‘রূপসা নদীর বাঁকে’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী শেষে উত্তম গুহ এবং চিত্রলেখা গুহের সাথে উপস্থিত দর্শকের একাংশ

মনিস রফিক : গত ৮ই অক্টোবর, শুক্রবার, সন্ধ্যায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ৩০০০ ড্যানফোর্থস্থ মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের পূর্ণ দৈর্ঘ্য কাহিনি চলচ্চিত্র ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ প্রদর্শিত হয়। ২০২০ সালে নির্মিত ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ চলচ্চিত্রের কাহিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক ত্যাগী বামপন্থী নেতার জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। অতি বাল্যকাল থেকে মানবপ্রেম এবং দেশ প্রেমে একনিষ্ঠ সেই নেতা মানব মুখোপাধ্যায় এর বেড়ে উঠার সাথে সাথে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পূর্ব সময় থেকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময়ের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের এক ধারাবাহিক চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি যেভাবে চিত্রিত হয়েছে তা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সুস্থধারার স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে তানভীর মোকাম্মেল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম। তিনি ১৯৫৫ সালের ৮ই মার্চ বাংলাদেশের খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা শেষ করে তিনি মূলত চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং লেখালেখির সাথে নিজেকে জড়িত করেন। ১৯৮৪ সালে নির্মিত তাঁর প্রথম স্বল্প দৈর্ঘের কাহিনিচিত্র ‘হুলিয়া’ দেশের যুবকদের বিশেষভাবে আলোড়িত করে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীন এবং বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে একজন অন্যতম অগ্রদূত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাহিনি চলচ্চিত্র হচ্ছে, ‘চিত্রা নদীর পারে’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘লাল সালু’, ‘রাবেয়া’, ‘লালন’ এবং ‘জীবনঢুলী’। তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র হচ্ছে, ‘অচিন পাখি’, ‘অয়ি যমুনা’, ‘কর্ণফুলির কান্না’, ‘তাজউদ্দীন আহমেদ- নিঃসঙ্গ সারথি’, ‘স্বপ্নভূমি’ এবং ‘১৯৭১’।

বাংলাদেশে একুশে পদকে সম্মানিত তানভীর মোকাম্মেল একাধিকবার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।

টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর অন্যতম আর্কষণ ছিল এই চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত দু’জন গুণী শিল্পী উত্তম গুহ এবং চিত্রলেখা গুহ’র উপস্থিতি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনায় ৯ বার জাতীয় পুরষ্কারে সম্মানিত উত্তম গুহ এই চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনা ছাড়াও অভিনয় এবং প্রধান সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আর বাংলাদেশের অতি পরিচিত অভিনয় শিল্পী চিত্রলেখা গুহ এই চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও কাস্টিং ডিরেক্টর, কস্টিউম ডিজাইনার এবং সংগীত শিল্পী হিসেবে কাজ করেন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল জুম মিটিং এর মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

উল্লেখ্য, টরন্টো ফিল্ম ফোরাম প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ৩০০০ ড্যানফোর্থের মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীতে আগামী ১৫ অক্টোবর প্রদর্শিত হবে রাশিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রেগরি চুকরাই এর ‘ব্যালাড অফ এ সোলজার’।