সুহেল ইবনে ইসহাক: “দি পিপল ইউনাইটেড, উইল নেভার বি ডিফিটেড” উক্তিটির প্রমাণ আরেকবার দেখালো স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের ভোটার ও বাঙালি কমিউনিটি। গত ২ জুন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনে স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন বাঙালি কন্যা ডলি বেগম। তিনি বাংলাদের মৌলভীবাজার জেলার সন্তান। মৌলভীবাজারের তাঁর জন্ম। পরিবারের সাথে ২৩ বছর পূর্বে কানাডায় অভিবাসিত হন ডলি বেগম। আজ তিনি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের পার্লামেন্টের দ্বিতীবারের মতো নির্বাচিত এমপিপি। ডলি বেগম ২০১৮ সালের জুন মাসে অন্টারিও আইনসভার নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এবং কানাডার যেকোনো স্তরে নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম কানাডিয়ান।

দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্টের সকল বাঙালিও নন বাঙালিরা যোগ্য ব্যক্তিকে এমপিপি নির্বাচিত করে আরেকটিবার ইতিহাস সৃষ্টি করলো।
নির্বাচনে প্রগ্রেসিভ কংসেরভেটিভ পার্টি সর্বমোট আসন পেয়েছে ৮৩টি এবং মোট ভোট পেয়েছে ১৯,১১,৫৪২ যা মোট কাস্টিং ভোটের ৪০.৮৩%। এনডিপি সর্বমোট আসন পেয়েছে ৩১টি এবং মোট ভোট পেয়েছে ১১,১০,৯১৭টি যা মোট কাস্টিং ভোটের ২৩.৭৩%। অন্টারিও লিবারেল পার্টি সর্বমোট আসন পেয়েছে ৮টি এবং মোট ভোট পেয়েছে ১১,১৬,২১৮টি যা মোট কাস্টিং ভোটের ২৩.৮৪%। এবং গ্রীন পার্টি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি প্রত্যেকে ১টি করে আসন লাভ করেছে।

ইলেক্শন অন্টারিও এর সূত্র অনুযায়ী, অন্টারিও প্রভিন্সে মোট রেজিস্ট্রার্ড ভোটার সংখ্যা ১০,৬০,৪৩৩। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪৩.৫ % ।

ডলি বেগম ১৫,৯৫৪ টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যা কাস্টিং ভোটের ৪৭.১%। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী প্রেগ্রেসিভ কনসারভেটিভ পার্টির ব্রেট স্নিদের পেয়েছে মোট ৯,৪৩৬ ভোট(২৭.৯%)। এবং লিবারেল পার্টির লিসা প্যাটেল পেয়েছেন ৬,৩৫৬ ভোট (১৮.৮%)।
নির্বাচনের দিন ফলাফল প্রকাশের পূর্বেই ১৫৭৭ কিংস্টনের লিজিওন হলে ডলির সকল সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও ভলোন্টিয়ারদের এক বিশাল জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। ডলির জয়লাভের খবর প্রকাশের মুহূর্তে “ডলি–ডলি” “উই উইন–উই উইন” “দি পিপল ইউনাইটেড, উইল নেভার বি ডিফিটেড” ইত্যাদি স্লোগানে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় উপস্থিত সকলে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডলি বেগম বলেন, ‘এই জয়টি আপনাদের সকলের, স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্টের সকল জনসাধারণ যারা কুইন্স পার্কে আমাদের কমিউনিটির কণ্ঠস্বর শোনা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য এই অবিশ্বাস্য আন্দোলন গড়ে তুলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে আবারও এই কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করার বিশেষাধিকার দিয়েছেন, এবং আমি স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা হলো অ্যাক্সেসযোগ্য পাবলিক শিক্ষা, উন্নত ট্রানজিট, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং সিনিয়রদের যতœ, মান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শিশু যত্ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আরও অনেক কিছু। অন্টারিও এবং স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের জন্য একটি শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারকে দায়বদ্ধতা অব্যাহত রাখব।’

অন্যান্যদের মধ্যে আরো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ডলির স্বামী রিজওয়ান রহমান। দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের মুহুর্মুহু করতালি ও আনন্দমুখর স্লোগানে পুরো হলটি এক আনন্দযজ্ঞে পরিণত হয়।

নির্বাচনে জয়লাভের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভেরিফাইড আই. ডি হয়ে দেয়া পোস্টে ডলি বেগম স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের সকল নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছে বলেন গত রাতের ফলাফলগুলি আমাদের আশার শক্তি, কমিউনিটি এবং একটি জনশক্তি চালিতআন্দোলন দেখিয়েছে স্কারবোরো সাউথওয়েস্টেবাসী, এটি আমাদের স্কারবোরো স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের শক্তি!

ডলি বেগমের এনডিপি সরকার গঠন করতে না পারলেও তাঁর দল হতে যাচ্ছে পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল। চলতি পার্লামেন্টেও এনডিপি ছিল প্রধান বিরোধী দল।

বাঙালি কমিউনিটির অনেক ভোটার, সিনিয়র সিটিজেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, টরোন্টোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, “বাঙালি হিসেবে আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে ডলি বেগমকে আবারো নির্বাচিত করেছি।” নেতৃবৃন্দের অনেকে বলেন, “ডলি আমাদের গর্ব, এই বিজয় ডলির প্রাপ্য।” নির্বাচনী রাইডিংয়ের বাহিরে অন্যান্য রাইডিংয়ের বাঙালিরাও প্রাণপনে ডলির জন্য কাজ করেছেন, এবং সবাই ডলির এ বিজয়ে আনন্দে উদ্ভাসিত।