ড. হীরা লাল পাল : দুর্গাপূজোর আবেগ বাঙালির চিরন্তন। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিবারের মত এবারও টরন্টো দুর্গাবাড়ী ৬ দিনব্যাপী উদযাপন করেছে বাঙালির সব থেকে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান “শারদীয় দুর্গোৎসব-২০২১”। সংযুক্তা মুখার্জির মহালয়ার বিশেষ গীতি আলেখ্য “মহিষাসুরমর্দিনী” নৃত্যের মাধ্যমে সূচনা হয় টরন্টো দুর্গাবাড়ীর যুগপূর্তি পূজা। মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু বাঙালির মহোৎসব আরম্ভ হয় ১১ই অক্টোবর।
শারদোৎসব উপলক্ষে টরন্টো দুর্গাবাড়ীর শারদ সংকলন “দৃষ্টি” এক বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত এবং মোড়ক উন্মোচিত করেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বর্ণাঢ্য আয়োজন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে, ভক্তির প্রাচুর্যে বাঙালি হিন্দু তিথি মোতাবেক, শাস্ত্রমতে সাধ্যমত এই উৎসব উদ্যাপন করে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর সকালে পুস্পাঞ্জলি ও সন্ধ্যায় বিশেষ সন্ধ্যা আরতি ভক্তবৃন্দকে মোহবিষ্ট করে রাখে। সে এক অতুলনীয় পরিবেশ। দুর্গাবাড়ীর ভিতরের ও বাইরের আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা টরন্টোরবাসীর হৃদয় ছুয়ে যায়। আশে পাশের শহরগুলো থেকে দল বেঁধে পুজো দেখতে আসে। সে এক অপরূপ মিলনমেলায় পরিণত হয় দুর্গাবাড়ী। নবমীতে বাংলাদেশের মন্দির ভাঙার প্রতিবাদে এক মিনিট বন্ধ রাখা হয় সমস্ত আলোকসজ্জা ও কার্যক্রম। ১৫ই অক্টোবর বিজয় দশমীর মাধ্যমে এই উৎসবের সম্পন্ন হয়। দশমীতে সিঁদুর খেলায় শুভেচ্ছা ও প্রীতির এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যেখানে আমরা বুঝতে পারি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সকল মানুষ এক ইশ্বরের সৃষ্টি- এক জগজ্জননীরই সন্তান। আমরা প্রত্যেকেই আপন। আর তাই শারদীয়া দুর্গাপূজা বাঙালি সমাজকে অতিক্রম করে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের মধ্যে একাত্মতা অনুভবের এক মহোৎসব। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে দুর্গাপুজো সামাজিক মিলনের একটি উদার ক্ষেত্রস্থল হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে।
এখানে মলিনতা নেই, হীনতা নেই, নেই কোন ছোট বড়র হিসেব কিংবা অভিজাত্যের বড়াই। পুস্প, পুস্পাঞ্জলি এবং প্রসাদ ব্যতিত কোন ভক্তবৃন্দ মন্দির ত্যাগ করিনি এবং মেনেছে কোভিডের সমস্ত নিয়মনীতি। এখানে সবাই সব ভুলে মিলবে, মেলাবে, ‘যাবে না ফিরে’। এখানে সবার আমন্ত্রণ। আগামী ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় লক্ষীপূজা ও ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আপনার সবান্ধব ও সপরিবার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
ড. হীরা লাল পাল, সাধারণ সম্পাদক, টরন্টো দুর্গাবাড়ী