Home কানাডা খবর কানাডার বিরুদ্ধে সাবেক গুয়ান্তানামো বন্দির ক্ষতিপূরণ মামলা

কানাডার বিরুদ্ধে সাবেক গুয়ান্তানামো বন্দির ক্ষতিপূরণ মামলা

অনলাইন ডেস্ক : বন্দি নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত গুয়ান্তানামোর মার্কিন কারাগারের একজন সাবেক বন্দি কানাডার বিরুদ্ধে ৩৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন। মোহাম্মদ সালাহি নামের মৌরিতানিয়ার ওই ব্যাক্তি ২ মাসের জন্য মন্ট্রিলে বসবাসকালে কানাডার ২টি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। এতে তিনি দাবি করেন, কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (সিএসআইএস) এবং রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) দেয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাকে ১৪ বছর মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দি থেকে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। গুয়ান্তানামো শিবিরে তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা ছাড়াও যৌন নির্যাতন করা হয়। এছাড়া তাকে পর্যাপ্ত খাবার ও ঘুমানোর সুযোগও দেওয়া হত না। তিনি অভিযোগ করেন, মার্কিন সেনাবাহিনীকে কানাডার ওই দুই সংস্থার দেয়া ভুল তথ্যের কারণেই তাকে এসব নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মার্কিন সেনা বাহিনীকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি টরন্টোতে কানাডিয়ান ন্যাশনাল সিএন টাওয়ার বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিলেন। অথচ তিনি ইতোপূর্বে ওই টাওয়ারের নামই শুনেননি।

সালাহি তার বন্দি জীবনের কথা লিখে একটি বের বই বের করেছেন, যা ইতোমধ্যে বেস্ট সেলারের তালিকায় স্থান পেয়ছে এবং তার আত্মজীবনী থেকে চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে।
সালাহির আইনজীবীদের একজন জোডি ব্রাউন বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশের আমলে নির্যাতন আর অবৈধ পন্থায় জবানবন্দি আদায়ের যে কৌশল অবলম্বন করা হত এটি তারই একটি অংশ। সে সময় তাদের দুষ্কর্মের সহযোগিতা করেছিল কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা ও পুলিশ বাহিনী। বর্তমানে একটি ডাচ্ থিয়েটার কোম্পানিতে চিত্রনাট্য লেখার ককাজে জড়িত সালাহি ২০০০ সালে কানাডা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। সে সময় কানাডার আইনশৃংখলা বাহিনী তাকে আহমেদ রাসেমের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চায় যিনি লস এঞ্জেলেস বিমান বন্দরে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সালাহি তার সাথে কোন ধরনের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও পুলিশ তা বিশ্বাস করেনি। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে একমাত্র প্রমাণ যা ছিল তা হল এই দুজনকে মন্টিলের একটি মসজিদে একই জামায়াতে নামাজ পড়তে দেখা গেছে।

সালাহির আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, মন্ট্রিলে স্বল্প সময় অবস্থানের পর এক সময়ের কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া সালাহি পম্চিম আফ্রিকায় তার আদি নিবাসে ফিরে যান। তার পরই শুরু হয় তার দুর্ভোগের জীবন। প্রথমে সেনেগালে তাকে মার্কিন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং কানাডার দেয়া তথ্য সম্পর্কে যানতে চান। সে সময় তাকে শর্ত সাপেক্ষে চেড়ে দেয়া হলেও ১/১১ এর ঘটনার পর মৌরিতানিয়ায় তাকে আবার আটক করা হয়। এবার মার্কিন সরকারের অনুরোধে তার নিজ দেশের পুলিশই তাকে আটক করে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এর কর্মকর্তারা তাকে জর্ডানে নিয়ে আটমাস আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেময় তাকে নির্যাতনও করা হয়। পরে তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগার এবং সেখান থেকে কুখ্যাত গুয়ান্তানামো কারাগারে পাঠানো হয়। অবশেষে ১৪ বছরেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় ২০১৬ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে মমুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের আগে তিনি মৌরিতানিয়ার বাইরে কোথাও যেতে পারেননি।

সালাহির আইনজীবী ব্রাউন বলেন, যে তথ্যের ভিত্তিতে তার মক্কেলকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ ধরনের ঘটনা যেন আর কারো জীবনে না ঘটে- তা নিশ্চত করার জন্য তিনি এই মামলা করেছেন।

এদিকে সি এস আই এস ও আর সি এমপি সালাহির এই মামলার বিসয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সূত্র : রেডিও কানাডা

Exit mobile version