Home আন্তর্জাতিক আমেরিকার পরমাণু অস্ত্রের ৩৬০০ ফাইল চুরি, অভিযুক্ত চীনা ইঞ্জিনিয়ার

আমেরিকার পরমাণু অস্ত্রের ৩৬০০ ফাইল চুরি, অভিযুক্ত চীনা ইঞ্জিনিয়ার

অনলাইন ডেস্ক : চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস দীর্ঘ সময়ের। যেখানে দুই বিশ্বশক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি, সামরিক প্রযুক্তি চুরি এবং ইলেকট্রনিক নজরদারির অভিযোগ এনেছে বহুবার। অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত।

সম্প্রতি আমেরিকা দাবি করেছে, চীনে জন্মগ্রহণকারী একজন ইঞ্জিনিয়ার আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি চুরি করার কথা স্বীকার করেছেন। এই প্রযুক্তি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্তকরণ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ট্র্যাকিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মার্কিন বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে সান্তা ক্লারা কাউন্টির এক ব্যক্তি এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সংস্থার প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার গোপন তথ্য চুরির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এই প্রযুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শানাক্ত করতে, ব্যালিস্টিক এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করেছিল। এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমেরিকান যুদ্ধবিমানগুলি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করত এবং সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় করত।

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ে, চীন এবং আমেরিকার দ্বৈত নাগরিকত্বধারী চেঙ্গুয়াং গং গত বছর লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার ৩৬০০টি ফাইল তার ব্যক্তিগত স্টোরেজ ডিভাইসে স্থানান্তর করেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংস্থাটি গং-কে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ডিজাইন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করে। এখানে গং ইনফ্রারেড সেন্সরের নকশা, উন্নয়ন এবং যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ৩০ মার্চ, ২০২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল, ২০২৩-এ বরখাস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত, গং তার কর্মক্ষেত্রের ল্যাপটপ থেকে হাজার হাজার ফাইল তিনটি ব্যক্তিগত স্টোরেজ ডিভাইসে স্থানান্তর করেছিলেন।

গং যে ফাইলগুলি হস্তান্তর করেছেন তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্লুপ্রিন্ট ছিল। এই ব্লুপ্রিন্টগুলি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্তকরণ এবং ব্যালিস্টিক এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ট্র্যাক করার জন্য মহাকাশ-ভিত্তিক ইনফ্রারেড সেন্সরের ছিল। মার্কিন গোয়ান্দা সংস্থাগুলি থাউজেন্ড ওকসে গংয়ের অস্থায়ী বাসভবন থেকে এই ফাইলগুলির বেশি কিছু বাজেয়াপ্ত করেছে।

গং পরবর্তী প্রজন্মের সেন্সরগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ট্রেড সিক্রেট সম্বলিত ফাইল স্থানান্তর করেছেন। এই সেন্সরগুলি কম দৃশ্যমান লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং এই সেন্সরগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য মহাকাশে থাকতে পারে।

এর মধ্যে সেন্সরগুলিকে ঠান্ডা এবং সংরক্ষণ করার জন্য যান্ত্রিক সমাবেশের নীলনকশাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তথ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য গোপনীয়তার মধ্যে ছিল, যার মূল্য কয়েকশো মিলিয়ন ডলার। এই ফাইলগুলির অনেকগুলিতে ‘মালিকানা’, ‘শুধুমাত্র সরকারী ব্যবহারের জন্য’, এবং ‘রপ্তানি নিয়ন্ত্রিত’-এর মতো চিহ্ন ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার মসনদে বসার পরেই পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি কর চেপেছে চীনের উপর। ট্রাম্প প্রশাসন ফেব্রুয়ারিতে চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা মার্চে দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ যোগ করে মোট ১০৪ শতাংশ শুল্কে পৌঁছেছে যা কার্যত একপ্রকার আমদানি নিষেধাজ্ঞার সামিল।

চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করে। এর মধ্যে নতুন এই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ সামনে আসায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

Exit mobile version