কাশ্মীর
কাশ্মীর

অনলাইন ডেস্ক : কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ভাষণে তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান করে শান্তি আনতে চেয়েছিলেন তিনি। জনগণের সামনে কাশ্মীর ইস্যুতে সরকারের নীতিমালা ও অবস্থান তুলে ধরতে চান বলে জানান পাক প্রধানমন্ত্রী। এ খবর দিয়েছে দ্য ডন।

ইমরান তার ভাষণে বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার সময় এই ইস্যুর সমাধান করতে চেয়েছিলাম। শান্তি আনতে চেয়েছিলাম। ভারত ও আমাদের মধ্যে অনেক দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। উভয় দেশই মুদ্রাস্ফীতি, দারিদ্র, বেকারত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার সম্মুখীন।
আমরা সকলের বন্ধু হতে চেয়েছিলাম। ক্ষমতায় আসার পর আমি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথমে তাদের নির্বাচন আসন্ন ছিল। আমরা নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেছি। ভেবেছি নির্বাচন শেষ হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। এরপর পুলওয়ামা হামলা হলো, একজন কাশ্মীরি মানুষ নিজেকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। তারা আত্মদর্শী না হয়ে, আমাদের দিকে আঙুল তুললো। নির্বাচনের পরে আমরা বুঝতে পারলাম, আসলে তাদের এজেন্ডাই ভিন্ন ছিল। তারা এফএটিএফ’এ পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করলো। ৫ই আগস্ট তারা কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করলো ও ঘোষণা করলো যে, অঞ্চলটি এখন ভারতের অংশ। এটি তাদের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন বিরোধী সিদ্ধান্ত।

পাক-প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) দলের মতাদর্শ বুঝতে হবে। এই সংগঠনটি ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অভিভাবক সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিও এর একজন সাবেক সদস্য। আরএসএস বিশ্বাস করে যে, হিন্দুরা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে উচ্চজাতের ও বাকিরা দ্বিতীয়-শ্রেণির নাগরিক। তাদের মতাদর্শ ফ্যাসিস্ট। ভারতের বিগত সরকারগুলো তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে একপেশে করে রেখেছিল। তারাই মহাত্মা গান্ধীকে হিন্দু-মুসলিম একতা প্রচারের জন্য হত্যা করেছে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর থেকেই আরএসএস জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে।

ইমরান বলেন, কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন কেড়ে নিয়ে মোদি ঐতিহাসিক ভুল করেছেন। আর এর মাধ্যমে কাশ্মীরের স্বাধীনতা অর্জনের নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছেন। আমরা তথ্য পেয়েছি যে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘ফলস-ফ্ল্যাগ অপারেশন’ চালানোর পরিকল্পনা করছে। যেমনটা বালাকোটে চালিয়েছিল। যাতে করে কাশ্মীর থেকে বিশ্ববাসীর নজর সরে যায়।

তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে আমরা কূটনৈতিক ময়দানে জিতেছি। আমরা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক মহলে উপস্থাপন করেছি। বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তাদের প্রভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবার কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসেছে।

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান সরকারের ভবিষ্যত কৌশল ব্যাখ্যা করে ইমরান বলেন, প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি পুরো দেশবাসীর উচিত কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়ানো। আমি আগেই এটা বলেছি যে, আমি কাশ্মীরিদের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করবো। আমি বিশ্ববাসীকে এই সমস্যা সম্পর্কে জানাবো। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আমি জাতিসংঘেও এটা তুলে ধরবো।