অনলাইন ডেস্ক : কানাডার বৃহত্তম প্রদেশ ওন্টারিওতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। হাসপাতালগুলোতে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রোগির চাপ সামাল দিতে না পেরে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করার পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, সংক্রমণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী জুন মাস নাগাদ এই হার ৬০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গণস্বাস্থ্য সচেতনতা এবং টিকা কর্মসূচীর ব্যাপক স¤প্রসারণ ছাড়া অবস্থা সামাল দেয়া সত্যিই কঠিন হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।

মহামারি শুরুর পর থেকে গত সপ্তাহে প্রথম বারের মতো কানাডায় করোনা সংক্রমণের হার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে কানাডায় টিকার ১ম ডোজ নেয়ার হার ২২% আর যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৩৭%।

সংক্রমণের ঊর্ধগতি রোধে ওন্টারিও প্রশাসন সেখানে বিভিন্ন কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে, ৬ সপ্তাহের ‘স্টে অ্যাট হোম অর্ডার’ অর্থাৎ আগামী দেড় মাস সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণকারীদের আটক করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী কুইবেক ও ম্যানিটোবা প্রদেশের সীমান্তে অতিরিক্ত চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। বাইরে বের হওয়া যে কাউকে পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অপ্রজনীয় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডো বলেছেন, সরকার টরোন্ট ও ওন্টারিও পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। ফেডারেল সরকার পরিস্থিতি নজরে রাখছে এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মীসহ যেকোন ধরণের সহায়তার জন্য তৈরি আছে।

ওন্টারিওতে আক্রান্তদের দুই তৃতীয়াংশই করোনার ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এই প্রদেশে কানাডার মোট জনসংখ্যার ৩৮% লোকের বসবাস। প্রতিদিনই এখানে শনাক্তের হার আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার সেখানে ৪,৮১২ জন নতুন রোগি শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৯৫৫ জনকে এবং আইসিইউতে নেয়া হয়েছে ৭০১ জনকে। আগের দুইদিনের তুলনায় এই হার বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যে গতিতে টিকা দেয়া হচ্ছে তা তিনগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন তিনলাখ লোককে টিকা দিতে হবে।

ওন্টারিওর মহামারি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কো-চেয়ারম্যান এডেলস্টেইন ব্রাউন বলেছেন, হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এখন কেউ চাইলেই তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকের বিবেচনায় যিনি যোগ্য তাকেই শুধু আইসিইউতে ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের শিশু হাসপাতালেও বয়স্ক রোগি ভর্তি করতে হচ্ছে। ওন্টারিওতে এধরণের পরিস্থিতি অতীতে কখনো দেখা যায়নি। প্রদেশের প্রধান হাসপাতালের মধ্যে তাবু টানিয়ে নতুন রোগিদের যায়গা দেয়া হচ্ছে।

কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসিয়েশন (সিএমএ) এই দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রাদেশিক সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকেও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে। তাদের মতে সীমান্তের বাধা পেরিয়ে এখন সবাইকে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সূত্র : বিবিসি