অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে হঠাত্ ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায় হুইপের স্ত্রীর দু’টি হিসাবে এখনো ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা রয়েছে। জুয়া-ক্যাসিনো কাণ্ডে বিতর্কিত হওয়ার পর হুইপ ও তার স্ত্রী-পুত্রের ব্যাংক হিসাব ও আর্থিক লেনদেন দুদকের নজরদারিতে রয়েছে। দুদকের সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ও একই বছরের ২রা জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় দুটি হিসাব খোলেন সামশুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী। সেখানে বিভিন্ন সময়ে লাখ লাখ টাকা জমা করা হতো।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর নিজের একটি ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেন তিনি।

সূত্রমতে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. তারেকের সহযোগিতায় গত ৩০শে সেপ্টেম্বর নিজের ভাই মো. শাহীন উল্লাহ মুকুলের ব্যাংক হিসেবে ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন হুইপের স্ত্রী।
ব্যাংক হিসাবের লেনদেনপত্রে দেখা যায়, হুইপের স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরীর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের একটি হিসাবে সর্বশেষ ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬৫ টাকা রয়েছে। অন্য হিসাবে সর্বশেষ জমা আছে ৬১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮০ টাকা। দুটি হিসাবে সবমিলিয়ে এখন ৮১ লাখ ২০ হাজার ৪৫ টাকা জমা আছে।

এদিকে সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৮ সালের ২৮শে নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তথ্য দিয়েছেন, তার স্ত্রীর নামে নগদ ১৯ লাখ ২ হাজার ২৪৪ টাকা রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে আরো ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৮ টাকা। জীবন বীমা ব্যবসার মূলধন ও পিস্তল বাবদ স্ত্রীর নামে আরো ২৩ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ টাকা রয়েছে।

সবমিলিয়ে ২০১৮ সালের ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৬৪ লাখ ১০ হাজার ৪১২ টাকার অস্থাবর সমপদ রয়েছে বলে হুইপ সামশুল হক নির্বাচন কমিশনকে তথ্য দিয়েছিলেন। এর তিনমাস পর চলতি বছরের ২৩শে ফেব্রুয়ারি হুইপের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে সর্বশেষ টাকা জমা হয়।

সে হিসেবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় কামরুন নাহারের শুধু দুটি ব্যাংক হিসাবেই এক কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ৪৫ টাকা জমা পড়ে। হঠাৎ করে এত টাকার মালিক কীভাবে হলেন হুইপের স্ত্রী সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বড় লেনদেনগুলোকে সন্দেহজনক চিহ্নিত করে মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। এরপর এসব বিষয় খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ।

এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে টাকার উত্স খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক, এনবিআর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকেও অনুরোধ করে বিএফআইইউ।

এদিকে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানার জন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্লাহকে ফোন করা হয়। কিন্তু হুইপের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা সরানো সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্লাহ আর ফোন ধরেননি।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ক্যাসিনো ও জুয়ার বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পর রেশ না কাটতেই হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই অডিওতে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সমপাদক দিদারুল আলম চৌধুরীকে চড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়ার পাশাপাশি রাস্তায় কাপড় খুলে ফেলার হুমকি দেন।

এর আগে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডে জুয়ার বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের পর জুয়ার পক্ষে মত দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। পরে তার বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে গণমাধ্যমে। এ নিয়ে চরম বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি।

এসবের মধ্যে এখন সামনে এসেছে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের বিষয়টি। এ বিষয়ে জানতে হুইপের স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তা সম্ভব হয়নি।