শওগাত আলী সাগর

ক্রিসেন্ট টাউন হেলথ সেন্টারটা তখন নাইন ক্রিসেন্টের নীচ তলায়। সেখানেই বসতেন ডা. কাইয়ুম। সুব্রত নন্দী যখন বললেন- এখানে কাইয়ূম ভাই আছেন, ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান-দেখবেন কোনো চিন্তাই করতে হবে না। তখন নামটা কত বার যে জপেছি। ডা. কাইয়ুম… বাংলাদেশি ডাক্তার, কানাডায় বাংলাদেশি ডাক্তার!

সেটা ২০০৩ এর শেষ দিককার কথা। বাংলাদেশি যে কোনো কিছুতেই অপার মুগ্ধতা। ক্রিসেন্ট টাউন থেকে ডেন্টনিয়া পার্কের পাশ দিয়ে ডেনফোর্থে যাবার পথে এক পাশে জমে থাকা ময়লাগুলো যে কি আপন মনে হতো!

সেই সময় প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনেই চোখে মুখে উজার করা আন্তরিকতা নিয়ে যখন ডা. কাইয়ূম শুদ্ধ বাংলায় বললেন, কেমন আছেন? কি যে ভালো লাগায় মনটা ভরে গেলো। মনে হলো, তিনি যেনো কতো দিন থেকেই আমাদের চেনেন। একবারের জন্যও মনে হলো না, এই ভদ্রলোকের সাথে জীবনে এই প্রথম দেখা।

সেই ডা. জহিরুল কাইয়ূম যতদিন ক্রিসেন্ট টাউনে ছিলেন, ততদিন তিনিই ছিলেন আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান। তখন পর্যন্ত সম্ভবত তিনিই ছিলেন টরন্টোয় একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চিকিৎসক, ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান। কতো দূর-দূরান্ত থেকে যে বাংলাদেশিরা ক্রিসেন্ট টাউনে আসতো, কেবল কাইয়ূমের রোগী হবার জন্য।
ডা. কাইয়ূম এক সময় ক্রিসেন্ট টাউন থেকে চলে গেলেন। অসংখ্য মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে য্ওায়া ডা. কাইয়ূম এক সময় নিজেই রোগী হয়ে চিকিৎসা সেবা থেকে দুরে সরে গেলেন। কোথায়, কি ভাবে আছেন- সে তথ্য আর জানা ছিলো না। বছর কয়েক আগে- অ্যামেরিকা থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করলেন, তার মায়ের কিছু কাগজপত্র নোটারি করায় সহায়তা চেয়ে।।অরিজিনাল কাগজপত্র না থাকায় তার যে ভাইটা উইন্ডসরে থাকেন- তিনি নোটারি করতে পারছেন না, আমি যদি পরিচিত কোনো আইনজীবীর রেফারেন্স দিতে পারি। কথায় কথায় জানা হয়ে যায়- তার এক ভাই তখন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান। আরেক ভাই কানাডায়ই আছেন- ভীষন অসুস্থ, পেশায় ডাক্তার। ‘কা..ই..য়ূ..ম ভাই’— নামটা শুনেই যেনো চিৎকার করে ওঠি।

সপ্তাহখানেক আগে ফার্মাসিস্ট কানন বড়ুয়ার কাছে শুনেছিলাম- ডা. কাইয়ূম আবার ক্রিসেন্ট টাউনে জয়েন করেছেন। শুনেই ঠিক করে ফেলি- কাইয়ূম ভাইর কাছে যাবো, তিনি হবেন আমার ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান। যাই যাই করে আর যাওয়া হয়নি। আজ কাননদার পোষ্ট থেকে জানতে পারলাম- কাইয়ূম ভাই আর নেই। নর্থইয়র্ক জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কাননদার পোষ্ট করা কাইয়ুম ভাইর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে থাকে।
ডা. কাইয়ূম. কানাডায় অসংখ্য বাংলাদেশির স্বজন, আমার, আমাদের প্রিয়জন, আত্মার মানুষ, আপনি ভাবতেও পারবেন না- আপনার জন্য আজ কতো মানুষ বেদনায় কাতর হয়ে আছে।একজন ডাক্তারের মৃত্যুতে টরন্টোর বাঙালিরা কেমন কাঁদছে?
অন্য জগতে আপনি ভালো থাকবেন কাইয়ূম ভাই।