অনলাইন ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরীর স্ট্যাটাস প্রকাশ করা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের একটি আবেদনের পক্ষে রায় দিয়েছে কানাডার ফেডারেল কোর্ট। কোর্টের বিচারক ও’রেইলি গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এই রায় দেন।

রায়ে তিনি বলেন, ’আমি আবেদনটি জুডিশিয়াল রিভিউ করার জন্য সম্মতি দিলাম।’

এ রায়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কানাডার কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে এবং তার স্ট্যাটাস প্রকাশে যে বাধাগুলো ছিল সেগুলো দূর হয়েছে।’
আইন মন্ত্রী আরও জানান, আমরা কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর কাছে আগেও আবেদন করেছিলাম এবং এখন আবার করবো যাতে করে তারা নুর চৌধুরির স্ট্যাটাস প্রকাশ করে ।
কবে নাগাদ নতুন আবেদন করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই।’

প্রেক্ষাপট
১৯৯৬ সালে নুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী কানাডাতে পর্যটক হিসাবে প্রবেশ করেন এবং পরে তারা উদ্বাস্তু সুরক্ষার জন্য আবেদন করেন।
এর আগে ১৯৯৮ সালে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় অন্য আসামিদের সঙ্গে নুর চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং আদালত তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে।
এদিকে, মারাত্মক এই অপরাধ আমলে নিয়ে ২০০২ সালে কানাডার কোর্ট নুর চৌধুরী দম্পতির করা উদ্বাস্তু সুরক্ষার আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে। এর বিরুদ্ধে আপিল করলেও ২০০৬ সালে ঘোষিত রায়ে হেরে যান নুর চৌধুরী ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে নুর চৌধুরী প্রি-রিমোভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট আবেদন করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে। এটি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে যেন কানাডা থেকে বহিষ্কার করা না হয়।
২০১০ সাল থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কানাডার সঙ্গে আলোচনা করছে।
২০১৮ সালে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে বাংলাদেশ একটি চিঠি দিয়ে নুর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন দুইদেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় চুক্তি নেই। এরপর এ চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিলে কানাডা সরকার পিছিয়ে আসে।

পরে ২০১৮ সালের জুন মাসে কানাডার ফেডারেল কোর্টে এ বিষয়ে একটি মামলা করে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত একটি শুনানি গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর গতকাল এ রায় ঘোষণা করে দেশটির এই আদালত।
কানাডার কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ’নুর চৌধুরীর স্ট্যাটাস প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এখন জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন করেছে। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের আবেদন গ্রহণ করা উচিত।’

চারটি ইস্যু
কোর্ট চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রায় প্রদান করেছে এবং বিষয়গুলো হচ্ছে ’জুডিশিয়াল রিভিউ এর আবেদন কি অপরিপক্ক?’; ’এটি কি বিচারযোগ্য?’; ’কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের সিদ্ধান্ত কি অবিবেচনাপ্রসূত?’ এবং ’বাংলাদেশের জমাকৃত দলিলাদিও আংশিক কি সাংঘর্ষিক?’

এর সবগুলো বিষয়ে কোর্ট কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল ও নুর চৌধুরীর যুক্তিতর্কের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং বাংলাদেশের যুক্তি-তর্ককে সমর্থন করেছেন।