স্পোর্টস ডেস্ক : অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্তারের দ্বিতীয়ার্ধের হেডে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছে লিভারপুল। রিয়াল মাদ্রিদের শতভাগ জয়ের রেকর্ডের অবসান ঘটিয়ে ১-০ গোলের এই জয়ে দলটি যেন ফিরে পেল পুরনো ছন্দ। তবে ফিরতি ম্যাচে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের জন্য এটি ছিল এক বেদনাদায়ক রাত।
এই ম্যাচে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সাইনিং ফ্লোরিয়ান ভিরৎসের দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কাড়লেও, গোলের জাল খুঁজে পান আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ম্যাক আলিস্তার। ডমিনিক সোবোস্লাইয়ের নিখুঁত ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে থিবো কোর্তোয়ার অসাধারণ প্রতিরোধ ৬১তম মিনিটে ভাঙেন তিনি।
সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মতো টানা দুই জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুল উঠেছে পয়েন্ট তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। সমান পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন সমানে সমান রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে, যারা এই মৌসুমে প্রথমবার কোনো ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হলো।
শনিবার অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে জয়ের পর অনেকে লিভারপুলকে আবার উজ্জীবিত দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মাদ্রিদের বিপক্ষে এই জয় প্রমাণ করল-এবার তারা সত্যিই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এক বছর আগে অ্যানফিল্ডে মাদ্রিদকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল লিভারপুল, তবে তখনকার চেয়ে এবারের চ্যালেঞ্জ ছিল কঠিন। সাবেক রেডস তারকা জাবি আলোনসোর নেতৃত্বাধীন দলটি ছিল পূর্ণশক্তিতে। অথচ লিভারপুলকে নামতে হয় ব্রিটিশ রেকর্ড সাইনিং আলেকজান্ডার ইসাক, প্রথম পছন্দের গোলকিপার অ্যালিসন বেকার ও ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডের ফুল-ব্যাক জেরেমি ফ্রিমপংকে ছাড়াই।
প্রথমার্ধে একটি বিতর্কিত মুহূর্তে অরেলিয়েন চুয়ামেনির হাতে বল লাগলে লিভারপুল পেনাল্টি আশা করেছিল, কিন্তু ভিএআর জানায় এটি হ্যান্ডবল নয়। তাতে থেমে না গিয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ক্লপের দল, আর তারই ফল ৬১ মিনিটে আসে গোল।
পুরো ম্যাচজুড়ে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডকে দর্শকদের তীব্র বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়। ৮১তম মিনিটে মাঠে নামতেই কানে আসে কর্ণবিদারক বাঁশি ও ‘স্টিভেন জেরার্ড’ স্লোগান—যেন তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ।
তবে মাঠের লড়াইয়ে ফোকাস ছিল অন্যত্র। আর্নল্ডের বিকল্প কনর ব্র্যাডলি আবারও নজর কাড়েন, বিশেষ করে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ম্যাচের তাপ বাড়িয়ে তোলে।
২০২২ সালের ফাইনালের মতো এবারও রিয়াল মাদ্রিদের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। প্রথমার্ধে সোবোস্লাইয়ের দুটি দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দেন তিনি।
অন্যদিকে রিয়াল খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, শুধু একবার অ্যান্ডি রবার্টসনের বিরুদ্ধে পেনাল্টির দাবি তুলেছিল। জুড বেলিংহাম অবশ্য ২২ বছর ১২৮ দিন বয়সে ৫০টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ে নেন, তবে তার শট ঠেকিয়ে দেন লিভারপুলের গোলকিপার গিওর্গি মামারদাশভিলি।
কিলিয়ান এমবাপ্পে পুরো ম্যাচে একটিই ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন, সেটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কোর্তোয়া দারুণভাবে ঠেকান ভার্জিল ফন ডাইক ও হুগো একিতিকের পরপর দুটি হেড। কিন্তু ম্যাক অ্যালিস্টারের শক্তিশালী হেডে কিছুই করার ছিল না তার—৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এই খেলোয়াড়ের শটে বল চলে যায় জালের ভেতর।
শেষ মুহূর্তে বদলি হিসেবে নামা কোডি গ্যাকপোর শটও ঠেকান কোর্তোয়া, তবে ম্যাচের ফলাফল তখন অনেকটাই নির্ধারিত।
লিভারপুলের এই জয় শুধু তিন পয়েন্টই নয়, আত্মবিশ্বাসেও বড় এক উত্থান এনে দিয়েছে।
