাঁর রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বিভিন্ন অংশ ও সকল অনুসারীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষনের আন্দোলন তীব্রতর করার আহ্বান জানান। তাঁরা আরো উল্লেখ করেন, সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির একতা ছাড়া দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় প্রাক্তন ছাত্র নেতা নাসির উদ দুজাসহ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডঃ আব্দুল আউয়াল, লেখক সালমা বানী, লেখক ফারহানা আজিম শিউলী, সাংবাদিক নুর কাজী, কানাডা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম, কানাডা উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৌমেন সাহা, পিডিআই কর্মী ননীগোপাল দেবনাথ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন পিডিআই-এর সমন্বয়ক মাহবুব আলম। সভায় সভাপতিত্ব করেন পিডিআই কানাডার যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল মালিক। তিনি স্মরণ সভায় যোগদানের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে টরন্টো এবং নিকটবর্তী শহর থেকে বিপুল সংখ্যক দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ন্যাপ সভাপতি, অধ্যাপক মুজাফ্ফর গত ২৩শে আগষ্ট ঢাকায় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৭ বছর বয়েেস মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে থেকে ন্যাপের রাজনীতির সাথে আছেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে ন্যাপ সম্মিলিতভাবে মুক্তিবাহিনী নামে একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আহুত হয়ে যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর তাঁকে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানালেও নির্লোভ এই নেতা শ্রমজীবি সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় তা গ্রহণ করেননি। ২০১৫ সালে তাঁকে সরকার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা দিবস পদক প্রদান করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জন্মস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী আসমা আহমেদ ও একমাত্র কন্যা আইভি আহমেদ রয়েছেন।