অনলাইন ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের তদন্তে সহযোগিতা করবে না হোয়াইট হাউজ। ডেমোক্রেটিক নেতাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্রেটদের অভিশংসন প্রক্রিয়াকে ভিত্তিহীন ও সংবিধানে অবৈধ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইউক্রেন কানেকশন নিয়ে তদন্ত করছে ডেমোক্রেট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদের তিনটি কমিটি। তারা হোয়াইট হাউজের কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেয়েছে। তবে জবাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, হোয়াইট হাউজ এতে সহযোগিতা করবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, সিএনএন সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ফ্রন্টরানার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রচারণায়ও তিনি এগিয়ে আছেন। কিন্তু তার ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ জন্য তিনি ইউক্রেনকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ডেমোক্রেটরা তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের জন্য তদন্ত শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ট্রাম্প বিদেশী শক্তির সহায়তা চেয়েছেন। এ জন্য দেশের সামরিক সহায়তাকে অসাংবিধানিকভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে মার্কিন মুলুকে তুলকালাম চলছে। এই তদন্তে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের। কিন্তু তার সেই উপস্থিতিকে আটকে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডেমোক্রেটদের চিঠি দিয়ে হোয়াইট হাউজ জানিয়ে দেয় তারা তদন্তে সহযোগিতা করবে না।

ডেমোক্রেটদের নেতৃত্বে থাকা ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও ডেমোক্রেটদের তিনটি কমিটির চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে মঙ্গলবার আট পৃষ্ঠার চিঠি লিখেছেন হোয়াইট হাউসের কাউন্সেল প্যাট সিপোলোনে। এতে তিনি ডেমোক্রেট ওই নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন, তারা এমন একটি তদন্ত শুরু করেছেন যা সুষ্ঠুতার মৌলিকত্ব লঙ্ঘন করে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বনের সাংবিধানিক ম্যান্ডেটেরও লঙ্ঘন। বিশেষ করে তদন্ত করার জন্য কোনো ভোট করা হয় নি। এতে আরো অভিযোগ করা হয়, ডেমোক্রেট নেতারা ২০১৬ সালের নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এমন পক্ষপাতী ও অসাংবিধানিক তদন্তে অংশ নিতে পারে না।

জবাবে ন্যান্সি পেলোসি ওই চিঠির বক্তব্যকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ট্রাম্প আইনহীনতাকে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা করছেন। তার ভাষায়, মিস্টার প্রেসিডেন্ট আপনি আইনের ঊর্ধ্বে নন। আপনাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

বিবিসি লিখেছে, প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন বিষয়ক তদন্ত শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এক সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে আট পৃষ্ঠার চিঠি লিখেছে হোয়াইট হাউজ, তবু তাতে বক্তব্য খুবই সামান্য। তাহলো অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কোনো ডকুমেন্ট দেয়া হবে না। কোনো সহযোগিতা করা হবে না। উল্টো পুরো তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসন। তারা একে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করছে। জবাবে ডেমোক্রেটরা বলছে, সংবিধানই প্রতিনিধি পরিষদকে অভিশংসনের পবিত্র ক্ষমতা দিয়েছে। এতে হোয়াইট হাউজ রাজি থাকুক বা না থাকুক তারা তদন্ত অব্যাহত রাখবেন। এক্ষেত্রে ডেমোক্রেটদের সামনে বেশ কয়েকটি সুযোগ আছে। তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয় সামনে আনতে পারে। যা অভিশংসনের ক্ষেত্র তৈরি করবে। তারা হোয়াইট হাউজকে সহযোগিতায় বাধ্য করতে পারে। অথবা হোয়াইট হাউজ যাতে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয় এ জন্য তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।