নাগরিকদের মনে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা থাকলেও অর্থনীতিবিদ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে দ্রুতই কানাডার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। তারা বলেন, কোভিড মহামারী মানুষের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে, সেই স্থবিরতা কাটিয়ে জীবনের গতি ফিরিয়ে আনতে সবাই উদগ্রিব। এটিই অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে। কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ এর এই সপ্তাহের আলোচনায় কানাডীয়ান বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা- ব্যবসায়ীরা এই অভিমত প্রকাশ করেন। টরন্টো সময় বুধবার রাতে সরাসরি স¤প্রচারিত এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ ড. শিশির শাহন্ওয়াজ, ব্যবসায়ী- উদ্যোক্তা এহসানুল হক এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার নূসরাত জাহান।
আলোচনায় বক্তারা কোভিড মাহামরীতে ব্যবসা বাণিজ্য এবং সাধারন মানুষ বিশেষ করে কানাডীয়ান বাংলাদেশির উপর সৃষ্ট বিরুপ প্রতিক্রিয়ার বিবরণ তুলে ধরেন।

অর্থনীতিবিদ ড. শিশির শাহন্ওয়াজ কানাডার অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, কোভিডের প্রতিক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বলেন, এটা ঠিক ফেডারেল সরকারের সামনে বিশাল আয়তনের ঘাটতির বোঝা দৃশ্যমান। কিন্তু কেবলমাত্র সংখ্যার আয়তন দেখে আতংকিত হওয়ার কিছু নাই। তিনি বলেন, কানাডার অর্থনীতি অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ানো। তাছাড়া জিডিপি এবং ফেডারেল ঋণের আনুপাতিক হার বিবেচনায় নিলে শিল্পোন্নত অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডায় এই হার এখনো অনেক কম। তিনি বলেন, কোভিড অর্থনীতির উপর চাপ তৈরি করলেও ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো বলে আমার ধারনা। ঘাটতি মেটাতে সরকার নাগরিকদের উপর বহুমাত্রিক করের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারেন এমন আশংকাকে অমুলক হিসেবে উল্লেখ করেন ড. শিশির।

ব্যারিষ্টার নূসরাত জাহান তার আলোচনায় বলেন, এটা সত্য যে সরকার ব্যাপক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সিংহভাগ নি¤œ আয়ের মানুষ কষ্টকর অবস্থায় আছে। তাদের আয় রোজগার কমে গেছে, যারা চাকুরী হারিয়েছেন তাদের অনেকেই এখনো সেই চাকরী ফিরে পায়নি। তিনি বলেন, কোভিডে বাড়ি থেকে কাজ করার সংস্কৃতি চালু হলেও নি¤œ ও মধ্য আয়ের কর্মীরা এই সুযোগটা নিতে পারছে না।

ব্যারিস্টার নূসরাত বলেন, আমার মনে হয় না অর্থনৈতিকভাবে আমরা তেমন একটা সুখকর অবস্থায় তিনি বলেন, কোভিড মহামারীতে নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি ফেডারেল সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি- তোমরা বাসায় বসে থাকো’ এই ধরনের বার্তা অর্থনীতির গতি ফেরানোর জন্য সহায়ক নয়।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এহসানুল হক তার আলোচনায় বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ এমন কি প্রতিবেশি আমেরিকার চেয়েও কানাডার অর্থনীতি এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, কোভিডে ব্যবসা হারানো, রোজগার হারানো মানুষগুলো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। পরিস্থিতি অনুক‚ল হওয়া মাত্রই তারা বিপুল উদ্দমে কাজে ঝাপিয়ে পড়বেন। ফলে অর্থনীতি দ্রুতই আগের জায়গায় ফিরে যাবে। তিনি বলেন, মহামারীর সময় মানুষ নতুন নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে সক্রিয় হয়েছে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখেছে। নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কোভিডের কারণে অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে সেটি অন্য সময়ের মন্দার চেয়ে ভিন্নরকমের। অর্থনীতির কাঠামোতে কোনো ত্রুটি তৈরি হযনি, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে আছে। তিনি বলেন, আরোপিত এই পরিস্থিতি কেটে গেলেই অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করবে।