অনলাইন ডেস্ক : তিন বছরের রক্তক্ষয়ী ও সশস্ত্র যুদ্ধের পর অবশেষে মুখোমুখি আলোচনার টেবিলে রাশিয়া-ইউক্রেন। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক দোলমাবাহচে প্রাসাদে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলেও উভয় দেশ এক হাজার করে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে একমত হয়েছে।
মুখোমুখি এই আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের প্রধান ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহকারী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ।
বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, এই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি অর্জন। তা সম্ভব না হলেও এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি হয়েছে দুই দেশ।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই বন্দি বিনিময়কে ‘আস্থা অর্জনের একটি ধাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
এদিন ইউক্রেন ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করে দেয় রাশিয়া। উলটো দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায় রাশিয়া। যেটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরাসরি বৈঠক আয়োজন।
রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানান, তারা এই প্রস্তাব ‘গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে’ এবং ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য উভয় পক্ষ একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির রূপরেখা উপস্থাপন করবে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে পুতিন প্রমাণ করেছেন রাশিয়া শান্তি আলোচনায় আন্তরিক নয়। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি না হলে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান তিনি। ইউরোপের আলবানিয়া থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর তিনি জানান, ইউক্রেন প্রকৃত শান্তির জন্য দ্রুততম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া কখনও আলোচনার বিরোধিতা করেনি এবং ২০২২ সালের ইস্তাম্বুল চুক্তির ভিত্তিতে যেকোনো সময় আলোচনা করতে প্রস্তুত তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক না হলে পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি হবে না এবং তিনি শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান।
এর আগে শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে ইস্তাম্বুলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং তুরস্ক। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা। বৈঠকের মধ্যস্থতা করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।