Home সাহিত্য প্রবহমান

প্রবহমান

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>হোসনে আরা মণি &colon;<&sol;strong> হোসনে আরা মণি-র জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমালয় থেকে নেমে আসা উন্মুক্ত&comma; অমলিন মধুমতি-ফটকি-গড়াই-নবগঙ্গা-চিত্রার কল্লোলিত স্রোতধারায় বাহিত পলি মাটিতে। বাবার এবং নিজের চাকরির সুবাদে বাস করেছেন রাজধানীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে। তাই তাঁর লেখা গল্প-উপন্যাস পড়লে আমরা দেখতে পাই স্মৃতি-বিস্মৃতির বাতায়ন ঘুরে তিনি কাহিনির পারম্পর্য তুলে এনেছেন তাঁর দেখা সমাজ&comma; সংস্কৃতি&comma; ধর্ম ও জীবনবোধ থেকে। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে মানুষ মননশীলতা ও মানবিকতার যে খরায় পড়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য চাই মনোজাগতিক পরিবর্তন। হোসনে আরা মণি তাঁর উপন্যাস প্রবহমান- এ মানবমনের এই নিগুঢ় সংকট নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন&colon; তুলে এনেছেন মানবিক ও মানবীয় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি&comma; পূর্ণতা-অপূর্ণতা&comma; আকাক্সক্ষা-দুরাকাক্সক্ষার কথা&comma; রাজনীতি-সমাজ-সংসারের অগ্রন্থিত কাহিনিমালা। আজকের বাঙলা সাহিত্য প্রেম-পরিণয়&comma; দারিদ্র্য-ক্ষুধা&comma; আকাক্সক্ষা-অনাচার বা সমাজ-সভ্যতার ছকবাঁধা ও কষ্টকল্পিত কাহিনির পৌনঃপুনিকতায় কিছু মাত্রায় আক্রান্ত। জীবনের চিরচেনা নিবিড় আখ্যান বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে বিরল না হলে সংখ্যায় লক্ষণীয়ভাবে কম। বিপরীতে আঙ্গিকের ভিন্নতা&comma; নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা&comma; পটভ‚মি&comma; চরিত্র চিত্রণ এবং কাহিনি বিন্যাসে ভাবাবেগহীন স্বতঃস্ফূর্ততা হোসনে আরা মণি-র এই উপন্যাসটিকে স্রোতস্বিনীর মতো প্রবাহিত হতে দিয়েছে। তাঁর এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো &OpenCurlyQuote;হাজার বছর ধরে’ নিজেদের মতো বাংলার শ্যামল প্রান্তর জুড়ে হেঁটে চলে। দিন শেষে পাঠকই বিচারক। সম্পাদক হিসেবে তাঁদের কাছে &OpenCurlyQuote;বাংলা কাগজ’-এর এই নতুন ধারাবাহিক উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রইলাম।<br &sol;>&NewLine;মনিস রফিক&comma; সম্পাদক<&sol;p>&NewLine;<p>&lpar;৬&rpar;<br &sol;>&NewLine;রাঁড়&comma; ভাঁড়&comma; মিথ্যে কথা<br &sol;>&NewLine;এই তিনে কলিকাতা<br &sol;>&NewLine;&&num;8211&semi; শরাফতের সদম্ভ ঘোষণা।<br &sol;>&NewLine;ঐ কোইলকেতে মাগীর গুষ্টির মদ্যি তুই ক্যা ফাল দে পড়ে বৌ সাজাতি বসলি&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>হিরণের মুখে কথা যোগায় না। তার মুখে এ কথা ঠেলাঠেলি করে বেরুতে চাইলেও সে বলার অবকাশ পায় না যে ইচ্ছে করে নিজ গরজে সে বৌ সাজাতে বসেনি। নানাজনের উপরোধ এড়াতে না পেরে নিতান্ত বাধ্য হয়েই সে&&num;8230&semi;। মধুমতি তীরের বিখ্যাত উজানগাঁওয়ের মেয়ে হিরণ। এককালে উজানগাঁও তো বড় গঞ্জই ছিল&comma; নাকি&quest; নদীর ভাঙ্গনে ভাঙ্গনে সেই গাঁ আজ বিলীন হয়ে গেলেও&comma; গাঁয়ের অধিবাসীদের অধিকাংশ এখন চরুয়া হলেও&comma; আগেরকালের ঠাঁটবাট কি তারা সবই ভুলেছে&quest; এই হিরণের বিয়েতেই তার চরবাসী চাচা দামান আর ইয়ারদের জন্য যে বিশাল তশতরি ভরা কোর্মা-পোলাওয়ের আনজাম করেছিল তেমন কি এই হাভাতে গিজগিজ করা ভাতুরে গ্রামের কেউ দেখেছে&quest; কাজেই মিদ্দা বাড়ির মেয়েরা যদি হিরণকে কনে সাজায়ে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে&comma; আর হিরণ বহু না-না করেও শেষে ময়-মুরুব্বীর মুখের কথার মান রাখতে রাজী হয়&comma; তবে তাতে তার দোষটা কোথায়&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>কিন্তু এসব কথা বলবার মত অবস্থা কিনা এখন হিরণের&excl; এই সাতসকালে বিয়েবাড়ির শত শত জোড়া চোখের সমুখ দিয়ে বৌয়েরে প্রায় উঠায়ে এনে বাড়ি ফিরে শরাফত মিঞা ফাঁকা ঘরে খিল এঁটেছে। মিদ্দাবাড়ির বিয়ের দাওয়াতে আর কাজের হাঙ্গামায় হাত লাগাতে কাল বিকেল থেকেই এ বাড়ির সবাই সেখানে পড়ে আছে। ফাঁকা বাড়ি পাহারা আর গরু-বাছুরের তত্ত¡-তালাশের নাম করে বাড়ি জুড়ে ছিল এক লোকমান। তা বৌয়ের হাত ধরে শরাফতরে বাড়ি ঢুকতে দেখে সে এখন মূল বাড়ি ছেড়ে কাছারি ঘরের ওপারে খ্যাড়ের পালার কোলে ঠাঁই পেতেছে। সেখানে সে বিচালী কেটে গরুর জাবনা তৈরিতে যেন ঘোর মনোযোগী। বুক শিরশির করে বেয়ে ওঠা এক দীর্ঘশ্বাস লোকমানের মুখ দিয়ে সশব্দে বেরিয়ে অদূরে ভাতুরিয়া বিলের বুক ছুঁয়ে কোন এক অজানা শূন্যতায় মিলিয়ে যায় কি&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>আর হিরণ&quest; তার মুদিত বিবশ চোখে তখন কোন ঘোর নেচে ফেরে&quest;<br &sol;>&NewLine;ইশ্কুল&comma; ইশ্কুল&&num;8230&semi;না জানি কেমন তা। সেখানে মেয়েরা পড়তে যায়। কারা পড়ায়&quest; কী পড়ে&quest; পুঁথি&quest; কী পুঁথি&quest; কী কাহিনী লেখা থাকে তাতে&quest; ইস্&excl; তার যদি একটা মেয়ে হয়&comma; তবে সে ইশ্কুলে পড়তে পাঠাবে। কোন ইশ্কুলে&quest; এ গাঁয়ে তো ইশ্কুল নেই। কাছাকাছির ভেতরে তিন গ্রাম পরে নহাটায় আছে এক ইশ্কুল। সে ইশ্কুলে নাকি ছেলেরা পড়ে। কই&comma; কোন মেয়ের ইশ্কুলে পড়ার কথা তো শোনা যায় না। মেয়েমানুষ ইশ্কুলে পড়ে এ কথাটাই তো এ তল্লাটের কেউ কখনো আগে শোনেনি। ইদানীং শোনা যাচ্ছিল কোলকাতায় মেয়েরা নাকি ইশ্কুলে পড়তে যায়। মেয়েদের জন্য আলাদা ইশ্কুল নাকি আছে সেখানে। কিন্তু আজকের আগে হিরণ সেই মেয়েদের কাউরে চোখের দেখাও দেখেনি। সেই মেয়েরা কি সব এমনই সুন্দর দেখতে&quest; আহা&excl; কী রূপ&excl; কী শাড়ি পরার কায়দা&excl; আর কী মিঠে মিঠে কথা&excl; নামও তার তেমনি মিষ্টি- মোসাম্মৎ শারাবান তহুরা। কত মোলাম করে হিরণের হাত দুটো ধরে সে বললো&comma; রাগ কোরো না ভাই&comma; আমার নানীটা অমন&&num;8230&semi; তোমার কনে সাজানো কিন্তু আমার ভারি পছন্দ হয়েছে&comma; ভাই। বললে বিশ্বাস করবে কি- তোমার বাড়ি কোলকাতায় হলে আমার বিয়ের সাজের জন্য তোমাকেই নেমন্তন্ন করতুম। এটুকু বলেই মোসাম্মৎ শারাবান তহুরা লাজে লাল হয়ে গেছিল। কিন্তু হিরণের মুখ লাল হয়ে উঠেছিল স্বীকৃতির গর্বে আর ভালো লাগার উচ্ছ¡à¦¾à¦¸à§‡à¥¤ এখন হিরণের চোখে যে অন্য এক স্বপ্নঘোর&excl; স্বামীর বুকের তলায় পিষ্ট হতে হতে তার মনশ্চক্ষু দেখতে থাকে এক ঝাঁক মেয়ে&&num;8230&semi; তারা ছুটে ছুটে খেলাধুলা করে&comma; দল বেঁধে ইশ্কুলে যায়&comma; দলের মাঝখানে থাকে শারাবান তহুরার মতন দেখতে একটা মেয়ে। কিন্তু কেমন ছোট্ট আর তুলতুলে&&num;8230&semi; মেয়ে&comma; মেয়ে&comma; হিরণের পেটে ধরা মেয়ে&comma; হিরণের কোলে বেড়ে ওঠা মেয়ে&comma; হিরণের লহু বয়ে নেয়া মেয়ে&&num;8230&semi; সেই মেয়ে ইশ্কুলে যায়&comma; পড়ে&comma; লেখে&comma; হিরণ চেয়ে চেয়ে দেখে&&num;8230&semi; আহা&excl; হিরণের কপালে কি তা আছে&excl; অমন সুখের দিনে হিরণ কি বেঁচে থাকবে&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>&lpar;à§­&rpar;<br &sol;>&NewLine;আষাড়ের ঢল। ভাতুরিয়া পানি থই থই। এ অঞ্চলে বন্যার পানি আসে শ্রাবনের শেষে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে পুরো আষাঢ় আর শ্রাবনে যত বৃষ্টি হয় তার সাথে সিথানের পাহাড়ি ঢল মিশে নদীগুলো ফুলে-ফেঁপে উঠে বাংলার আনাচে-কানাচে পৌঁছাতে আষাঢ় পেরোয়ে শ্রাবন ফুরায়। বাংলার উত্তরের তুলনায় দক্ষিণের বন্যা এ কারণেই নামী। কিন্তু এ বছর আষাঢ়ের মাঝামাঝি টানা সাত দিনের বৃষ্টির সাথে নদীর প্রবাহে কিসের কী পানি এসে হঠাৎ এমন কুলপ্লাবী হয়ে উঠলো যে মধুমতির বুক উথলানো জলধারা মাত্র দেড় দিনে ছয় মাইল পথ পেরোয়ে রমিজ মিঞার গোয়াল ঘরে উঁকি দিতে শুরু করলো। চাষাদের খেত ভরা আউশের জলি ধান। ধান তো নয়&comma; যেন ফোঁটা ফোঁটা ঘন দুধ। দুধ জমে শক্ত হতে মাসখানেক সময় নেয়। শ্রাবনের মাঝামাঝি এসব ধান কাটার উপযোগী হয়। আষাঢ়ি ঢল কিংবা মাঝারি বান এসব ধান অনায়াসে সয়ে নেয়। কিন্তু বন্যা খুব বেশি হলে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে বাড়তে এরা বড় কাহিল হয়ে পড়ে। বানের পানি নেমে গেলে লুটায়ে থাকা তৃণদের খুঁজে পাওয়া গেলেও তাতে আর ফসলের দেখা মেলে না। মাথায় ফুটো মাথাল আর কোমরে ছেঁড়া গামছা বাঁধা কৃষকের তখন মাথায় হাত&comma; পেটে পাথর।<&sol;p>&NewLine;<p>এবারের বন্যা রমিজ মিঞার সংসারে যেকোন আকস্মিক দুর্যোগের চেয়ে ভয়াবহ হয়ে দেখা দিল। শরাফতের বৌ গর্ভবতী। সাতমাস। আকিমনের বহু মুখ ঝামটা&comma; দোয়া-দুরুদ আর রওজান বিবির সাধ্য-অসাধ্য সব মানতের ফসল এই গর্ভ। মা যা সব মানত করে রাখছে তাতে সন্তান হলে পর পালানের একটা জমিই না বেচে দিতে হয়&excl; রমিজ মিঞা বসে বসে ভাবে। এদিকে সাত মাসের পোয়াতীরে সাধ খাওয়ানোর নিয়ম আছে। পয়লা পোয়াতী বলে কথা। বন্যা বা আকালের ওজরে তার সাধ-আহ্লাদ কি ময়-মুরুব্বীর পুরনো শাস্তর এর নিয়ম তো আর হেলা করা যায় না। কাজেই সাধ্যমত সাধ এর আয়োজন হয়। তিন-তিনখান গয়নার নাও ভরে হিরণের বাপের বাড়ির কুটুম্বরা সব হাজির। কুটুম্বরা একবেলার মেহমান। সেই এক বেলাতেই রমিজ মিঞার আউড়ির আমন বীজধান সব উড়ে গেল আর সাথে গেল বড় সাধ করে পালা জোড়া খাসী। এই আকালের মুখে এ বড় কম ক্ষতি নয়। দুর্দিনে যে গিরস্থ বীজধান সাবাড় করে আর হালের বলদ বেচে&comma; আল্লাহ হাতে ধরে টেনে না তুললে সে আর কোনদিন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। লক্ষণ যা দেখা যাচ্ছে তাতে শেষে রমিজ মিঞার হালের বলদ জোড়াই না হাটে তুলতে হয়। আর তাই যদি ঘটে তবে কোনকালে আল্লাহ মুখ তুলে চাইবে কিনা তার মতো নালায়েক বান্দা তার কী জানে&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>সাধের খানাপিনা শেষে নয়া বৌয়ের মতন লম্বা ঘোমটা টেনে হিরনবালা উঠলো যেয়ে বাপের বাড়ির গয়নার নাওয়ে। চোখ তার ছলছল। নাইওর যাওয়ার কালে কোন বৌ কখনো কাঁদে না&comma; কাঁদে নাইওর শেষে ফেরার কালে। কিন্তু হিরণবালা আজ কাঁদে। মনে তার ভয়&comma; আবার কি সে ফিরবে এই গাঁয়ে এই বাড়িতে&quest; নাকি তার পরিণতি হবে শলোকা বুজির মতন&quest; সম্পর্কে হিরণের ননদ হতো শলোকা। এই তো গেল বছর ঠিক এই সময়েই তারে কত আমোদ করে পালকি করে আনা হলো সাধ খাইয়ে- দেড় মাস পর অসময়ে ব্যথা উঠে&&num;8230&semi;। মাগো&excl; তেমন যদি হয় হিরণের&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>স্বামী&excl; কোথায় গেলেন স্বামী&excl; যাবার কালে একবার দেখা হলো না&excl; এমন দিনে এমন সময়েই তারে যেতে হলো গত বছরের পাট বেচা টাকার তাগাদা করতে&excl; সারা বছর তাগিদ করে যে টাকা মেলেনি তাই কিনা মিলবে আজ&excl; স্বামীকে শেষবারের তরে দেখতে না পারার অভিমান&comma; নাকি জীবন-মৃত্যুর অনিশ্চয়তার ডরে হিরণের বুক ভেঙ্গে কান্না উথলে ওঠে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে হিরণ যাত্রা করে তার বাপের দেশের দিকে।<&sol;p>&NewLine;<p>তিন মাস পর সুখবর এসে পৌঁছায়- তিন দিন ধরে ব্যথায় বড় কষ্ট পেয়ে কাল বিশ্যুদবার রাঙাবড়ু খালাস হইছে। ফুটফুটে এক মেয়ে হয়েছে শরাফতের। সে খবর শুনে আকিমন একটু ক্ষণের জন্য গুম হয়ে থাকে। বংশের পরথম বাচ্চা- ছাওয়ালই চায় সবাই। বংশে বাতি জ্বালার ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর হোক না মাইয়্যে যে কয়ডা খুশি। কিন্তু রওজান বিবি খুশিতে ডগমগ। যে কুটুম্ব খবর আনছে তার আপ্যায়নের চেষ্টায় সে তখনই বড় মোরগটা ধরার নির্দেশ দেয়। আদেশ পেয়ে লোকমান মোরগের পিছনে ছোটে। কিন্তু দিনের বেলায় মোরগ ধরা কি সোজা কম্ম&excl; অগত্যা শরাফতও লেগে পড়ে। ওবাড়ির দুলাল মাঝির পো পথ সংক্ষেপ করতে এ বাড়ির উঠোনের উপর দিয়ে যাচ্ছিল।<br &sol;>&NewLine;লোকমানদের ছুটোছুটি দেখে সেও তাতে যোগ দেয় নিমেষে। একটা দুর্দান্ত মোরগের পিছনে তিনজন জোয়ান মর্দের এই হুটোপুটি রমিজ মিঞা নির্নিমেষ চোখে দেখে। নানা উপলক্ষে এই যে খাসী&comma; মোরগ&comma; বীজধান সব সাবাড় হয়ে যাচ্ছে&comma; এ ক্ষতি সে পুষায়ে নেবে কেমন করে&quest; গেল হাটে চাল বিকোয়ছে চার আনা করে সের। একে যুদ্ধের বাজার&comma; তাতে এই বন্যা। চারআনা সের দরে চাল কেনার সঙ্গতি এ এলাকায় বলতে গেলে কারোরই নেই। তবু কেউ কেউ কেনে। না কিনে উপায় কী&comma; পেটে তো দুটো দিতে হবে&quest; তাই যার হাড়িতে একবেলায় চাল দরকার তিন সের&comma; সে দুই দিনের দরুণ চাল কিনেছে পাঁচ সের। চালের অভাব মানুষেরা কচু-ঘেঁচু দিয়ে পোষাতে চেষ্টা করছে। এভাবে আর কিছুদিন চললে জলা-জঙ্গলের এ দেশে কচু-ঘেঁচুও বুঝি আর মিলবে না।<br &sol;>&NewLine;কুড়ি পাখি জমির মালিক রমিজ মিঞার ঘরে নিত্য ঘেঁচু-কচুর অম্বল খাওয়ার দিন এখনো আসেনি। বান-বন্যায় আউশ তলালেও একটু ডাঙ্গা জমি থেকে ধান যা পেয়েছে তাতে আমন পর্যন্ত চলা যাবে নিশ্চিত। আর পাটের ফলন এবার যা হয়েছে তাতে হিসেব করে চললে আসছে বছর পাট ওঠা তামাইৎ লবন-কেরোসিনের ভাবনায় পড়তে হবে না। এবার শীতে হয়ত কাবলিঅলার দেনাটাও শোধ করা যেত। গেল বছর এক কাবলির কাছ থেকে হঠাৎ গজায় ওঠা শখের বশে নিজের জন্য একটা শাল কিনে ফেলেছিল রমিজ মিঞা। সেই কোন ছোটকালে বাপজান বেজায় আবদারে পড়ে বোড়লে আড়ংয়ের থে এক চাদর কিনে দিছিল তারে। তারপর এত বড় জীবনটায় সে কবেই বা শীতকাপড় কিনেছে&quest; শীতকাপড় কেন&comma; বছরভর হাটে-বাজারে কি কুটুম্ব বাড়ি যেতে দরকার যে পিরান&comma; তাই বা সে সারাজীবনে কয়খান তৈয়ার করাইছে&quest; তবু দেখ তার এই শখটারে শরাফতের মা সুনজরে না দেখে। শালটা গায়ে জড়ায়ে আকিমনরে দেখাতেই সে মুখ বিরস করে বলেছিল&comma; শরাফতের জন্যি কিনলেন না&comma; এই বয়সে হাউশ&excl; রমিজ মিঞার মুখ থেকে লাজুক-লাজুক খুশি-খুশি ভাবটা পলকে উবে গেছিল।<&sol;p>&NewLine;<p>কিন্তু শরাফতের মেয়ের ষাঠুরে নিয়ে মা যা সব ফর্দ করছে তাতে কাবলির দেনা শোধ হবে কি&comma; ফের না তারে রাজাপুরের মুকুন্দ সাওয়ের খাজাঞ্চির দরবারে ঐ শালটাই বন্ধক রাখতে হয়&excl; আর ঐ এক শালে কি হবে&comma; গয়নাগাঁটি বন্ধক না রাখলে একটা খাসী&comma; এক জোড়া শাড়ি&comma; সোনার ভালি&comma; রুপোর মল আর নাতনির মুখ দেখার একটা গোটা টাকা সে পায় কোথায়&quest; এদিকে গয়না বলতে আকিমনের আছে নাকে বেশ বড় এক নাকছাবি আর কানে একজোড়া মাকড়ি। শরাফতের বৌয়ের নাকে নথ দোলাতে আকিমন নিজের নাকের &OpenCurlyQuote;আহ্লাদ’ খুলেছে সেই কবেই। সধবা মেয়েলোক- এখন তার কাছ থেকে তো ঐ নাকছাবি কেড়ে নেয়া চলে না। আর মাকড়ি জোড়াও পাওয়ার আশা দুরাশা। মুখ ঝামটা মেরে আকিমন ঠিক বলবে&comma; মুরোদ থাহে তো সোনারের থে ফরমাশ করে নাতিনের জন্যি মুটুক গড়াও&comma; আমার গরীব বাপের দেয়া জিনিসে হাত বাড়াও ক্যা&quest; কাজেই অবশেষে মা-ই ভরসা। মায়ের কাছে যদি বহু কাল ধরে বহু আকালেও আগলে রাখা কোন গুপ্ত ধন থেকে থাকে&&num;8230&semi;<br &sol;>&NewLine;শেষকালে তাই হয়। হাতড়ে-পাতড়ে&comma; বহু গাট্টি-বোঁচকার অন্ধি-সন্ধি খুঁজে রওজান বিবি ঠিক বের করে একটা ছোট্ট সোনার ধানতাবিজ। আকারে ছোট হলেও বেশ ভারি আর জিনিসও খাঁটি বলে মনে হয়। রমিজ মিঞা তাজ্জব- মা পারেও বটে&excl; সেই কোনকালে কোন সুদিনে নহাটার হাটে এক নাও ভরা মাসকলাই বেচে সেখানকারই এক স্যাকরার থে বাপজান গড়ায়ে আনছিল এই তাবিজ&excl; সেই তাবিজে এখন শরাফতের মেয়ের শাঠুরের আয়োজন হবে&excl; নিজেরে তার হঠাৎ অভাগা মনে হয়। বাপজানের আমলে এক মওসুমে মাসকলাই বেচে যা পাওয়া যেত এখন বছরভর চাষবাস করেও তার সিকিভাগ ঘরে না আসে। অথচ জিনিসপত্রের দাম দিন দিন আগুন হয়ে উঠছে। কোথায় কোন যুদ্ধ হচ্ছে কয় বছর ধরে। তার আঁচ পূববাংলার এই অজপাড়াগাঁয়ের গায়েও এসে লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে শরাফতের দশা যে শেষে কী হয়&excl;<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version