অনলাইন ডেস্ক : করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আধিপত্য যখন কানাডার জন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তখনই অন্টারিও’র স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি, মঙ্গলবার অন্টারিও’র শিক্ষামন্ত্রী স্টিফেন লিসে এবং প্রভিন্সের প্রধান চিকিৎসক এক প্রেস কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টি সবাইকে জানানোর সাথে শিক্ষার্থী এবং স্কুল প্রশাসনের জন্য কিছু বিধি নিষেধের উপর আলোকপাত করেন।
উল্লেখ্য, প্রেস কনফারেন্সের আগের দিন অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ডগলাস ফোর্ডের অফিস থেকে জানানো হয়, নতুন বছরে প্রথম দুই সপ্তাহ দূর শিক্ষণে ক্লাস পরিচালিত হওয়ার পর আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে স্কুল খুলে দেওয়া হবে। করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার ঘটনায় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। করোনার এমন এক ক্রমবৃদ্ধির সময়ে এবং যখন কম বয়স্কদের মধ্যে এর আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, সেই সময় স্কুলে যথোপযুক্ত পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা না রেখে স্কুল খুলে দেওয়ার পদক্ষেপ আত্মঘাতী হতে পারে বলে তাঁরা মন্তব্য করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, যদি কোন শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা যায়, তবে তারা যেন স্কুলে না আসে এবং নিজেরা যেন জন সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। শিক্ষামন্ত্রী তাঁর লিখিত বক্তব্যে জানান, স্কুল খুলে দিয়ে শ্রেণী কক্ষে শিক্ষাদান ব্যবস্থার জন্য তাঁর মন্ত্রণালয় সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পিপিই ব্যবস্থা করা ছাড়া ভ্যাকসিন কর্মসূচী বাড়ানো ও ভ্যাকসিন গ্রহণে সহজলভ্য পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন বছরের শুরুতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কার্যকরী ও ফলপ্রসূ শিক্ষার জন্য ক্লাসে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সতেজ রাখার জন্য এটা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, অনলাইন শিক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার সাবলীল নন। যার ফলে শিক্ষা গ্রহণে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্য এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, গত দু’বছরে করোনার প্রকোপ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ করে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সর্ব্বোচ্য সতর্কতা অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে ফিরিয়ে আনা।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়, স্কুল খুলে দেওয়ার পর প্রতি শিক্ষার্থী এবং স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের দুইটি কোভিড র্যাপিড টেস্ট করা হবে। সোমবার থেকে প্রভিন্সের স্কুল এবং চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের সবার জন্য ৩.৯ মিলিয়ন কোভিড টেস্টের সামগ্রী দেওয়া হবে। সেই সাথে ১০ মিলিয়নের বেশী এন৯৫ মাস্ক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নিঃসন্দেহে, করোনার অনেক নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শিশুদের মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দেওয়া। গত দু’বছর শিশুরা তাদের স্বাভাবিক পড়াশুনা এবং খেলাধুলা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছে। করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের ক্রমাগত উপস্থিতির ফলে এখন কারো পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না, সত্যি সত্যি এই ভাইরাস থেকে পৃথিবীর মানুষ কবে মুক্তি পাবে। বর্তমানের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেকেই অন্টারিও সরকারের স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, পৃথিবীর পরিস্থিতি যখন এমন এক দিকে এগুচ্ছে, তখন আগামী প্রজন্মকে এই বিরূপ পরিস্থিতিতেই সামনে এগিয়ে যাবার শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদেরকে তৈরি করতে হবে যে কোন বৈরী পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার মানসিক শক্তি আর মনোবল অর্জনের।