অনলাইন ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে অবরোধের কারণে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে— অবশেষে তা স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ‘খাদ্য কেন্দ্র’ স্থাপন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৮ জুলাই) স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছুদিন আগে টেলিভিশন সংবাদে আমি গাজার একদল শিশুকে দেখলাম। তাদের খুবই ক্ষুধার্ত দেখাচ্ছিল। গাজায় সত্যিকারের ক্ষুধা সংকট শুরু হয়েছে এবং আপনি একে কোনোভাবেই ভুয়া বলে উড়িয়ে দিতে পারবেন না।’
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলতে চাইছি, ওই বাচ্চারা সত্যিই ক্ষুধার্ত। আমি চাই সে (নেতানিয়াহু) নিশ্চিত করুক যে, তারা খাবার পাচ্ছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, তারা খাবার পাচ্ছে।’
সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ‘খাদ্য কেন্দ্র’ স্থাপন করবে জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা গাজায় খাদ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছি, যেখানে লোকেরা প্রবেশ করতে পারবে এবং কোনো সীমানা থাকবে না, আমরা বেড়া দেব না। আমরা কিছু খুব ভালো মানুষের সঙ্গে মিলে এটি করব। আমরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি, আমরা প্রচুর অর্থ পেয়েছি এবং অন্যান্য দেশগুলো আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্র যে ‘খাদ্য কেন্দ্র’ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সেগুলো পরিচালনার দায়িত্বে কে থাকবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য বিতরণের জন্য সাহায্য করবে এবং আমরা নিশ্চিত করব সেখানে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, মানুষ যাতে আটকে না থাকে।’
প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে ১০০টিরও বেশি এনজিও ও মানবাধিকার গোষ্ঠী। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণ করতে দিচ্ছে না। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে সতর্ক করেছে সংস্থাগুলো।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে চরম অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে নতুন করে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধাজনিত কারণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপে অবরুদ্ধ গাজায় রোববার থেকে ১০ ঘণ্টার ‘কৌশলগত বিরতির’ ঘোষণা দেয় ইসরায়েল।
প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটির নির্দিষ্ট এলাকায় এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে। এমন পদক্ষেপের উদ্দেশ্যই ছিল মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।
তবে বিরতির ঘোষণার পরপরই রোববার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা
				





