অটোয়ার রাজনীতি এবং দুই নারীর গল্প

শওগাত আলী সাগর
অটোয়ার স্পার্কস স্ট্রীটের একটা বার। ইষ্ট কোষ্টের মিউজ্যিক্যাল ব্যান্ড গ্রুপ ‘লোয়ার টাউন রিফ্রাফ’-এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ছিমছাম আয়োজন। আমন্ত্রিতদের অতিথিদের মধ্যে আছেন মূলত সাংবাদিকরা। তার বাইরে সরকারের এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই আছেন এই অনুষ্ঠানে। হঠাৎ সব চোখ আটকে যায় একটা টেবিলে। টেবিলে বসে আছেন দুজন নারী। অটোয়ার রাজনীতির অন্দরমহলের খোঁজখবর যারা রাখেন তারা খানিকটা বিস্মিত হলেন। ‘প্রায় এক যুগ পর’- কেউ কেউ যেনো ফিস ফিস করে বলেও ফেললেন।

ক্যাটি টেলফোর্ড আর অ্যান ম্যাকগার্থকে এভাবে একসাথে দেখা গেছে প্রায় এগারো বছর আগে- ২০০৮ সালে। এগারো বছর তারা দুজনেই অটোয়ার এই বারটায় এক টেবিলে, এক সাথে। তারা কি আসলেই গান শুনলেন সেদিন। না কি নিজেদের মধ্যে আলাপে মশগুল থাকলেন। জানা গেলো, অনুষ্ঠানের পর সেদিনই এই দুই নারী আবারো একান্তে কিছু সময় কাটিয়েছেন।

ক্যাটি টেলফোর্ড- প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর চিফ অব স্টাফ। অ্যান ম্যাকগার্থ এনডিপি নেতা জ্যাক লেটনের চিফ অব স্টাফ ছিলেন, পার্টির ন্যাশনাল ডিরেক্টর, বর্তমানে এনডিপি নেতা জাগমিত সিং এর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে স্টিফেন হারপারের কনজারভেটিভ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে ক্ষমতাচ্যুত করার যে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিলো- কনজারভেটিভ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিশেষ করে লিবারেল, এনডিপি এবং ব্লক কুইবেকোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার লিয়াজোর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই দুই মহিলা। সে যাত্রা অবশ্য স্টিফেন হারপার দীর্ঘ সময়ের জন্য সংসদ স্থগিত করে দিয়ে পার পেয়ে গিয়েছিলেন। গত নির্বাচনে ক্যাটি আর অ্যান ছিলেন লিবারেল এবং এনডিপির প্রধান নির্বাচনী প্রচারনা দলের প্রধান।

মাঝখানে অ্যান ফিরে গিয়েছিলেন আলবার্টায়, আলবার্টার প্রিমিয়ারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন তিনি। আর ক্যাটি তৈরি হচ্ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেয়ার জন্য। কিন্তু এবারের ফেডারেল নির্বাচন সেই পথটা আটকে দেয়। লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট আসন না পাওয়ায় হিসাব উল্টে যায়। জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার ক্যাটিকে ছাড়া যেনো চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করে। ঠিক হয়- অ্যানি প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ হিসেবেই থেকে যাবেন।

সেই ক্যাটি আর অ্যান এখন আবার অটোয়ায়, একসাথে গান শুনছেন, পান করছেন- বাইরে ঘুরাঘুরিও করছেন। জাস্টিন ট্রুডোর সংখ্যালঘু সরকারের সাথে এনডিপি একটা টেকসই সম্পর্ক তৈরি করাই কি তাদের লক্ষ্য? কে জানে! অটোয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তো সেরকমটাই ভাবছেন। জাস্টিন ট্রুডো কিংবা জাগমিত এর চেয়েও বেশি সময় ধরে লিবারেলের সাথে থাকা দুই নারীর উপর অটোয়ার অনেক কিছুই নির্ভর করছে, অন্তত লিবারেল- এনডিপির প্রেম কতোটা গড়াবে- সেটা তো বটেই।
ছবি: দ্যা কানাডীয়ান প্রেস এর।