অনলাইন ডেস্ক : মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় কাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করা। আর এই নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হলো কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।

ছোটবেলায় পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে গিয়ে কারো কারো হয়তো মনে প্রশ্ন জেগেছে পশ্চিম দিকেই কেনো মুখ করে নামাজ পড়তে হবে?

এরই জবাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে মূলত পাঁচটি কারণে কাবা শরীফের দিকে ফিরে নামাজ পড়তে হয়।

১) ইবাদতের প্রাণ হলো স্থিতিশীলতা ও একদিকে নিবিষ্ট হওয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদতকারী নিজ ইবাদতে একটি নির্দিষ্ট দিকে নিজেকে বাধ্য না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিবিষ্টতা ও স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে না। এ জন্য নামাজের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

২) বাহ্যিকের সঙ্গে অভ্যন্তরের এমন নিবিড় সম্পর্ক আছে যে বাহ্যিককে কোনো এক দিকে অবলম্বন করা হলে অভ্যন্তরকে সেদিক অবলম্বন করার শক্তি প্রদান করে। এ জন্য নামাজে কাবার দিকে মুখ ফেরানো আবশ্যক।

৩) সৃষ্ট জীবের মধ্যে সবার জন্য একটি নির্দিষ্ট কিবলা হওয়া আবশ্যক, যেন তাদের বাহ্যিক ঐক্য দ্বারা অভ্যন্তরীণ ঐক্য শক্তিশালী হয়। আর যখন ইবাদতের নূর ও বরকত অর্জনে বাহ্যিক ও অভ্যন্তর উভয় সমন্বয় হয়ে যাবে, তখন অন্তর জ্যোতির্ময় হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি হবে। যেমন- এক স্থানে যদি অনেক বাতি প্রজ্বালন করা হয়, তখন সে স্থান অনেক আলোকিত হয়। এ জন্যই জুমা ও জামাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে এক মহল্লার লোকেরা সমবেত হয় আর জুমার জামাতে এক শহরের লোকেরা সমবেত হয়; আবার হজের সময় বিশ্বের সব মুসলমান সমবেত হয়। সমবেত হওয়া ইবাদতের নূরকে বৃদ্ধি করার কারণ হয়। যেহেতু বিশ্বের সব মুসলমান একই স্থানে সব সময় একত্র হওয়া অসম্ভব, এ জন্য সে স্থানের দিকটাকে ওই স্থানের পর্যায়ে গণ্য করে নামাজে সেদিকে ফেরার বিধান প্রদান করা হয়েছে।

৪) মহান আল্লাহ তার ইবাদতের পদ্ধতিকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছেন, যাতে ইবাদত শিরকমুক্ত হয়। এদিকে প্রত্যেক মুসলমানের বিশ্বাস ছিল যে মক্কায় বাইতুল্লাহকে একত্ববাদের মহান এক প্রচারক হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্মাণ করেছেন এবং শেষ জামানায় তারই বংশধরের এক মহান ব্যক্তি হজরত মুহাম্মদ (সা.) পূর্ণ শরিয়ত নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবেন। তিনি তাওহিদ তথা একত্ববাদের আদর্শকে পুনর্জীবিত ও পূর্ণ করবেন। তাই মহান আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষাকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়তে হয়।

৫) কোনো ব্যক্তি যদি কোনো জায়গায় যায়, তখন সে জায়গায় যাওয়ার জন্য যে আদব-শিষ্টাচার রয়েছে, তার অনুসরণ করা হয়। পাশাপাশি এই শিষ্টাচার ওই ব্যক্তির প্রাপ্য হিসেবে ধরা হয়। যেমন- কোনো সিংহাসনে উপবিষ্ট ব্যক্তিকে যদি ঝুঁকে সালাম করে তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সিংহাসনে উপবিষ্ট সত্তা, সিংহাসন নিজে নয়। সুতরাং ‘বাইতুল্লাহ’ শব্দ দ্বারাও এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ঘর উদ্দেশ্য নয়, বরং ঘরের মালিক উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়া হলেও মূলত নামাজ কাবার মালিকের জন্য।

সুরা বাকারার ১৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে কিবলা হচ্ছে সেদিক, যেদিকে রয়েছে মসজিদে হারাম অর্থাৎ কাবা। আর এই আয়াতে কিন্তু কোনো দিক নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং কোনো দিককে কিবলা ভাবাটা মস্ত বড় ভুল হবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ যারা পশ্চিম দিককে কিবলা ভাবী। এইটা একদিকে যেমন ঠিক অন্যদিকে তেমন ভুল। কোনো নির্দিষ্ট দিক আসলে কিবলা নয়। যেহেতু কিবলা কাবা শরীফ যেদিক সেদিককে বোঝায়।

এইদিক দিক দিয়ে কাবা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম দিকে থাকায় কিবলাকে কিবলা না বলে পশ্চিম দিক বলেই ডাকা হয়। কিন্তু এটি মনে রাখা জরুরি কিবলা মানে পশ্চিম দিক না। কিবলা বলতে আলাদাভাবে পূর্ব, পশ্চিম, বা উত্তর, দক্ষিণকে বোঝায় না। কাবা যেদিক কিবলাও হবে সেদিক।