অনলাইন ডেস্ক : কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দীদের নিয়ে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার। ৬ প্রার্থীর ৫ জনই ওই বিতর্কে অংশ নিলেও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দী কনজারভেটিভ এমপি পিয়েরে পোইলিভার ও কুইবেকের সাবেক প্রিমিয়ার জিন চেরেস্টের মধ্যেই মূল লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল। পোইলিভার কনভয় বিক্ষোভে সমর্থনের জন্য চেরেস্টের কঠোার সমালোচনা করেন। অন্যদিকে সাবেক প্রিমিয়ার অভিযোগ করে বলেন, পোইলিভারের আগ্রাসী রাজনীতি দলের ক্ষতি করছে।
পোইলিভার তার বক্তৃতার বেশিরভাগ সময় জিন চেরেস্টকে আক্রমণ করে বিভিনআন ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ ব্যবহার করেন। নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দীতে তিনি ‘ট্র্যাক- হাইকিং লিবারেল ইন্টারপোলার’ হিসেবে চিহ্নিহ্নত করে বলেন, তিনি (চেরেস্ট) করোনা বিধি-নিষেধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কথিত ‘আইন মেনে চলা’ ও ‘শান্তিপূর্ণ ট্রাকারদের পক্ষে দাঁড়াতে পেরে ‘গর্ব’ করেছিলেন। আসলে চেরেস্ট অন্যান্য উদারপন্থীদের মতো ‘কনভয় বিক্ষোভ’কে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। এই ধরনের একজন ব্যক্তিকে পার্টির নেতৃত্বে আসতে দেয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, আমি উদারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করি না।
জবাবে চেরেস্ট বলেন, আমি কখনই উদারপন্থীদের পক্ষে ছিলাম না। আমি একজন রক্ষণশীলই (কনজারভেটিভ) ছিলাম। অটোয়া, উইন্ডসর, অন্টারিও এবং অন্যান্য স্থানে কনভয় বিক্ষোভকারিদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে আমি শুধু তার প্রতিবাদ করছিলাম। তিনি তার সময়ে কুইবেকের অর্থনৈতিক সাফল্যের বিবরণ দেন। তিনি বলেন, প্রদেশ পরিচালনার সময় তিনি আয়কর কমিয়েছিলেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছিলেন। তিনি পার্টির নেতৃত্বে আসলে ফেডারেল স্তরেও এই দু’টি বিষয়ের পুনরাবৃত্তির প্রতিশ্রæতি দেন। পোইলিভারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তার আগ্রাসী রাজনীতি দলের অনেক ক্ষতি করছে। তিনি দলের নেতৃত্বে থাকলে দল ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে যাবে। পোইলিভারের আগ্রাসী মনোভারের সমালোচনা করে চেরেস্ট বলেন, আমি ১৯৯৫ সালের গণভোটে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, বিভক্ত একটি প্রদেশে প্রিমিয়ার হিসাবে ৩ুট নির্বাচনে জিতেছি। আমাকে ভয় দেখিয়ে কাবু করা যাবে না।
বিতর্কের এক পর্যায়ে পোইলিভার চীনা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি হুয়াওয়ের সাথে চেরেস্টের সম্পর্কের বিষয়টি উপস্থাপন করে বলেন, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা তার ওই কাজকে ‘গুপ্তচরবৃত্তির ’ সাথে তুলনা করেছে। পোইলিভার বলেন, যদি আমরা পার্টিকে একত্রিত ও সুসংহত করতে চাই তাহলে আমাদের সবকিছুই পরিষ্কার হতে হবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি মিস্টার চেরেস্ট হুয়াওয়ের কাছ থেকে কত টাকা কমিশন পেয়েছেন তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। বিতর্কের এই পর্যায়ে চেরেস্ট কিছু বলতে চাইলে পোইলিভার তাকে সুযোগ না দিয়ে বারবার বলতেদ থাকেন ‘কত?, শুধু সংখ্যাটাা বলেন’। এই পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে বাকযুদ্ধ থামাতে বিতর্কের মর্ডারেটর আইনজীবী জামিল গিভানি ও সাংবাদিক কেন্ডিস মেলকমকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
পরে চেরেস্ট তার প্রতিদ্বন্দীর আচরণের সমালোচনা করে বলেন, আপনারা কি এই ধরনের দেশ চান, যেখানে মানুষকে কথা বলতে দেয়া হয় না।
হুয়াওয়ের কাছ থেকে কত টাকা উপার্জন করেছেন সে বিষয়ে চেরেস্ট আগেও কিছু বলেননি। এবারও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে সাবেক এই প্রিমিয়ার বলেন, আগের রক্ষণশীল সরকার দেশে ফাইভ-জি সেলুলার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য হুয়াওয়েকে কানাডায় স্বাগত জানিয়েছে। তিনি শুধু এই কাজে সরকারকে সহায়তা করেছেন। এছাড়া ৩ বছর ধরে চীনের হাতে বন্দি দুই কানাডিয়ান মাইকেল স্প্যাভার ও মাইকেল কোভরিগের মুক্তির জন্যও তিনি দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্ততা করেছেন। চেরেস্ট বলেন, আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করতে চাইলে আপনারা কোভরিগের স্ত্রীর সাথে কথা বলতে পারেন।
বিতর্কে অংশ নেয়া অন্য প্রতিদ্বন্দীদের মধ্যে ছিলেন, কনজারভেটিভ এমপি লেসলিন লুইস, স্বতন্ত্র এমপি রোমান বাবর ও অন্টারিওর হান্টস ভিলের সাবেক মেয়র স্কট আইচিসন। তারাও বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দীদের সমালোচনা ও নিজেদের যোগ্যতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। প্রসঙ্গত, কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের এই দৌড়ে যিনি বিজয়ী হবেন তিনি আগামী ফেডারেল নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতার সুযোগ পাবেন। চেরেস্ট নিজেকে ট্রুডোর বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থী হিসেবে দাবি করে বলেন, তার পক্ষেই সম্ভব কানাডায় ‘বড় কর্তার সরকারের শাসনের অবসান ঘটিয়ে রক্ষণশীল সরকার গঠন করা। আর নির্বাচিত হলে তিনি ভ্যাকসিন ম্যান্ডেটের অবসান, ব্যয় কমানোর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যাংক অব কানাডার লাগাম টেনে ধরার প্রতিশ্রæতি দেন। অন্যদিকে পোইলিভার বলেছেন, তার প্রধান কর্মসূচী হল- কর কমানো, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতায়ন। তিনি বলেন, আমি কানাডাকে পৃথিবীর সেরা স্বাধীন দেশ বানাতে চাই। সূত্র : সিবিসি