Home সাহিত্য নয়নের জল নয়নে শুকায়

নয়নের জল নয়নে শুকায়

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>কামাল কাদের &colon;<&sol;strong> সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নেবার আর কয়েক মাস বাকী। নির্ঝঞ্ঝাটের মধ্যে অবশিষ্ট দিনগুলি কাটিয়ে দিতে চাইছেন এডভোকেট আফসার খান। এমন সময়ে ইংল্যান্ডের একটি আন্তর্জাতিক &OpenCurlyDoubleQuote;ল সোসাইটি” তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য। ইংল্যান্ড দেশটি মিস্টার খানের কাছে নুতন কোনো দেশ না। জীবনের সোনালী দিনগুলি সেখানেই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন। সরকারি কাজেও তাকে সেখানে কয়েকবার যাওয়া-আসা করতে হয়েছে। তাই আমন্ত্রণ পত্রখানা পাওয়ার পর হৃদয় কম্পিত হওয়ার মতো কিছুই হয়ে উঠেনি। তাছাড়া এই বুড়ো বয়সে আগের মতো কোথাও যাওয়া আসার ব্যাপারে সেরকম রোমাঞ্চ অনুভব করেন না। ছেলেগুলি মানুষ হয়েছে&comma; সবাই নিজেদের জীবনের বাছাই করা পেশায় প্রতিষ্ঠিত। আশ্চর্যের বিষয়&comma; ছেলেদের মাঝে কাউকেই আইনজীবির পেশায় রাজী করাতে পারেননি। তাদের সবার সেই একই কথা&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আইনজীবিরা ধোকাবাজ&comma; আইনের কলাকৌশলে দোষী আসামীকে নির্দোষ প্রমাণ করাই তাদের কাজ। সুতরাং আমরা এই পেশার ধারে কাছে যেতে চাই না”। কিন্তু মিস্টার খান ছেলেদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না যে&comma; নির্দোষ আসামীকে কাঠগড়া থেকে বাঁচিয়ে আনাটা একজন আইনজীবির কাছে কতবড় তৃপ্তিদায়ক তা একমাত্র ওই মামলায় সংযুক্ত আইনজীবি ছাড়া অন্য কেউ উপভোগ করতে পারবে না। মিস্টার খান কখনো কখনো ভাবেন&comma; যদি তার পাঁচ ছেলের মধ্যে একটি মেয়ে থাকতো তাহলে হয়তোবা উনার কথামতো সে আইনজীবি পেশায় লিপ্ত হতে পারতো।<&sol;p>&NewLine;<p>আজও মনে পরে এইতো সেদিন&comma; তিন তিনটে ছেলে হবার পর মিস্টার খান ভাবলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আর নয়&comma; এখানেই শেষ। মেয়ে মেয়ে করে বাংলাদেশে আর জনসংখ্যা বাড়াতে চাই না।” বন্ধুরা বলাবলি করতো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;তোরা তো আধুনিক শিক্ষীত দম্পতী&comma; তোদের তো দুটির বেশি সন্তান হবার কথা নয়। তোরাই যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ না করিস&comma; তাহলে সাধারণ মানুষদের দোষ দিয়ে লাভ কি&quest;”&comma; তাইতো&comma; মিস্টার খান ভাবেন&comma; অনেক পরিবারে একটি ছেলের জন্য রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়&comma; এদিকে একটি মেয়ের জন্য তাদের নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত হতে চললো। অবশেষে শেষ চেষ্টা করা হলো। তখনকার দিনে pregnency scan করার মতো তেমন সুযোগ ছিলো না অর্থাৎ ছেলে কি মেয়ে হবে সেটা জানাটা এখনকার মতো এত সহজ ছিলো না। তাইতো মাদ্রাজের এক নামকরা মেটার্নিটি ক্লিনিকে বসে তিনি ভাবছিলেন&comma; এবার যেন তাদের একটা মেয়ে হয়। কিন্তু বিধির বিধান&comma; কে খন্ডাবে&quest; কিছুক্ষণ পর ওয়েটিং রুমে এসে যখন তামিল নার্স তাকে জানালেন&comma; &&num;8220&semi;Congratulation Mr Khan I have got a good news for you&comma; you have a twin and both Mother and babies are doing&comma; পরক্ষণেই খান সাহেব&comma; ব্যগ্রচিত্তে নার্সকে জিজ্ঞাসা করলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;যমজ বাচ্চারা ছেলে না মেয়ে”&quest; নার্স সুন্দর একটা হাসি দিয়ে জানালো&comma; &&num;8220&semi;I am glad to say&comma; both are boys&&num;8221&semi;। খান সাহেব কথাটি শুনে তো অবাক&comma; নার্স বলে কি&comma; দুটোই ছেলে&excl; কথাটা শুনে হতাশায় মিস্টার খানের মনটা ভেঙে গেলো। হায় খোদা&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মানুষ যা চায় তা পায় না&comma; সে জন্যই বুঝি নিয়তির কাছে মানুষ যুগ যুগ ধরে পরাজয় স্বীকার করে আসছে”।<&sol;p>&NewLine;<p>জুনিয়র উকিলের ডাকে মিস্টার খানের ধ্যান ভাঙলো। &OpenCurlyDoubleQuote;স্যার&comma; কি ভাবছিলেন”&quest; কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি উত্তর দিলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;ভাবছিলাম কি&comma; তোমাদের মাঝখান থেকে আমার হয়ে কেউ ওই সম্মেলন থেকে ঘুরে এসো। এই বুড়ো বয়সে আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাদের মতো প্রতিভাবান ছেলেদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য এ ধরণের সম্মেলনে যোগদান করা দরকার”। সমবেত কণ্ঠে রুম থেকে সে এক কথা&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;স্যার&comma; আপনাকেই যেতে হবে&comma; যদিও আপনি খুব শিগগিরই অবসর নিচ্ছেন&comma; তবুও আপনার মতো বিচক্ষণ কৌসুলীর আমাদের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা একান্ত দরকার”। কলিগ আজম সাহেব কিছুটা জোর দিয়ে বললো &OpenCurlyDoubleQuote;স্যার&comma; পৃথিবীর বিখ্যাত আইনবিদগণ ওখানে আসবেন&comma; পান্ডিত্য দেখাবেন&comma; সেক্ষেত্রে আমরা আপনাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না”। মিস্টার খান একান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ সম্মলনে যোগদান করতে রাজী হলেন।<&sol;p>&NewLine;<p>ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর চেমসফোর্ড। এই শহরই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে। শহরটি লন্ডন নগরী থেকে ২৫ &sol;৩০ মাইল দূরে। প্রাকৃতিক শোভায় সম্মৃদ্ধ। সুন্দর পরিছন্ন শহর। বিরাট আয়োজন। সম্মেলন তিন দিন ধরে চলবে। পৃথিবীর দূর -দূরান্ত থেকে ঝানু আইনবিদদের উপস্থিতি। ফটকে করা প্রহরী। সকালের কফি শেষে সম্মেলন শুরু হবার কথা। ক্যাফেটেরিয়ার একটি টেবিলে বসে মিস্টার খান গরম কফি পেয়ালায় চুমুক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় ৯&sol;১০ হাত দূরে অবস্থিত অন্য একটা টেবিলে বসে ২৯ &sol;৩০ বছরের এক যুবতী মেয়ে উনার নেমপ্লেটের দিকে বার বার লক্ষ্য করছিলো। নেমপ্লেটে ইংরাজীতে লেখা&comma; &&num;8220&semi;মিস্টার আফসার খান&comma; পাবলিক প্রসিকিউটর&comma; বাংলাদেশ&&num;8221&semi;। এত লোক থাকতে এই ভিন দেশের সুন্দরী যুবতী মিস্টার খানের মত একটা বুড়ো লোককে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে &comma;ব্যপারটা উনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। কৌতূহলবশত মিস্টার খান যুবতীর নেম প্লেটের দিকে লক্ষ্য করলো&comma; তাতে লেখা&comma; Ulrika Khan&comma; Bar -at -Law&comma; Sweden। সুইডেনের মেয়ে ব্যারিস্টার&comma; আর পদবী &OpenCurlyDoubleQuote;খান&comma; তাজ্জব ব্যাপার তো&excl; শেষের নাম খানা আবার ভালো করে দেখলেন&comma; Kahn &lpar;ইহুদি নাম&rpar; নয়&comma; KHAN B &lpar;ইসলামিক নাম&rpar; লেখা রয়েছে। বানানের কোনো ভুল নেই। রহস্য আরো ঘণীভূত হয়ে উঠলো। পরিচিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। কিন্তু বেশি বেগ পেতে হলো না। যুবতীটি নিজেই চলে আসলো মিস্টার খানের টেবিলের কাছে শূন্য চেয়ারটাতে। সে মিস্টার খানের পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে নির্ভুল ইংরেজিতে বললো&comma; &&num;8220&semi;Mr Khan &comma; I can see you are from Bangladesh and what a coincidence&comma; your surname and my surname is same&&num;8221&semi;। মিস্টার খান ইংরেজিতে উত্তর দিলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;হাঁ&comma; তাইতো দেখছি”। মিস উলরিক খান বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে অনেক আগ্রহী”।<&sol;p>&NewLine;<p>মিস্টার খান একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;তোমাদের মত উন্নত ধনবান দেশের শিক্ষিতা মহিলা আমাদের মত দরিদ্র দেশ সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছো জেনে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করলাম। কিন্তু তবুও আমার কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না&comma; সত্যিই তুমি বাংলাদেশ সমন্ধে জানতে আগ্রহ কিনা”। উলরিকা বোধয় মিস্টার খানের কথায় কিছুটা হোঁচট খেলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মিস্টার খান বাংলাদেশ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার আমার একটা বিশেষ কারণ আছে”। মিস্টার খান পরক্ষণেই জিজ্ঞাসা করলেন &OpenCurlyDoubleQuote;সে কারণটা কি হতে পারে তা কি আমি জানতে পারি&quest;” কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার খান দেখতে পেলেন উলরিকার সুন্দর দু চোখে জল ছল ছল করছে। ম্লান হেসে উলরিকা বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;ওই সামনের বারে &lpar;bar&rpar; আজ সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই”। মিস্টার খান মৃদু হেসে জানালেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আমি তো এলকোহোল জাতীয় পানীয় পান করি না”। উলরিকা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;সে আমি জানি&comma; কারণ বাংলাদেশের বেশীর ভাগ লোকই মাদক দ্রব্য পান করে না&comma; তাছাড়া আমি নিজেও মাদক দ্রব্য পান করি না”। উলরিকা মিস্টার খানকে ভরসা দিয়ে বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আমরা দুজনেই অরেঞ্জ জুস খাবো আর বাংলাদেশ সমন্ধে গল্প করবো”। পরস্পরে বিদায় নেবার আগে উলরিকা হঠাৎ করে বলে উঠলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;বাংলাদেশের সাথে আমার নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে&comma; তাই আপনার সাথে আমার আলাপ করা একান্ত দরকার। আশাকরি আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ওই বারে &lpar;bar&rpar; আপনার সাক্ষাৎ পাবো”। তারপর তখনকার মত দুজনে দুজনার কাছ থেকে বিদায় নিলো।<&sol;p>&NewLine;<p>বিদেশীদের সত্যিই সময় জ্ঞানের প্রশংসা করতে হয়। ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় উলরিকা নির্ধারিত জায়গায় এসে উপস্থিত। মিস্টার খানেরই বরং ১০ &sol;১২ মিনিট দেরী হয়ে গেলো। শরৎকাল আসি আসি করছিলো। পড়ন্ত বিকেলে পরিষ্কার আকাশটা নীল আভায় ভরপুর ছিল। এক কথায় আবহাওয়া এবং পরিবেশ মিলে সময়টা অত্যন্ত মনোরম ছিল। বয়োজেষ্ঠ হিসাবে মিস্টার খান প্রথমে দু গ্লাস অরেঞ্জ জুসের অর্ডার দিয়ে একটা খালি টেবিলে দুজনে মুখোমুখি বসে পড়ে। তারপর কোনো ভূমিকা ছাড়াই উলরিকা শুরু করলো ওর জীবনের না বলা কাহিনী। &OpenCurlyDoubleQuote;বাংলাদেশ থেকে আমি কি চাই আর কি পাইনি তা আজ আমি বলতে চাইছিনা। শুধু এক পিতাহারা এক মেয়ের করুন কাহিনী আজ আপনাকে বলতে এসেছি। আমার মা জুডিথ জেনসেন &lpar;খান&rpar; সুইডেনের হেলসিংবেরির মেয়ে। পেশায় ইংরেজীর শিক্ষীকা। উনার বরাবরই ইংলেন্ডের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তাই প্রথম যৌবনেই ইংরেজী ভাষাকে আরও চৌকশ এবং ইংরেজদের ঐতিহাসিক দর্শনীয়গুলো নিজের চোখে দেখার জন্য লন্ডনে চলে আসেন। সে সময় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনক্ষেত্র ছিল লন্ডনের পোর্টলেন্ডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলে। ভবিষৎ স্বামীর সাথে ওখানেই পরিচয় হয় আমার মার। উনার নাম ও আফসার খান। বাঙালি ছেলে&comma; তবে পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন&comma; কারণ তখন ও বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। আপনার নাম এবং বাংলাদেশ থেকে এসেছেন দেখে মরিয়া হয়ে আপনার সাথে আলাপ করার আগ্রহ চেপে বসে আমাকে&comma; তারই সুযোগ খুঁজছিলাম। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে&comma; আপনার সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। বলতে পারেন মনোষ কামনা পূর্ণ হলো”। উলরিকা তার কথায় কিছুক্ষন বিরতি নিলো। কয়েক ঢোক অরেঞ্জ জুস পান করে তার কথা আবার শুরু করলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মিস্টার খান&comma; আমি জানি &OpenCurlyQuote;খান’ পদবী বাংলাদেশে ইংলেন্ডের &OpenCurlyQuote;স্মিথ’ পদবীর মতো পথে-ঘাটে ছড়িয়ে আছে”।<&sol;p>&NewLine;<p>তবুও ভাবলাম&comma; বাংলাদেশ থেকে যখন এসেছেন তখন আপনার কাছে আমার আরজিখানা পেশ করতে পারবো। আমার একান্ত অনুরোধ&comma; ঘটনাক্রমে যদি বাংলাদেশে কখনো কোনো &OpenCurlyQuote;বার’ এসোসিয়েশনে আমার বাবার সাথে দেখা হয়ে যায়&comma; তাহলে তাকে জানাবেন&comma; তার মেয়ে উলরিক খান সেই সুদূর সুইডেনে বসে প্রতি রাতে ঘুমোবার আগে তার জন্য অশ্রু ঝরায়। তার যে একান্ত ইচ্ছে ছিল ব্যারিস্টার হবার&comma; যা সে হতে পারেনি&comma; তার মেয়ে ব্যারিস্টার হয়েছে। শুধু এই কষ্টটুকু আমার জন্য করবেন। তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই”। তারপর উলরিকা তার হাত ব্যাগ থেকে কয়েক দশকের এক পুরোনো ছবি বের করে মিস্টার খানের সামনে ধরলো এবং সঙ্গে সঙ্গে জানালো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;এটা আমার বাবার ছবি এবং ছবিখানা আমি সব সময়ই আমার কাছে রাখি&comma; আর আমি ভাবি আমার বাবা আমার সাথেই আছেন।” ছবিখানা দেখেই মিস্টার খানের মাথা চরকগাছ&excl;&excl; উনার মাথাটা যেন দুলতে শুরু করলো&comma; মনে হলো এখনই বুঝি মাটিতে পড়ে যাবেন। কিন্তু তা হলো না&comma; শুধু দুচোখ বেয়ে অশ্র্রু গড়িয়ে পড়লো। মিস্টার খান নিশ্চিত হলেন&comma; তা হলে উলরিকা তারই মেয়ে। জীবনে তিনি যা হতে পারেননি&comma; উলরিকা তার সেই ব্যারিস্টার হওয়ার সাধ পূরণ করেছে। তিনি কি এখন বলতে পারেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আমি তোমার সে হারিয়ে যাওয়া বাবা&comma; আর তুমিই আমার মেয়ে”। নিজেকে অপরাধী ভেবে সে কথাটি বলার আর সাহস হলো না। আজ বয়সের ভারে আর দাড়ির আড়ালে উলরিকা উনাকে চিনতে পারছে না। উলরিকা যে ছবিখানা মিস্টার খানকে দেখালো সেটা তোলা হয়েছিল লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে &OpenCurlyQuote;ল’ পাশ করার পর কনভোকেশনের দিনে। সাথে ছিল উলরিকার মা। তারপর কত স্বপ্ন দেখেছেন জুডিথ জেনসেনকে অথাৎ উলরিকার মাকে নিয়ে। যথা সময়ে মিস জেনসেনকে বিয়ে করে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ভর্তিও হয়েছিলেন। এমন সময় দেশ থেকে আর্জেন্ট চিঠি এলো&comma; মা গুরুতর অসুস্থ। কোনো উপায় না দেখে জুডিথকে লন্ডনে রেখেই দেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন। দেশে পৌঁছে যা দেখলেন&comma; তা অন্যরূপ। মায়ের শরীর খারাপ&comma; ওটা একটা উছিলা ছিল। আসলে উনাকে বিয়ে দেয়ার জন্য এভাবে ডাকা হয়েছে। তা না হলে উনি হয়তো দেশে এভাবে ফিরতেন না। পরিবেশের চাপে পড়ে মিস্টার খানের বিয়ে হয়ে গেলো&comma; আর এভাবেই উনার জীবন থেকে জু ডিথ ও হারিয়ে গেলো। বিলেতে আর ফেরা হলো না।<&sol;p>&NewLine;<p>উলরিকার ডাকে মিস্টার খানের অন্যমনস্কতা ভেঙ্গে গেলো&comma; সে একটু উদ্বিগ্ন চিত্তে বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মিস্টার খান&comma; আপনার চোখে জল যে&comma;” কথা চাপা দেবার জন্য তিনি বললেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;বুড়ো বয়সে চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে&comma; তাই মাঝে মাঝে চোখে জল এসে যায়&comma; উলরিকা আবার বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আপনি আমার বাবার বয়সী&comma; আপনার চোখের জল আমি কি মুছে দিবো&quest;” &OpenCurlyDoubleQuote;ধন্যবাদ”&comma; মিস্টার খান বিনয়ের সাথে জানালেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মুছে দিয়ে আর কি লাভ&excl; আবার তো চলে আসবে&comma; নয়নের জল নয়নেই শুকাতে দাও”।<br &sol;>&NewLine;&OpenCurlyDoubleQuote;আচ্ছা&comma; তাই হোক” উলরিকা সম্মতি জানালো।<&sol;p>&NewLine;<p>ইতিমধ্যেই উভয়ই পরস্পরের কাছে সচ্ছন্ধ বোধ করছে। উলারিকা আবার শুরু করলো তার জমানো কথা&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;জানেন মিস্টার খান&comma; যদিও আমার বাবা একজন বিদেশিনীকে বিয়ে করেছিলেন তবুও উনি ছিলেন মনে প্রাণে একজন খাঁটি বাঙালি। আমার মা বলতেন&comma; হঠাৎ করে আমার বাবা রাত দুপুরে জেগে উঠে রবীন্দ্র সংগীত &sol; নজরুল গীতি শুনতে বসে যেত। দেশের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সর্বশেষ সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো”। উলরিকার হৃদয়স্পর্শী কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে মিস্টার খান জিজ্ঞাসা করলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;যে লোকটা তোমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি &comma;তোমার মাকে ঠকিয়েছে &comma;তার জন্য তোমার কেন এতো আগ্রহ&quest;”<&sol;p>&NewLine;<p>উলারিকা দৃতার সাথে উত্তর দিলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;আমার মার কোনো বিশ্বাস নেই আমার বাবার প্রতি&comma; কিন্তু আপনিই বলুন&comma; আমি কি করে বিশ্বাস হারাতে পারি&quest; উনি তো আমার জন্ম দাতা” কথাটি বলে সে মিস্টার খানের দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে রইলো।<&sol;p>&NewLine;<p>কি বা বলবে&comma; কারণ মিস্টার খানের কাছে এ মুহূর্তে বলার কিছু ছিল না। মিস্টার খানের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে উলারিকা নিজেই বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;নিশ্চয়ই কোনো সাংঘাতিক কারণ ছিল যার জন্য আমাদের আর কোনো খোঁজ খবর নিতে পারেননি&comma; হয়তোবা এ ভুলের জন্য এখনো তিনি পদে পদে কষ্ট পাচ্ছেন”। &OpenCurlyDoubleQuote;হয়তোবা” মিস্টার খান অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলেন। সে সময় মিস্টার খানের কাছে মনে হচ্ছিলো&comma; জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে&comma; যেন বুকটা ভেঙে চুর মার্ হতে চলছে। ভাবছে এ কি হলো&excl;<br &sol;>&NewLine;রাত গভীর হতে চলছে। দুজনে দুজনকে শুভরাত্রি জানিয়ে &OpenCurlyDoubleQuote;আগামীকাল আবার দেখা হবে” অঙ্গীকার করে হোটেল রুমে ফিরে গেলো। তারপর মিস্টার খান সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। তিনি ভাবছেন&comma; তাহলে উলরিকা আমারই মেয়ে&comma; ওর মা এখন কোথায়&quest; নিজের পরিচয়টুকু কি জানিয়ে দেবেন&quest; অজস্র চিন্তা -ভাবনায় উনার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। ভোরবেলা কনফারেন্স রুমে ঢুকতেই উলরিকার সাথে দেখা হয়ে গেলো। উলরিকা মিস্টার খানকে জিজ্ঞাসা করলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;মিস্টার খান আপনাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছে &comma;রাতে কি ঘুমের কোনো অসুবিধা হয়েছিল”। &OpenCurlyDoubleQuote;তুমি ঠিক ধরেছো&comma; বয়সের জন্য ঘুমের একটু ব্যাঘাত হয়েছে”&comma; মিস্টার খান জবাব দিলেন।<&sol;p>&NewLine;<p>বিকাল বেলায় কনফারেন্স শেষ হলো। আগামী কাল সবাই হোটেল ছেড়ে যে যার দেশে চলে যাবে। মিস্টার খানের মন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। কি করা যায় ভাবছেন। উলরিকাকে ওর রুমে ফোন করলেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;কাল তো আমরা সবাই চলে যাচ্ছি&comma; এ মুহূর্তে আমরা দুজনে&comma; কি করতে পারি&quest;” অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;চলুন সাগর পারে আজকের সন্ধ্যাটি কাটিয়ে দেই। আমার মা বলতেন&comma; আমার বাবা জল&comma; নদী&comma; সাগর খুবই ভালোবাসতেন”। মিস্টার খান জানালেন&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;বাংলাদেশের সব ছেলে মেয়ে জল নদী&comma; সাগর&comma; ভালোবাসে। কারণ এতেই তাদের জন্ম&comma; আর বেড়ে উঠা&comma; তাদের জীবনের গতিধারা এই নদী&comma; সাগরের মতো উত্তাল&comma; উচ্ছল। তারপর ঘন্টা খানকের মধ্যে উলরিকা মিস্টার খানের রুমের &&num;8220&semi;door bell&&num;8221&semi; বাজালো। মিস্টার খান তাকে দেখে একেবারে হতভম্ব&comma; তিনি এ কি দেখছেন&excl; উলরিকা শাড়ী পরে উনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিস্টার খান জিজ্ঞাসা করলো&comma; এ শাড়ী তুমি পেলে কোথায়”&quest; উলরিকা মিস্টার খানকে আরো হতবাক করে বললো&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;এটা আমার মার শাড়ী। আমার বাবা প্রথম এই শাড়ীখানা আমার মাকে উপহার দিয়েছিলেন। এই শাড়ীটি প্রায় তিরিশ বছরের পুরোনো।” কথাগুলি শুনে মিস্টার খানের হৃদয় যেন চৌচির হয়ে যেতে লাগলো। জীবন যে এতো কষ্টকর&comma; তা তিনি কখন ও ভাবেননি। সাগর পারের পরিষ্কার বালির উপর দিয়ে মেয়ে আর বাবা হেঁটে চলছে&comma; আর সেই সাথে মিস্টার খান মনে মনে কামনা করছে&comma; এ চলার পথ যেন শেষ না হয়। আগামীকাল যেন না আসে। অতীত হারিয়ে গেছে&comma; বর্তমান যেন চিরন্তন হয়ে থাকে। শেষ<br &sol;>&NewLine;quadersheikh&commat;gmail&period;com<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version