হোসাইন সুমন: অন্টারিও প্রাদেশিক সংসদে এ বছরের শেষ অধিবেশন ছিলো গত ১২ই ডিসেম্বর। এদিনের অন্যতম আলোচ্য বিল ছিল অন্টারিও পোয়েট লরিয়েট বিল। প্রয়াত প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী গর্ড ডাউনি, যিনি একাধারে একজন জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার এবং সোশ্যাল এক্টিভিস্ট হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁর সম্মানে এই প্রাদেশিক পোয়েট লরিয়েট পদবীটি সৃষ্টি করা হয়। আর এ উপলক্ষে পার্লামেন্ট ভবন যেন পরিণত হয়েছিল কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলায়।

একজন পোয়েট লরিয়েট সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্প ও সাহিত্যের প্রসারে কাজ করেন। উল্লেখ্য যে কানাডার অনেক শহরে এবং ফেডারেল পর্যায়েও পার্লামেন্টারী পোয়েট লরিয়েট পদটি আছে বেশ অনেকদিন ধরেই। এবার অন্টারিও প্রদেশেও একই ধরণের একটি পদ সৃষ্টি করা হলো। গত ১২ই ডিসেম্বর অন্টারিও পার্লামেন্টে প্রাদেশিক পোয়েট লরিয়েট বিলটির উপর বিতর্কের দিন ধার্য ছিল।

বিলটি উত্থাপন করেছিলেন উইন্ডসর থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় এমপিপি পারসি হ্যাডফিল্ড। বিলটির উপর আলোচনায় অংশ নেন সরকার দল আর বিরোধীদলের বেশ কয়েকজন সদস্য। আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিপি-দের অনেকেই গর্ড ডাউনি এবং তাঁর বিখ্যাত ব্যান্ড দল “ট্রাজিক্যালি হিপ” এর বিভিন্ন কন্সার্টের স্মৃতিচারণ করেন। কেউ কেউ তাঁর লিখা কবিতার অংশবিশেষ আবৃতি করেও শোনান।

স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট থেকে নির্বাচিত এমপিপি এবং বিরোধী দলীয় ডেপুটি হুইপ ডলি বেগম অধিবেশনের শুরুতেই আমন্ত্রিত বাংলাদেশী-কানাডিয়ান অতিথিদের পুরো সংসদের সাথে পরিচিত করিয়ে দেন। তখন পুরো সংসদ দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগত জানান। মূল বক্তব্যে ডলি আমন্ত্রিত বাংলাদেশী-কানাডিয়ান কবিদের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে আমাদের এই প্রদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কবি সাহিত্যিকরা এসে আবাস গড়েছেন এবং অন্টারিওর শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে অবদান রেখে যাচ্ছেন।

এঁদের মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান এবং অসংখ পুরস্কার এবং সম্মাননায় ভূষিত। এমন সব কবি ও লেখকদের সমাগম আমাদের এই প্রদেশের জন্য গৌরবের।
কবি ও লেখকরা আমাদের বহুজাতিক সমাজকে তাঁদের শিকড়ের সাথে যুক্ত থাকতে সাহায্য করেন বলেও ডলি উল্লেখ করেন। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হওয়ার পর অন্টারিওর লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্বয়ং উপস্থিত থেকে বিলটিতে সম্মতি দেন।

অধিবেশন শেষে বিলটির উথ্যাপক পারসি হাডফিল্ড এমপিপি এবং ডলি বেগম এমপিপি আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে হালকা নাশতা এবং চা-চক্রের আয়োজন করেন। চা-চক্রে রাজনীতিবিদ, সাংসদ, গর্ড ডাউনির পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কানাডার প্রাক্তন পার্লামেন্টোরি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক, টরন্টোর বর্তমান পোয়েট লরিয়েট এল মরিৎজ, লীগ অব কানাডিয়ান পোয়েট্সের প্রাক্তন সভাপতি আয়েশা চ্যাটার্জি, বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী এবং কবি ইকবাল হাসান।
চা চক্রে মূলধারার কবি সাহিত্যিকদের সাথে নানান বিষয়ে প্রাঞ্জল আলোচনায় অংশ নেন লেখক গবেষক সুব্রত কুমার দাস, কবি দেলোয়ার এলাহী, লেখিকা সালমা বাণী, কবি মৌ মধুবন্তী, তরুণ গীতিকবি হোসাইন সুমন সহ আরো অনেকে।

অধিবেশন আর অনুষ্ঠানের বিরতিতে আমন্ত্রিত অতিথিদের পার্লামেন্ট ভবন এবং এতে রক্ষিত বিভিন্ন ঐতহাসিক নিদর্শন ঘুরে দেখার ব্যবস্থাও করা হয়। অন্টারিও পার্লামেন্টে এমন একটি দিনে বাংলাদেশী কবিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানীত করে ডলি নিঃসন্দেহে মূলধারায় আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে পরিচিত করতে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিলেন, এমনটাই বললেন উপস্থিত অতিথিরা।