শাহনুর চৌধুরী : করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের লাগামহীন বিস্তারে অন্টারিওতে এলোমেলা হয়ে গেছে প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যত। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় এই মুহূর্তে প্রদেশের প্রায় ২ মিলিয়ন শিশু ক্লাসের বাইরে, হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী, প্রতিদিন সংক্রমণের নতুন রেকর্ড, প্রদেশব্যাপি বার, রেস্টুরেন্টের উপর বিধি-নিষেধ, সিনেমা হল, জিমনেশিয়াম বন্ধ এসব কিছুই হিসাবের বাইরে। নির্বাচনী বছরের শুরুটা এ রকম নেতিবাচকভাবে শুরু হবে তা প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড এবং তার প্রগ্রেসিভ
কনজারভেটিভরা হয়তো চিন্তাও করতে পারেন নি। তারা এমনটা চাননি।
গত সোমবার এক বার্তায় ডগ ফোর্ড বলেন, ‘এটি শুধু মাত্র একটি ভাইরাস। তবে এটি জনগণের মধ্যে ‘দাবানলের’ মতো ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ সংক্রমক রূপ নিয়েছে। আমরা সুনামির মতো একটি দুর্যোগ প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।’ তিনি অন্টারিওর করোনা পরিস্থিতি এবং হাসপাতালগুলোর কর্মকর্তার প্রভাব নিয়ে কথা বললেও বার্তায় তার রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা ছিল। তবে প্রায় দুই বছরের করোনা মহামারী এবং বর্তমান ওমিক্রন সংক্রমণ অন্টারিওর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ কিংবা ভোটারদের চিন্তা চেতনাকে স্বাভাবিক পথে রাখবে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই মহামারীর প্রভাব কী হবে তা মোটামুটি পরিষ্কার হলেও রাজনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে ভবিষ্যতবানী করা খুবই কঠিন। মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ফোর্ড সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে এখন পর্যন্ত টুইটারে প্রচুর সমালোচনা সত্বেও সরকার সমর্থকরা এটিকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। তাদের যুক্তি-টুইটার আর ফেসবুক এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গড় ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এরা ভোটারদের একটি অংশ মাত্র। গত বসন্তের পর থেকে প্রকাশিত প্রতিটি জরিপে দেখা গেছে অন্টারিওতে ক্ষমতাসিন প্রগ্রেসিভ করজারভেটিভরা এগিয়ে রয়েছে। অনেক জরিপে ফোর্ডের অনুকুলে রায় ছিল ৪০ শতাংশেরও বেশি, যা অন্টারিওর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তারের ফলে নতুন বিধি-নিষেধে ভোটারেরা তাদের মতামত প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকে মনে করছে সরকার যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অভিযোগ ডিসেম্বরের মাঝমাঝি থেকেই ওমিক্রনের বিষয়টি ধরা পড়লেও সে সময় সরকার অনেকটা নিশ্চুপ থেকেছে। ক্রিস্টমাসের অনুষ্ঠানগুলোতে লাগাম ছাড়া ভিড়ের ফলে সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। এখন সরকার দীর্ঘমেয়াদে স্কুল-কলেজ বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। অভিভাবকদের অনেকে মনে করেন স্কুল বন্ধ থাকা শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বিশাল ক্ষতিকর।
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে ফোর্ডের একজন সিনিয়র রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুলগুলো খোলা রাখলে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। তাই আমাদের কাছে অন্য কোন বিকল্প ছিল না। আমরা জানি অনেকেই বিষয়টি সমর্থন করছেন না। কিন্তু ২৫% শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে স্কুল চালু রাখা কতটা সম্ভব তা আপনাদের বুঝতে হবে।
মোট কথা করোনা মহামারী অন্টারিওর শাসকদলের ভবিষ্যতকে প্রশ্নের মুখেই ফেলে দিয়েছে। সূত্র : সিবিসি