Home সাহিত্য প্রবহমান

প্রবহমান

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>হোসনে আরা মণি &colon;<&sol;strong> হোসনে আরা মণি-র জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমালয় থেকে নেমে আসা উন্মুক্ত&comma; অমলিন মধুমতি-ফটকি-গড়াই-নবগঙ্গা-চিত্রার কল্লোলিত স্রোতধারায় বাহিত পলি মাটিতে। বাবার এবং নিজের চাকরির সুবাদে বাস করেছেন রাজধানীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে। তাই তাঁর লেখা গল্প-উপন্যাস পড়লে আমরা দেখতে পাই স্মৃতি-বিস্মৃতির বাতায়ন ঘুরে তিনি কাহিনির পারম্পর্য তুলে এনেছেন তাঁর দেখা সমাজ&comma; সংস্কৃতি&comma; ধর্ম ও জীবনবোধ থেকে। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে মানুষ মননশীলতা ও মানবিকতার যে খরায় পড়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য চাই মনোজাগতিক পরিবর্তন। হোসনে আরা মণি তাঁর উপন্যাস প্রবহমান- এ মানবমনের এই নিগুঢ় সংকট নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন&colon; তুলে এনেছেন মানবিক ও মানবীয় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি&comma; পূর্ণতা-অপূর্ণতা&comma; আকাক্সক্ষা-দুরাকাক্সক্ষার কথা&comma; রাজনীতি-সমাজ-সংসারের অগ্রন্থিত কাহিনিমালা। আজকের বাঙলা সাহিত্য প্রেম-পরিণয়&comma; দারিদ্র্য-ক্ষুধা&comma; আকাক্সক্ষা-অনাচার বা সমাজ-সভ্যতার ছকবাঁধা ও কষ্টকল্পিত কাহিনির পৌনঃপুনিকতায় কিছু মাত্রায় আক্রান্ত। জীবনের চিরচেনা নিবিড় আখ্যান বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে বিরল না হলে সংখ্যায় লক্ষণীয়ভাবে কম। বিপরীতে আঙ্গিকের ভিন্নতা&comma; নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা&comma; পটভ‚মি&comma; চরিত্র চিত্রণ এবং কাহিনি বিন্যাসে ভাবাবেগহীন স্বতঃস্ফূর্ততা হোসনে আরা মণি-র এই উপন্যাসটিকে স্রোতস্বিনীর মতো প্রবাহিত হতে দিয়েছে। তাঁর এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো &OpenCurlyQuote;হাজার বছর ধরে’ নিজেদের মতো বাংলার শ্যামল প্রান্তর জুড়ে হেঁটে চলে। দিন শেষে পাঠকই বিচারক। সম্পাদক হিসেবে তাঁদের কাছে &OpenCurlyQuote;বাংলা কাগজ’-এর এই নতুন ধারাবাহিক উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রইলাম।<br &sol;>&NewLine;মনিস রফিক&comma; সম্পাদক<&sol;p>&NewLine;<p>&lpar;à§«&rpar;<br &sol;>&NewLine;ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল<br &sol;>&NewLine;সাত দিনের পথ মর্দ এক দিনে গেল।<br &sol;>&NewLine;মিদ্দা বাড়ি আজ মহা ধুমধাম। মেয়ে-মরদে বাড়ির ভেতর-বাইর সব একাকার। মিদ্দারা এ তল্লাটের নওমুসলিম। বেশি দিন আগের কথা না- তাদের পুরাতন দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে প্রমাণ। হরিচরণ&comma; হরিপদ&comma; হরিহর&comma; তারকনাথ&comma; কাশিনাথ&comma; শম্ভূনাথ প্রভৃতি নামের সাথে মৃধা যুক্ত হয়ে যে বংশপরম্পরা তাই মিদ্দাদের জোতজমির মালিকানার ইতিহাস। সেসব ইতিহাস সাক্ষী- এ অঞ্চলের তারাই পুরনো অধিবাসী। কিন্তু হলে কী হবে&semi; ও চালার বিশ্বাসরা মিদ্দাদেরে আজো যেন প্রায় অচ্ছুৎ নমঃশুদ্দুর বলেই ভাবে। এমন তো না যে&comma; বিশ্বাসরা আরব থেকে সফরে আসা খলিফা-সুফি-দরবেশদের আওলাদ কিংবা ইরান-তুরানের বাদশাহ-সুলতানদের উত্তরসূরী। ঠিকমত অতীত খুঁড়লে নিশ্চয় পাওয়া যাবে তাদের পূর্বপুরুষের ধর্মবিশ্বাসের ইতিহাস। কিন্তু সেই খোঁড়াখুঁড়ির উপায়টা বড় সহজ নয়।<&sol;p>&NewLine;<p>একেতো তারা ভিন গাঁও থেকে তাড়া খেয়ে উঠে আসা ত্যাড়া প্রকৃতির মানুষ&comma; তার উপর তাদের কোনো পরিবারের এমন কিছু পূর্বপুরুষীয় জোতজমি কি সহায়-সম্পদ নেই যা থেকে কোনো উপায়ে উদ্ধার হয় পূর্বপুরুষদের বিস্মৃতিঢাকা স্মৃতি। বিশ্বাসরা নিজেদের মুসলমানিত্ব নিয়ে যে বড় গরব করে&comma; তাও না। ধর্মের শাখা-প্রশাখা&comma; অলিগলির ইতিহাস-ঐতিহ্য এমন কি ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়েও তাদের এক বিন্দু মাথাব্যথা নেই। বিশ্বাসদের চালচলনে বরং হিন্দুয়ানির ছাপটা বেশ পষ্ট। আশ্বিন মাসের শেষ দিন তারা ঘটা করে গাস্বী উদযাপন করে। মনসা পূজোর রাতে ঘরের কানাছে মাটির সরায় দুধ-কলার ভোগ রাখে। সন্ধ্যায় ধূপ জ্বেলে ঘরে ঘরে সাঁজাল দেয়&comma; চেরাগ জ্বেলে ঘরে বাতি দেখায় আবার তেল খরচের ভয়ে তাড়াতাড়ি নিভায়েও ফেলে। নামাজ-রোজার চল যেমন তাদের মধ্যে কম&comma; তেমনি ধর্মীয় অন্যান্য অনুশাসনও ঢিলেঢালা। পর্দার বালাই তো বলতে গেলে নেই-ই। বয়স্থা মেয়েরা সব বাপের বাড়ি বেড়াতে এসে পাড়া কাঁপায়ে দাপায়ে বেড়ায়। কচি বৌয়েরা বয়ষ্কাদের শাসনে একটু সমঝে চললেও যেই হয় দুই বিয়োনি মাগী&comma; অমনি কেবল মাথার কাপড় ঠিক রেখে আর সব অঙ্গের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে হালটে বেরুতে শুরু করে।<&sol;p>&NewLine;<p>তা নানা কাজের দরকারে ও অছিলায় হালটে না বেরুলে এ এলাকার মেয়েদের চলেও না। ধানের মওসুমে উঠোনে ধান শুকোনো গেলেও বিচালি মেলতে যেতে হয় হালটে। চৈতালির দিনগুলোতে তো হালট-খলাটেই কাটাতে হয় দিনমান। ছোলা-কলাই-রাই-সর্ষে-তিল-মৈসনে-যব যত এ মৌসুমে ওঠে সবই উঠোনে মাড়াই করে এনে উড়োতে হয় এসে উদাসী হাওয়াময় হালটে। শীতের শেষে প্রকৃতিতে যখন বসন্ত লাগায় বাতাস ঘুরে গিয়ে দক্ষিণ থেকে বইতে শুরু করে&comma; যখন কুয়াশা আর শিশিরের ইতিহাস পুরনো হতে থাকে&comma; লোকেদের শরীর থেকে শীতনখরের নির্দয় আঁকিবুকি মিলিয়ে যেতে থাকে&comma; গাছেরা যখন দেহে নিষ্কলুষ পাতার নতুন পোশাক পরার স্বপ্নে বিভোর&comma; তখন কোনো এক রোদেলা দুপুরে কৃষকের স্বপ্নালু চোখ চকচকিয়ে ওঠে- ফসল তোলার সময় হয়েছে। আজকালের মধ্যেই মাঠে নামা চাই।<&sol;p>&NewLine;<p>ফসল ওঠে। উঠোনে পালা করে জমা হয় আঁটির পর আঁটি। সকালে আঁটি খুলে দিনমান রোদ দেয়ার পর বিকেলে শুরু হয় মলন। পাঁচ-সাতটা গরুর মুখে ঠুলি পরায়ে এক দড়িতে বেঁধে জুড়ে দেয়া হয় উঠোনের মধ্যিখানে পোঁতা &OpenCurlyQuote;মেয়ের খুঁটি’র সাথে। হতাশ গরুর দল পাঁচনের ঘা আর লেজমুড়া খেয়ে হাঁটতে শুরু করে। তাদের বৃত্তাকার হাঁটনে বীজেরা আলগা হয়ে ঝরে পড়ে আর তৃণ-গুল্মগুলো দলাই-মলাই চেহারা নিয়ে নির্বিবাদ পড়ে থাকে। মলন শেষ হলে কৃষক গরু সরিয়ে নেয়। এবারে কাজ কিষানীর। মেয়েরা এসে খড়-কাকচা এমন কৌশলে সরায় যাতে শুধু খোসা আলগা বীজগুলো ধুলো-ভ‚ষিতে মাখামাখি হয়ে পড়ে থাকে মাটিতে। এ থেকে বীজের দানা আলাদা করতে দরকার হয় ঝাড়ন। তা কুলোয় করে ফসল ঝাড়ার কাজটা সহজ নয় মোটেই। এ কাজে মেহনত যেমন&comma; সময়ও লাগে তেমন। কিষানীরা তাই প্রকৃতির আশির্বাদ বাসন্তী দখিন হাওয়ার সহযোগিতায় কাজটাকে সহজ করে ঝটপট ফসল ঘরে তোলে। ধামাভরা আঝাড়া ফসল গোবরলেপা হালটে ঢেলে সেগুলোকে কুলোয় তুলে ধীরে ধীরে বাতাসে ছাড়া হয়। হু-হু করে ধেয়ে চলা বায়ু তুষগুলোকে সরায়ে নেয় দূরে আর ভারি দানাগুলো ঝরঝরায়ে ঝরে পড়ে ঠিক কিষানীর পদমূলে। এ কাজে মেয়েরা যখন দুই হাতে কুলো ধরে সামনে নাক বরাবর তুলে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকে তখন তাদের খোলা দুই বাহুসহ গলা-পিঠের অনেকখানি দেখা যায়। যদিও তাদের মাথার কাপড় ঠিক রাখার জোর চেষ্টা থাকে&comma; তবু কি উদ্দাম ঘূর্ণিবায়ুর ঝাপটায় তা মাঝে মাঝে খুলে যায় না&quest; এমন যে বিশ্বাস বংশ তারাই কিনা মিদ্দাদের মনে করে ছোটজাত&comma; অর্থাৎ কিনা আতরাফ মুসলমান&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>সেই &OpenCurlyQuote;আতরাফ’ মিদ্দা বাড়ির এক মেয়ের আজ বিয়ে। বিয়ে হচ্ছে কলমাকান্দার জমিদার সৈয়দ আলী আশরাফ দেওয়ান এর পুত্র সৈয়দ আলী আফজাল দেওয়ান এর সাথে। পাত্র উচ্চবংশীয়&comma; তাতে সুপুরুষ&comma; আবার কলকাতা থেকে কী একটা নাকি দুটো পাশও দিয়েছে&excl; কাজেই বর দেখতে গাঁয়ের মেয়ে-মরদ সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে- এ তো স্বাভাবিক। আর খালি কি বর&quest; এমন পয়মানাও কি এ তল্লাটের কেউ দেখেছে&quest; ইয়া বড় বড় টিনের ফুলকাটা বাক্স ভরে এসেছে রকমারি সব জিনিস। কনের মা-চাচী-ফুপু-খালা-নানী-দাদীদের জন্য ঢাকাই শাড়ি&comma; ভাবী-বোনদের জন্য বেনারসী-বালুচরী। মিদ্দাবাড়ির মেয়েরা এসব শাড়ি হয়তো কখনো চোখে দেখেছে&comma; কানে শুনেছে জলে ভাসা সাবানের নামও। কিন্তু বিলেতি জ্যাকেট&comma; সেমিজ&comma; হিলজুতো&comma; মলমল দোপাট্টা যে তাদের কাছে অভাবিত বস্তু&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>বরযাত্রায় পালকি চেপে যে সৈয়দপুরিরা এসেছেন তাদের দলে কিছু কোলকেতে নারী-পুরুষও আছে। এ বাড়ির মেয়েদের সাজ-পোশাক দেখে কোলকেতে মেয়েরা নাক কুঁচকোয়। বিয়ে বাড়িতে ভীড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বাড়ির ভীড় দেখে মনে হচ্ছে যেন যতসব হাঘরে হাভাতে মানুষের দল বায়োস্কোপ দেখার আনন্দে বিভোর হয়ে ড্যাবডেবে চকচকে চোখে চেয়ে আছে।<&sol;p>&NewLine;<p>এ অঞ্চলের গ্রামগুলোয় বরযাত্রায় মেয়েমানুষ যাওয়ার চল নেই। বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান সাধারণত হয় রাত্রিকালে। কখনো কখনো বরযাত্রী আসতে রাত পেরোয়ে ভোর হয়। দূর কোনো গ্রাম থেকে আধেক রাতে পায়ে হেঁটে রওনা করলে মাঠ-ঘাট বন-বাদাড় পারায়ে পৌঁছাতে ভোর হওয়ারই কথা। অবস্থাপন্ন ঘরের বর হয়তো পালকি চেপে কি ঘোড়ায় চড়ে যাত্রা করলো&comma; কিন্তু তার শ’খানেক সঙ্গীর জন্য কোথায় মেলে অত পালকি-কাহার-ঘোড়া-সহিস&quest; কাজেই ঘোড়ায় চড়া বরও খুট খুট করে হেঁটে চলে বরযাত্রী দলের সাথে। এমন যাত্রায় অবলা মেয়েমানুষ অচলা বলেই শুধু নয়&comma; আরো যে কারণে মেয়েরা কখনো বরযাত্রায় শামিল হতে পারে না তা হয় তো এই যে&comma; পুরুষ মহলের পছন্দে ও সিদ্ধান্তে যে বিবাহ অনুষ্ঠান&comma; তাতে মেয়েদের ভ‚মিকা ঐ গালগল্প&comma; স্ত্রী আচার&comma; বরণ&comma; রঙ্গ-রসিকতা আর ক‚টকচালের। তা কনের বাড়ির মেয়েলি আচার কনের আত্মীয়ারাই সম্পন্ন করে। বরের বাড়ির মেয়েরা বৌ বরণের পর বৌয়েরে নিয়ে পড়ে। বেচারী কচি বৌ&excl; দুরু দুরু বুকে তারে কত পরীক্ষাই না দিতে হয়&excl; সেসব সম্ভাব্য পরীক্ষার দু-চারটে নমুনা দাদী-নানী-খালা-ফুপুরা যে যার অভিজ্ঞতা থেকে বয়ান করে কনেকে রাতারাতি প্রত্যুতপন্নমতি করে তোলার প্রয়াস করে বিয়ের পিঁড়িতে বসাবার আগে।<&sol;p>&NewLine;<p>মিদ্দাবাড়ির কনে ফয়জুন্নেছার চারপাশে ভীড় করে যারা বিস্ময়ভরা চোখে পয়মানা দেখছিল আর ফয়জুর সৌভাগ্যের বহর মাপছিল তাদেরই কেউ কেউ আবার নানা অনিশ্চয়তার আশঙ্কা তার মগজে পুরে দিচ্ছিল। যে ঘরে ফয়জু পড়লো সে ঘর তারা না দেখলেও তার শান-শওকত বুঝতে তাদের বাকি নেই। সৈয়দ বাড়ির মেয়েরা যেসব গয়না-গাঁটি পরে এসেছে&comma; যেমন ছাঁদে চুল বেঁধেছে&comma; কাপড় পড়েছে&comma; তা অনুকরণ করাও কি চাট্টিখানি কথা&excl; আর কে কোথায় শুনছে বাপু যে মেয়ে মানুষ মোজা-জুতো পায়ে খটখটায়ে হাঁটে&comma; পালকি চড়ে চলন্তে যায়&comma; আবার বয়স্থা মেয়েদের পরনে ব্লাউজ&sol;সেমিজ না থাকলে নাক সিঁটকায়&quest; সৈয়দবাড়ির কোলকেতে মেয়েগুলো বেপর্দা নাকি পর্দানশীন তা-ই তো বুঝে উঠতে পারে না মিদ্দা বাড়ির মেয়েরা। অথচ মিদ্দাবাড়ির খাটো কাপড় পরা&comma; মাথায় ঘোমটা টানা&comma; নগ্নবাহুর মেয়েগুলোরে সৈয়দ ঝি-গিন্নীরা যে বেলাজ ঠাউরে ভ্রæ কুঁচকে&comma; মুখ ফিরায়ে হাসি লুকায়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে&comma; মিদ্দা বাড়ির বোকাসোকা ঘোর গেঁয়ো মেয়েগুলোও তা ঠিক ধরতে পারে।<&sol;p>&NewLine;<p>ফয়জুকে সাজাতে বসেছিল হিরণবালা।<&sol;p>&NewLine;<p>গালে-গলায় সুগন্ধী বিলেতি পাউডার তুলির মায়াবী পরশে মিলায়ে দিতে দিতে নানা ভাবনা ভাবছিল হিরণ। কনে সাজাতে জানত বটে তার সেজ চাচী। সেজ চাচীর বাপের দেশ মুর্শিদাবাদ না মালদহ কোথায়- সেই দেশে বিয়ের কনেরে কাঁচা হলুদ আর দুধের সর বাটা দিয়ে নাওয়ানো হয় টানা সাতদিন। তারপর বিয়ের দিনে কনের হলুদ-কোমল-মাখন মুখে একটুখানি হিমানী ঘষে কপালে শ্বেতচন্দনের নকশা আঁকলেই নাকি দেবী ল²à§€à¦° রূপ ফুটে ওঠে। হিরণের বাপের দেশে মুসলমানের ঘরে চন্দনের চল নেই। আর এ গাঁয়ের মানুষ তো মনে হয় চন্দন চোখেই দেখেনি। তবু হিরণের সাধ জাগে- কপাল জোড়া শ্বেত চন্দনের নকশা&comma; তার নিচে জোড়া ভুরুর তলায় একজোড়া কাজল টানা আয়ত চোখের নত দৃষ্টি&comma; পাশে এক শ্যামল-দীঘল-উষ্ণ পুরুষ- তার হাতে হাত&&num;8230&semi; আরে ধুর&excl; ঐ পুরুষটাতো তার খুব চেনা&comma; খুব আপন। ধুস&excl; এখনো কি সে&&num;8230&semi;।<&sol;p>&NewLine;<p>আপন মনে লাজে লাল হিরণবালা দেহ-মনে হঠাৎই অনুভব করে এক অন্যরকম পুলক। ইস&excl; ভাগ্যিস কেউ মনের ভেতরটা দেখতে পারে না। পারলে কী শরমই না পেত সে&excl; খুব কাছের মানুষ&comma; এই ধরো তার সোয়ামিই যদি জানতে পারতো যে হিরণবালা মনে মনে&&num;8230&semi;ছিঃ&excl; দুরন্ত লজ্জার কাঁপনেই কিনা হিরণবালার হাতটা একটু কেঁপে কনের চোখের কাজল সামান্য স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি হিরণ তা মুছে দিতে রুপাল খোঁজে। রুমাল কিংবা একটা পরিষ্কার নরম সুতি কাপড়&&num;8230&semi; কিন্তু এ পোড়ার মিদ্দাবাড়ি তা কি সহজে মেলে&quest; কে যেন নিয়ে এলো একখান খরখরে নতুন গামছা&comma; বোধহয় কনের হলুদের গোসলের জন্য কিনেছিল তার বাপ কিংবা চাচা। সেই গামছার ঘষা লেগে কনের চোখের কোলের চামড়া উঠে আসলেও উঠতে চায় না একগুঁয়ে কাজল। হঠাৎ এক ঝামটা। কে একজন তার হাতটা সরায়ে দিতে দিতে বলে&comma; কে গা তুমি বাপু&quest; কনে কি কোনদিন সাজিয়েছ যে আজ আগ বাড়িয়ে সাজাতে বসলে বড়&quest; অমন রগড়ে রগড়ে কাজল তুলে আমার পয়মন্তীর চোখ যে গেলে দিচ্ছ গা&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>যার মুখ থেকে শূলের মতন কথাগুলো আসে তিনি নাকি সম্পর্কে ফয়জুর নানী শাশুড়ি। নিবাস তার বাঁকুড়া না চব্বিশ পরগনা কোথায়। সেটা নাকি আবার এই বাঙ্গাল মুলুকে না&comma; পশ্চিমবঙ্গে। বঙ্গভঙ্গ রদ হলে কী হয়&comma; ভাঙ্গা কাঁচের মতন এটাও নাকি আর জোড়া লাগবে না। ওপাড়ার সলিম হাজী&comma; দাদীশাশুড়ির ভাইপো হওয়ার সুবাদে সম্পর্কে যে হিরণের চাচাশ্বশুর&comma; তিনি বেড়াতে আসলে হিরণের শ্বশুরের সাথে সেসব কথাই আলোচনা হয়। তা হিরণের শ্বশুর তো চুপচাপ শুনতে থাকা মানুষ। এমনিতেই সংসারের দরকারি দশকথার জবাবে এক &OpenCurlyQuote;হুঁ’ এর বেশি কিছু বলে না&comma; তো সেই মানুষ কিনা কথার পিঠে কথা বলে তাল যোগাবে সলিম হাজির বক্তৃতার&excl; বকবক যা করার সলিম হাজি তা একতরফাই করে। আর কী সেসব কথা&excl; এই যে মহাযুদ্ধ লাগলো তাতে কোন্&quest; দ্যাশ কোন্&quest; পক্ষে&comma; কোন্&quest; দ্যাশের নেতা ভাষণে কোন্&quest; দ্যাশেরে ধমকায়&comma; ইংরেজগের মনে কী আছে&comma; হিন্দুস্তানের কত সৈন্য মেসোপটেমিয়া না কহানে কহানে অকাতরে à¦®à¦°à¦›à§‡Ñ à¦à¦¸à¦¬ নিয়ে চাচামিঞা মুখে তুবড়ি ছোটাতে পারে।<&sol;p>&NewLine;<p>চাচামিঞার মুখেই হিরণ শুনেছে ইংরেজদের গল্প। সেই কোন্&quest; সাগরের ওপারে কোন্&quest; দ্যাশ&comma; বিলাত না ইংল্যান্ড না কী জানি তার নাম। সেখানকার মানুষেরা সব ইয়া বড়সড়&comma; দুধের বরণ তাগের গায়ের&comma; কুষ্টার আঁশের মতন রং তাগের চুলের&comma; আর চোখ নাকি বিলাইয়ের নাহাল। ঐ মানুষেরা নাকি এই দ্যাশ&comma; আরো দূর দূর কত দ্যাশ&comma; তামাম ভারতবর্ষ শাসন করে। শাসন কী&comma; আর ভারতবর্ষই বা কী&comma; তা আগে ধারণা করতে পারত না হিরণ। শাসন বলতে সে বুঝতো তার স্বামী আর শাশুড়ি তার সাথে যে ব্যবহার করে সেটা। সলিম চাচার মুখে নানা গল্প শুনে সে অবশ্য এখন ব্যাপারটা বুঝতে পারে। কিন্তু ধারণা করতে পারে না ভারতবর্ষের ব্যাপ্তি। কত বড় সেটা&comma; কত বড়&quest; পূবে তার বাপের দ্যাশ মধুমতি পারায়ে আরো নাকি কত কত নদী-পাহাড় ছাড়ায়েও আছে ভারত। আবার পশ্চিমে নাকি এত এত এত দূ&&num;8230&semi;উ&&num;8230&semi;র&&num;8230&semi;&comma; সেই কোন্&quest; কাবুল মুল্লুক পর্যন্ত ভারত। এর মাঝে আছে কত কত পাহাড়-পর্বত&comma; মরু-নদী-সাগর। সাগর নাকি হাজার হাজার নদীর চাইতেও বড়। কত বড় তা&comma; কত বড়&&num;8230&semi;&semi; জাহাজে করে এপার থেকে ওপারে যাতিই নাকি লাগে কত দিন&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>বনগ্রামের কাশীনাথ চক্কোত্তি না কার ছাওয়াল নাকি গিছিলো। তারপর কত বছর বাদে ফিরে আসার পর তারে নিয়ে কী কাণ্ড&excl; মা গো মা&comma; জাতে ওঠার জন্যি অত ন্যাকাপড়া করা মানুষটারে নাকি শ্যাষে গোবর খাতি হইছে&excl; আবার ধরো পাহাড়&comma; সেও এক আচানক ব্যাপার। এত উঁচো&comma; এত্তো উঁচো&&num;8230&semi;তুমি খায়ে না খায়ে উঠপা তো উঠতিই থাকপা। কয়দিন ধরে উঠেও তুমি তার আগায় না পৌঁছাতি পারবা। চাচা মিঞা যেভাবে সব বিত্তান্ত কয় তাতে মনে হয় সব সে নিজির চোক্ষি দেহিছে। হিরণের কি মন চায় একবারের তরে হলিও সেসব দ্যাহে&quest; ধুর&excl; তাই বুঝি হয়&quest; মাইয়েমানুষ কবে পুরুষির নাহাল&&num;8230&semi;<&sol;p>&NewLine;<p>হ্যা গা&comma; তুমি কি শুনতে পাও না&quest; বলি&comma; কনে সাজাতে না জানলে বড় মুখ করে সাজাতে বসেছ কেন গা&quest; এই কি তোমার সাজের ছিরি&quest; জবাব খুঁজে না পাওয়া হিরণ যখন অধোমুখকে আরো অধঃ করে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম তখন ভীড়ের ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো&comma; এ বৌ আমাগার মিঞাবাড়ির। দাওয়াতে আইছে। মিঞারা মিদ্দারা পুরোনো কুটুম। মধুমতির ক‚লি উজানগাঁওয়ে এ বৌয়ের নাইওর ছিলো।<br &sol;>&NewLine;ছিলো&comma; একন নেই&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>গাঁও ভাইঙ্গে গেছে গো নানী। এহন ওর চাচারা চরে বাড়ি বানাইছে।<br &sol;>&NewLine;ওহ্&excl; নদীভাঙ্গা ঘরের ঝি&quest; তাই তো বলি&comma; হাঘর নাহলে কি আর&&num;8230&semi;<br &sol;>&NewLine;আঃ নানী&excl; কী বলছো এসব&excl; সুন্দরমুখে পরিপাটি সাজ করা একটা মেয়ে মৃদুস্বরে ধমকে ওঠে।<br &sol;>&NewLine;বেশি পাকামি করিসনে তহুরা। লিকাপড়া শিকে তুমি তো মেমসাহেব অইচো। ইকানে এই গেঁয়ো বৌয়ের পক্ষ নিচ্ছ যে বড়&quest;<br &sol;>&NewLine;পক্ষ নিচ্ছি না নানী। তুমি শুধু শুধু বেচারীকে বকছ। ওর কী দোষ&quest; সাজাতে গেলে অমন একটু-আধটু&&num;8230&semi;&period;&period;<br &sol;>&NewLine;দ্যাক খুকী দ্যাক। তোর মেয়ের কতাগুলিন শোন। ফিরিঙ্গি ইশকুলি পাঠায়ে কেমন বেহায়া বানাইছিস দ্যাক।<br &sol;>&NewLine;রাইবাঘিনী গরলভাষিণী নানীর শ্লেষবাক্য হঠাৎ থমকে যায় এক মন্দ্র স্বরের হুঙ্কারে।<&sol;p>&NewLine;<p>&OpenCurlyQuote;উঠে আয়।’ শরাফতের আহ্বান।<br &sol;>&NewLine;স্ত্রীর প্রতি তার এ আদেশ এত স্পষ্ট ও জোরালো যে তা কানে না ঢোকার মতন বধির সেখানে কেউ নয়। তবু যেন মেয়েরা তা বুঝতে পারে না&comma; বিশেষ করে কোলকেতে অতিথিরা। তারা কিছুক্ষণ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকলে নানীই প্রথম কথা বলে&comma; এ কুতাকার মিনসে গো&excl; আদব নেই&comma; লেহাজ নেই&comma; অনুমতির বালাই নেই&comma; সোজা মেয়েছেলের ঘরে এসে হাজির&excl;&excl; শরমের মাতা খাইচে নাকি গা&quest;<br &sol;>&NewLine;শরাফতের এমন হঠাৎ আবির্ভাবে বিব্রত মিদ্দাবাড়ির মেয়েরা তাদের চ্যুত ঘোমটা দ্রæà¦¤ হাতে সংস্থাপন করতে ব্যস্ত হয়। নতমুখী হিরণবালা তার স্বামীর পিছু পিছু বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়।<&sol;p>&NewLine;<p>&OpenCurlyQuote;একটু দাঁড়াও।’ একটা মিনতিভরা মিষ্টি কণ্ঠ। হিরণবালা থমকে যায়।<br &sol;>&NewLine;সেই সুন্দর মুখের মেয়েটা এগিয়ে এসে হিরণের হাত ধরে। তারপর একটুও লজ্জা না পেয়ে হিরণের স্বামীর চোখে সোজা তাকিয়ে বলে&comma; আপনি বাইরে যান। ও যাচ্ছে।<br &sol;>&NewLine;বাড়ি ফেরার পথে শরাফত স্ত্রীর সাথে একটা কথাও কয় না। শ্যামল মুখ তার রাগে কি ক্ষোভে কি কী এক বোধে কামারশালার কয়লার মতন গনগনে। &lpar;চলবে&rpar;<br &sol;>&NewLine;hamonim79&commat;gmail&period;com<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version