অনলাইন ডেস্ক : কানাডার ৪৩তম সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি। দেশটির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি’র খবর অনুয়ায়ী ১৫৬টি সিট পেয়েছে লিবারেল পার্টি। লিবারেলরা এবার ‘সংখ্যালঘু সরকার’ হিসেবে ক্ষমতায় যাচ্ছে। আর মাত্র ১২টি সিট পেলে একক সংখ্যাগরিষ্ট সরকার গঠন করতে পারতো তারা।

নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলের পর মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘এ বিজয় আপনাদের সবার। আপনারা যে সম্মান আমাকে দিয়েছেন এবং যে দায়িত্ব দিয়েছেন, গত চার বছর যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, আগামী দিনগুলোতে আরো ভালোভাবে আপনাদেরকে নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আরো সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করব, আপনাদের সবাইকে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ।’

কানাডার নির্বাচনে এবার মোট ৬টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। মন্ট্রিয়লে নিজের ভোট দেন ট্রুডো। এ বছর কোন দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। গতবারের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি ‘সংখ্যালঘু সরকার’ গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী সর্বশেষ পাওয়া খবরে এ পর্যন্ত লিবারেল পার্টি পেয়েছে ১৫৬ টি আসন, কনজারভেটিভ পার্টি ১২২ টি , কুবেকুয়া পার্টি ৩২টি, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৪ টি, গ্রিন পার্টি তিনটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে জয় লাভ করেছে।

আয়তনের দিক থেকে কানাডা ৯ হাজার ৯৮৫ মিলিয়ন কিলোমিটার হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৩৭ মিলিয়ন। যার রয়েছে ১০ টি প্রভিন্স এবং ৩টি টেরিটরিজ। বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডার হাউজ অব কমন্স সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৩৩৮টি। এককভাবে কোন সরকার গঠন করলে প্রয়োজন ১৭২টি আসনের।

কানাডার ইমিগ্রেশন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী পাড়ি দেয় কানাডায়। কানাডার বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবনের নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি ব্যতিক্রমী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের সকলের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

টরেন্টো ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট বোথওয়েল বলেন, ‘এটা ২০১৫ সালের মতো নয়। এখানে সবকিছু তাদের নেতার কারণে হয় না।’

‘ট্রুডো এখানে প্রধানমন্ত্রী কারণ পার্টির অন্য সদস্যরা একসাথে কাজ করেছেন এবং দলকে টেনে তুলে বিজয়ী করেছেন। যদিও ট্রুডো যা হয়েছে তার কৃতিত্বের দাবিদার হলেও তিনি এখনও এমন গুণাবলী প্রদর্শন করতে যাচ্ছেন যা তিনি এখনও দেখাননি,’ যোগ করেন অধ্যাপকক বোথওয়েল।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নেলসন উইজম্যান বলেন, ‘ট্রুডোর এতটা ভালো ফল দেখে আমি অবাক হয়েছি। কারণ আমি মনে করি না যে কেউ ট্রুডোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের প্রত্যাশা করেছিল, তবে তারা খুব বেশি দূরেও নয়।

এদিকে এরই মধ্যে জাস্টিন ট্রুডোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, একটি দারুণ ও কঠিন লড়াইয়ে জয়ের জন্য জাস্টিন ট্রুডোকে অভিনন্দন! আমাদের দু’টি দেশের ভালোর জন্য আপনার সঙ্গে কাজ করতে আমি অপেক্ষায় আছি।

এ ফেডারেল নির্বাচন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জন্য গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কারণ বিভিন্ন স্ক্যান্ডালে প্রথম মেয়াদ টালমাটালভাবে শেষ করেন ট্রুডো। যে কারণে নির্বাচনে মধ্য-ডান রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লিবারেল প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে কম আসন পাওয়ার কারণে সংসদে কোনো আইন পাস করার ক্ষেত্রে ট্রুডোকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য হতে হবে।- সংবাদসংস্থা