সংস্কৃতি কোন দখলদারিত্বের বিষয় নয়। এটা বোধের বিষয়। একটা অনুষ্ঠান আপনি মাঁচা বেধে চাঁদা দিয়ে চাঁদা নিয়ে করুণ তা নিয়েও আপত্তি থাকবে না যদি বিষয় ভাবনার প্রতি আপনি শ্রদ্ধাশীল হোন।

পোষাকি সাংস্কৃতিক কর্মী ও পোষাকি বুদ্ধিজীবীর এই সমাজে, আমরা তৃণমূলের কিছু সাংস্কৃতিক দিনমজুরদের সংগঠিত করে, কখনও কিছু নিরীক্ষাধর্মী কাজ করেন সংগঠক আহমেদ হোসেন ও তাঁর দল অন্যস্বর ও অন্যথিয়েটার।
দ্রোহের উচ্চারণে কবিতা ও গানে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে পক্ষকাল ব্যাপি দেশের গান ও কবিতা আবৃত্তি শেষ হলো বিজয়ের আনন্দের মধ্যদিয়ে।

ডিসেম্বরের ১ তারিখ প্রচন্ড তূষার ঝড়ের ভেতরে, এই শহরে অবস্থানরত বাংলাভাষার অগ্রগণ্য কবি, শব্দসৈনিক, কবি আসাদ চৌধুরী। দ্রোহের যে ত্যাজালো বাতিটা জ্বালিয়ে ছিলেন, শায়লা মিজান-কিশোয়ারার ছোট্ট আঙ্গনটিতে, অন্যস্বরের “দ্রোহ এনেছে বিজয় ১৯৭১” সেই বাতিটা ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত এই আসরকে কিভাবে আলোকিত করে রেখেছিল তা প্রত্যক্ষ করেছেন বিদগ্ধজন। এই অদৃশ্য মঙ্গল দীপে এসে দাহ্য ঢেলেছেন প্রতিদিন নাট্যকার নির্দেশক হাবিবুল্লাহ দুলাল দম্পতি, এসেছেন পরের কল্যানে সিদ্ধ মস্তক কবি দেলওয়ার এলাহী, কবি ইকবাল হাসান, কবি দিলারা হাফিজ, নিউমার্কেট থেকে এসেছেন সুমন রহমান,শিল্পী -শিল্পপতি শহিদুল ইসলাম টুকু, শেখ শাহেনেওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ও মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন, সমাজসেবী রেজোয়ান রহমান, শিবু চৌধুরী, ফাইজুল করিম ও হাসমত চৌধুরী। আর লাল-সবুজে মোড়ানো রাবেয়া হোগেনের উপস্থিতিতে ঝলমলে হয়ে উঠেছে প্রাণের বর্ণমালা। এসেছেন আমাদের ফিল্ম ফোরামের বন্ধুরা। অনেক শুভাকাক্সক্ষী যাদের নাম এই লেখায় উঠে আসেনি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আর দুরের বন্ধুরা যারা ঠিক রাত আটটায় হাতের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির স্ক্রীনে সামিল হয়েছেন, শুধু এই বলবো। ওগো প্রেরণা জাগানিয়া, অন্যস্বর মাঠে ছিলাম মাঠেই থাকবো; প্রাণভরে আরো আরো শোনাবো আমাদের বিজয় কথা-কবিতা ও গান।

সুদুর প্রবাসে বসে বাংলা বর্ণমালাকে ভালোবেসে, লক্ষী বাংলাদেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করা শহীদ, বীরাঙ্গনার প্রতি আমাদের দ্রোহের এই অঞ্জলিকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে, আমাদের সদস্যাদের তাচ্ছিল্য করে, তাদের লাল-সবুজের শাড়ি পড়াকে, ঝলমলে শাড়িপরে এখানে সেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা করে বেড়ানো বলে কটাক্ষ করেছেন এই শহরের খন্ডিত বুদ্ধিজীবী (যা করমু আমরা আর মামুরা, তুমি করলেই এইটা ভালো না এই অর্থে) আর তাতে সায় দিয়েছেন মন্দধরি (না রাবণের স্ত্রী নয়। কেবল তোমার মন্দটাই ধরি এই অর্থে)।
হে হিংসা এবং ক্রোধ দুই ভাই-বোন। বাংলা বর্ণমালার শব্দ নিয়ে, এখানে সেখানে পৃথিবীর যে কোন স্থানে যারা চর্চা করে বেড়ায়, তাদের আপনারা টিপ্পনী কাটতে পারেন কি না তা সময় এবং সময়ের পাঠক বলে দেবে। আমি সেই ধৃষ্টতা করবো না। আপনারা আমার নমস্য।

তবু আপনাদের চোখের দেখার ফিল্টার হয়ে একটু ঘোরে আসতে চাই। আপনাদের হৃদয় আকাশের হিংসার মেঘ, বৃষ্টি হয়ে ভেঙে পড়লে, সুনীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বিবেকের বোতাম খুলে দেখবেন। এই ঝলমলে শাড়ি পরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা,উদিত সূর্যের দেশ থেকে রক্ত লাল নিয়ে আর শ্যামলীমা থেকে সবুজ নিয়ে নিজেদের সাজিয়েছেন। যেন শাপলা বকুল শিউলির আঘ্রাণ মাখা যুথ বদ্ধ রক্ত কমল। জোড়া-জোড়া চোখ গুলো দেখে নেবেন, এরা কখনো হাজারো ক্ষতের মত উৎক্ষিপ্ত কখনো উল্কার আগুন।
হে প্রবীন আপনি না যুদ্ধ দেখেছেন, রক্ত আগুন ভয় দীর্ঘশ্বাস উপেক্ষা করে, সীমান্তের ওপারে মাত্র দুই সপ্তাহের ট্রেনিং দিয়ে রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েছিল ছাত্র-জুবা-শিক্ষক-কামার-কুমার। মনে আছে?
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে শব্দসৈনিক কবি আসাদ চৌধুরী বলেছিলেন এমন ও সাহসী যোদ্ধা দেখেছেন যে নাকি ৬ দফা ১১ দফা জানেনা; যুদ্ধ করেছে মা’য়ের জন্য। সোনার খাঁচায় বন্দী জীবন নয়, স্বাধীন এক নতুন জীবনের জন্য।

আমাদের “দ্রোহ এনেছে বিজয় ৭১” পক্ষকাল ব্যাপি এই অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের দুই সপ্তাহ সময়ই দিয়েছিলেন দলনেতা আহমেদ হোসেন।
ষোলদিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠান সমন্বয় করেছে রিফাত-রিমি। রিফাতের একটি কোলের শিশু আছে জানেন; আজো জিজ্ঞেস করিনি কার কাছে রেখে আসতো। সারাদিন ব্যাংকে কাজ করে আসতে হতো উর্মিকে একই রকম অন্যান্য কাজ থেকে আসতো জুলিয়া,সিনথিয়া, হাসি, ফারিহা এবং ইশতিয়াক ফারিয়া। শেখ নাহার, বাবুর হাতের অপারেশনের জন্য তার পর্ব করতে হয়েছে আমাকে , লাকি, শান্তাকে আসতে হতো কাজ থেকে। এজাক্সে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত। মুক্তি ঘরে ফিরলে তবেই মনে হতো তাঁর একটি ঘর আছে। সদ্য হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়া বাবাকে পিকারিং এর বাসায় রেখে আসতো রিক্তা, পাশে চালক স্বামি রনি মজুমদার, তার নয়ন বাবার কল্যানে জপে প্রভূর নাম-গুন। আপনি দেখেছেন তার ঝলমলে শাড়ি পরা রুপ। দেখেননি কভু বাবার জন্য তার বুক ধুকপুক। এই প্রথম কবিতা আবৃত্তি করেছে মাহমুদুল। সারাদিন লম্বা কাজ শেষে রিমির প্রিয়তম স্বামীটিকে ঘরের দরজা খুলে দেয়নি কেউ কারন ঐ সময়টায় সে ব্যাস্ত, শায়লা-কিশওয়ারার আঙ্গনটিকে নকশি কাঁথা আর পতাকা দিয়ে দ্রোহের কুঞ্জ সাজাতে। এতোটা উতলা বর্ণমালার জন্য, দেশের জন্য। গুরদেবের কথা সমালোচনা করা সহজ কিন্তু বিচার করিতে গেলে ভিতরে আসতে হয়। আশা করি পাঠক বিচার করবেন।

আর এই দুই সপ্তাহের ট্রেনিং এ আহমেদ হোসেন চেষ্টা করেছেন। নিরব অথচ বোধের অঙ্গুলি দিয়ে কবিতা কে আবৃত্তি হয়ে উঠার পথ দেখিয়েছেন ঈশাত আরা মেরুনা। আমাদের ব্যার্থতা আমরা নিতে পারিনি সবটুকু। তাই হয়তো আমাদের অনেক ভূল ছিলো, উচ্চারণ ছুটেছে, স্বর ছুটেছে তাই বলে আমদের ভাবনার গভীরতায়, ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর অযুত বীরাঙ্গনার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল অকৃত্রিম। তবে আমরা শিখেছি সময় সচেতনতা, শৃঙখলা আর দিয়েছি নিবিষ্ট মনে শহীদের প্রতি আমাদের দ্রোহের অঞ্জলি। উড়তে চেয়েছি শান্তির পায়রা হয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কুটিল ব্যাধের মতো চক্রান্ত করে, কুৎসিত শব্দবানে আমাদের আহত করতে চেয়েছেন হে অগ্রজ। খেয়াল করেছেন নিশ্চয় তাতে কেউ বাতাস দেয়নি। আরেক জনের দেয়ালে ঢুকে, কবিকে ঢাল করে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে অন্যের উদ্যোগ কে ছোট করার হীন মানসিকতার সভ্যতা-ভব্যতার কোন পর্যায়ে পড়ে আপনিই ভালো বুঝবেন। অবশ্য কেউ একজন আমাকে বলেছিলেন জ্ঞানী লোকের চর থাপ্পড়ের মধ্যেও জ্ঞান থাকে। কি জানি এটা হয়তো সেরকম কিছু।

আমাদের জোড়া-জোড়া হাত উর্ধপানে প্রার্থনারত। আপনি নিরাময় হয়ে উঠবেন। আপনার ছানি পড়া চোখের ঝাপসা দৃষ্টি কাটিয়ে উঠবেন। আমার সুরে আপনার সুর মিলে আমাদের সুর হয় এই বোধ জাগ্রত হউক। ফেইসবুকে হিংসার চাষ না করে আপনাদের অভিজ্ঞতার বীজ বপন করুন তার থেকে সবুজ শস্য হয়ে মর্মরিত হবে বাতাসে।
সেই জ্বলন মুক্ত বাতাস নিয়ে বেড়ে উঠবে প্রজন্ম;ঋদ্ধ হবো আমরা। আর মুঠো মুঠো আনন্দ কুড়িয়ে মন্দধরি ও হয়ে উঠবেন আনন্দধরি। “অন্যস্বরের” “দ্রোহ এনেছে বিজয় ৭১” পক্ষকাল ব্যাপি এই আয়োজনের যারা কাছাকাছি ছিলেন সুধীসমাবেশ, যারা দুরে ছিলেন সংযুক্ত হয়েছেন হাতের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে এবং আড়ালের টিপ্পনী সমাবেশ সবার কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের সাথে থেকেছেন, সাথে রেখেছেন।

শেষ করছি নিজের কথা বলে। কবিতার নদীতে আমি এখনো বৈশাখ মাসের হাটুজলে আছি। প্রতিদিন শিখি। আপনাদের অভিজ্ঞতার থেকে, দলনেতার থেকে, আর বোধের অনুভবের ইশারায় মানুষ হয়ে ভাবতে শেখায়, কাঁচাপাকা চুল, অপরাজেয় গোঁফ, স্মিত হাসি মুখের আমার রথের মধুসূদন। হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব