অনলাইন ডেস্ক : মানুষের পরবর্তী ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ’ হতে পারে মঙ্গলগ্রহে ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণে মহাকাশচারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে অ্যানেমিয়া বা রক্তে লোহিত কনিকার ঘাটতি যা সাধারণত রক্তস্বল্পতা নামে পরিচিত। কানাডিয়ান বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা পরামর্শে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার ডা. গাই ট্রুডেল যিনি কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির অর্থায়নে একটি গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে মহাকাশের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ ও অ্যানিমিয়া রোগিদের জন্য বিপদজনক। তাই এ ধরনের পর্যটকদের ভবিষ্যতে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এতদিন মহাকাশচারীদের ‘স্পেস অ্যানিমিয়া’ কে একটি অস্থায়ী উপসর্গ মনে করা হতো। ইতোপূর্বে নাসার এক গবেষণায় এই উপসর্গকে ‘১৫ দিনের অসুস্থতা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা এটিকে রক্তের লাল বা লোহিত কনিকা নষ্টের জন্য দায়ী করেছেন। এর ফলে নভোচারীরা মহাকাশে হিমোলাইসিস বা ওজন হীনতায় আক্রান্ত হন এবং মধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে ফিরে আসার পরও শরীরের একটি পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যেতে থাকেন।

ডা. গাই ট্রুডেল বলেন, আসলে অ্যানিমিয়া হলো মহাকাশে যাওয়ার একটি প্রাথমিক বিরূপ প্রভাব। যতক্ষণ আপনি সেখানে (মহাকাশে) আছেন ততক্ষণ যে পরিমাণ রক্ত কোষ তৈরি করছেন তার চেয়ে বেশি ধ্বংস করছেন। ফলে আপনার দেহে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

সাধারণত মানুষের শরীর প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২ মিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করে এবং একই সময়ে ওই পরিমাণ লোহিত কণিকা তৈরির মাধ্যমে তা পূরণ বা প্রতিস্থাপন করে। ডা. ট্রুডেলের গবেষক দল আবিষ্কার করেছে যে, ৬ মাসের মহাকাশ মিশনে একজন নভোচারীর দেহ প্রতি সেকেন্ডে ৩ মিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করে। ফলে আপনি স্পেস অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে বাধ্য। কেননা আপনার শরীরে ওই পরিমাণ রক্ত কণিকা প্রতিস্থাপন করতে পারবেন না।

নাসার অনুমান-মঙ্গলগ্রহে একটি রাউন্ড ট্রিপ মিশনে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। ট্রুডেল বলেন, আপনি যদি মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পথে থাকেন আর যদি শরীরে অতিরিক্ত লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির প্রয়োজনীয়তা বজায় রাখতে না পারেন তাহলে আপনি কঠিন সমস্যায় পড়তে পারেন। মহাকাশে হয়তো আপনার কোন সমস্যা হবে না, কিন্তু পৃথিবীতে অবতরণ এরপর আপনি সমস্যায় পড়বেন।

সান জোসে স্টেট ইউনিভার্সিটির মানব দেহতত্ত¡ নিয়ে গবেষণারত অধ্যাপক সুলেখা অনন্দ বলেন, তিনি ডা. ট্রুডেলের গবেষণা ফলাফলের সাথে একমত। এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। সূত্র : সিবিসি