
আগামী ২ জুন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনে স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এনডিপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ডলি বেগম। ডলি বেগম ২০১৮ সালের জুন মাসে অন্টারিও আইনসভার নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এবং কানাডার যেকোনো স্তরে নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম কানাডিয়ান। ডলি বেগম টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। কুইন্স পার্কে ডলি নাগরিকত্ব, বিদেশী প্রশংসাপত্র এবং অভিবাসন পরিষেবাগুলির জন্য সরকারি বিরোধী সমালোচক।
ডলি প্রদেশ-ব্যাপী “কিপ হাইড্রো পাবলিক” প্রচারণার প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন যা সফলভাবে টরন্টো হাইড্রো এবং ওয়াসাগা ডিস্ট্রিবিউশনের বেসরকারিকরণ বন্ধ করে দেয়। তিনি স্কারবোরো হেলথ কোয়ালিশনের প্রাক্তন কো-চেয়ার এবং ওয়ার্ডেন উডস কমিউনিটি সেন্টারের ভাইস-চেয়ার, যেখানে তিনি স্কারবোরোর মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।কুইন্স পার্কের লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে রাইডিংয়ের সকল সমস্যা জোরালো কণ্ঠে তুলে ধরা ও সমাধান কল্পে একাগ্রচিত্তে কাজ আদায় করে নিতে “ডলি বেগম” এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের নাম।
নির্বাচনে আসা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক পরিকল্পনা, নির্বাচনী প্রচারণা, ইত্যাদি বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল দুপুর ১ ঘটিকায় কিংস্টনে স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্টের এনডিপির নির্বাচনী অফিসে কানাডার সাপ্তাহিক বাংলা কাগজের সাথে তিনি একটি নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। বাংলা কাগজের প্রধান সম্পাদক এম. আর. জাহাঙ্গীরকে সাথে নিয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সহযোগী সম্পাদক সুহেল আহমদ। নিম্নে সাক্ষাৎকারটি পাঠকের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
বাংলা কাগজ: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
ডলি বেগম: ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা?
বাংলা কাগজ: আমরাও ভালো আছি, জিজ্ঞেস করার জন্য ধন্যবাদ। সাক্ষাৎকারটি কি শুরু করতে পারি?
ডলি বেগম: জী, প্লিজ।
বাংলা কাগজ: ধন্যবাদ। প্রথমে আপনি “এনডিপি” তে যোগদানের কারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলুন প্লিজ।
ডলি বেগম: ধন্যবাদ, উত্তরটি অনেক লম্বা, অতি সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে বিষয়টি হবে এই যে, আমাদের কমিউনিটির চাহিদা, সাপোর্ট, আমাদের ফার্স্ট কিংবা সেকেন্ড জেনেরেশনের পরিবারের সন্তানেরা যারা বিভিন্ন স্কুলে আছে সেই সব পরিবার বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে, তাদের সেই সংগ্রাম এবং মৌলিক যেসব চাহিদা রয়েছে তা নিয়ে কাজ করা আমার ইচ্ছে। এসবে জেক লিটেন আমাকে অনেক ইন্সপায়ার করেছেন। উনি যেভাবে ইমিগ্রান্ট ফ্যামিলিগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, লোকাল কমিউনিটির সমস্যা সমূহ তুলে ধরেছিলেন, তাঁর সেই কর্মযজ্ঞগুলো আমাকে এনডিপিতে যোগদানে অনুপ্রাণিত করে। আর তাই আমি এনডিপির রাইডিংয়ের এসোসিয়েশনে সম্পৃক্ত হই।
তাছাড়া আমার একান্ত কিছু ভ্যালু আছে যেমন মানুষের সেবা করে, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এমন কমিউনিটি গঠন করা যে কমিউনিটি মনে করবে যে তারা এখানকার।
কনজেরভেটিভে দলের পলিসিতে অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো নানান রকম অধিকার বঞ্চিত বোধ করে। যা এনডিপিতে নেই।
আমি এখানেই বোরো হয়েছি, এখানেই লেখাপড়া করেছি, এখানেই ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছি,আর গত ১৫ বছর লিবারেল অনেক প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া, শিক্ষা ব্যবস্থায় লিবারেলদের অব্যবস্থাপনা, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া এসব আমাকে ভাবিয়ে তুলে। তাই আমার চিন্তাধারা, আমার ভ্যালু ও আমার স্বপ্ন পূরণের সাথে সামঞ্জস্য বা সন্ধি স্থাপন করে এমন কিছুকেই আমি খোঁজছিলাম। আমি এমন কিছু খুঁজছিলাম যা নতুন আইডিয়া দেবে প্রভিন্সের জনগণের জন্য, নতুন আশা জাগাবে সবার হৃদয়ে। আর এসবের খোঁজ পেলাম আমি এনডিপির মধ্যে। সেজন্যই আমি এনডিপির একজন হয়ে গেলাম।
বাংলা কাগজ: এলাকার চার বছরের প্রতিনিধি হিসেবে কী মনে করেন, এমন কিছু সেক্টর বা বিষয় কি রয়েছে যেখানে আপনি কাজ করতে পারেননি? থাকলে সেগুলো কী কী?
ডলি বেগম: রাইডিং কিংবা কমিউনিটির প্রচুর পরিমাণ কাজ রয়েছে যা আমাদের করতে হয়।আমার একটা প্রায়োরিটি ছিল যে, কমিউনিটির সকল প্রকার মানুষের কাছে আমার সর্বদা একসেস থাকবে।
কমিউনিটির লোকাল প্রতিনিধি হিসেবে কমিউনিটিরসমূহ সমস্যাবলী বা যেকোন ইস্যু সমাধান কল্পে আমি তা পার্লামেন্টে তুলে ধরবো। এবং আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি এ কাজটি আমি যথাযতভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের এই কমিউনিটিতে যা এর আগে কখনও হয়নি।
পেন্ডামিকের সময় লং টার্ম কেয়ার কিংবা হোম কেয়ার-এ বয়স্কদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত কল্পে অধিক ফোকাস দিয়ে বিশেষ মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রযোজ্য সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। তাছাড়া, পিএসডাব্লিও ও নার্সদের সর্বোচ্চ সাপোর্ট নিশ্চিত করেছি।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রম কে মনে করা হয় সবচেয়ে ভালো সমাধান, কিন্তু আসলে তা নয়।আমরা যদি বাসায় হোম কেয়ারের ব্যবস্থা করতে পারি, সেটা হবে অধিক ভালো সমাধান।এক্ষত্রে পরিবারের সাথে সানন্দে ও স্বাচ্ছন্দে বয়স্করা জীপন যাপন করতে পারেন। যদি আমরা হোম কেয়ারের উন্নয়নের দিকে আরো অধিক নজর দেই, তাহলে বয়স্কদের কেয়ারের ব্যাপারে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে যাবো। এটা আমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রেখেছি, যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।
সিনিয়ারদের এথনিক্যালি এপ্রোপ্রিয়েট, কালচারালি এপ্রোপ্রিয়েট ব্যবস্থাপনা বর্তমানে জিরো, সেটাকে জিরো থেকে হান্ড্রেডে নিয়ে যেতে হবে।সিনিয়র কেয়ার-এ লাঞ্চ, ব্রেকফাস্ট, ডিনার, স্বীয় প্রার্থনা ইত্যাদি ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন ভিন্ন কালচারের সিনিয়র দের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক এথনিকের সিনিয়রেরা এসব কেয়ারে টিকতে পারেন না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি কমিউনিটি বেইসড সিনিয়র কেয়ার তৈরী করা হয়, যেখানে এই কালচার অনুশীলনে সম্মান দেয়া হবে, সেই রকম সিনিয়র কেয়ার এস্টাবলিশ করতে কাজ করে যাচ্ছি।
তাছাড়া অধুনা রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা আমাদের রোড সেফটির বিষয়টাকে ভাবিয়ে তুলেছে। রোড সেইফটিতে অনেক কাজ করার এখনো বাকি। নির্দোষ পথচারীর অধিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কিছু ছোট ছোট আইন পরিবর্তন প্রয়োজন। যা কিছুটা প্রভিন্স ও কিছুটা সিটির আন্ডারে।
সুন্নাতুল জামাত মসজিদের সামনে মুসল্লিদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে রেডলাইট স্থাপন আমার রেস্পন্সিবিলিটির মধ্যে না থাকলেও আমি সিটির সাথে যোগাযোগ করে একরকম প্রেসার সৃষ্টি করে সকলের সহযোগিতায় রেডলাইটটি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।
আরো একটা বিষয় যেটা যদিও সিটির আন্ডারে তবুও আমি এই বিষয়টিতে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাবো। তা হচ্ছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সাবওয়ে স্টেশনের রেনোভেশন কমপ্লিট হওয়ার পরও সেই সাবওয়ে স্টেশনের এক সাইডে এলিভেটরের সুবিধা নেই। স্ট্রলার ব্যবহারকারী ও সিনিয়রদের ৩৩টি সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করার অসুবিধা লাগবে এলিভেটর স্থাপনে আমি কাজ করে যাচ্ছি, যা সিটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তাছাড়া, স্কুলে ছাত্রদের শিক্ষা উপকরণ, মিউজিক সংশ্লিষ্ট এবং আনুসাঙ্গিক সকল উপকরণ কমিউনিটির স্কুলগুলোতে সহজলভ্য করার নিশ্চয়তার উপর আমি অধিক নজর দেব।

বাংলা কাগজ: কী কী কারণে আপনি নিজেকে এই নির্বাচনী এলাকার সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী মনে করেন? আপনার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের বিপরীতে আপনি নিজেকে কিভাবে ভোটারের কাছে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবেন?
ডলি বেগম: এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি তার কমিউনিটিকে বুঝতে হবে। আমার এলাকায় কী হচ্ছে আমি যদি না জানি তাহলে আমি উক্ত এলাকাকে রিপ্রেসেন্ট করতে পারবোনা। মানুষের প্রব্লেম না বুঝলে জনপ্রতিনিধি সেটা নিয়ে কথা বলা কিংবা কাজ করা কিছুই পারবে না। আমি এই এলাকায় বড় হয়েছি, আমি দেখেছি আমার এলাকার মানুষেরা কিভাবে জীবন যাপন করছে, কিভাবে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে এগিয়ে চলছে, আমি তা খুবই ভালো করে অনুধাবন করি। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে আমি বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, হেলথ কেয়ারে কী কী সমস্যা হচ্ছে, লোকাল স্কুলগুলোতে কী কী সমস্যা হচ্ছে, লোকাল ফুড-নিউট্রিশনে কী কী সমস্যা হচ্ছে তা আমি নিজের চোখে দেখেছি, অনুধাবন করেছি। মিডল ক্লাসের পরিবারের সদস্য হিসেবে জীবনের সাথে যুদ্ধ করা মানুষদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং শিখেছি তাদের সমস্যা লাগবে কাজ করা। যা আমাকে গত চার বছরে পথ দেখিয়েছে সেইসব ক্ষেত্রে কাজ করার। আমি শুধু সমস্যা অনুধাবন করেছি তা নয়, পার্লামেন্টে কমিউনিটির একজন ভালো রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসেবে সমস্যাগুলোও সমাধানে কাজ করেছি। গত চর বছরে আমার কাজ সমূহ যার প্রমান।
করণাকালীন সময়ে অনেক ই.সি. যারা পেমেন্ট পাচ্ছিলেন না তাদের অধিকার বাস্তবায়নে আমি লড়াই করেছি।একজন বিরোধীদলের পার্লামেন্ট মেম্বার হয়েও আমি পার্লামেন্টে এক রকমের লড়াই করে সেসবের বাস্তবায়ন করেছি।
স¤প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনড প্রফেশনাল দের জন্য “বিল-৯৮” সফলতার সহিত পার্লামেন্টে পাশ করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আগত ট্রেইনড প্রফেশনাল যারা অনেক বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে এসেছেন। এখানে আসার পর তাঁরা আমাদের কমিউনিটিকে কন্ট্রিবিউট করতে সক্ষম হচ্ছেননা। যেমন: একজন ডাক্তার তিনি তার স্বীয় পেশায় কাজ করতে পারছেননা বা সুযোগ পাচ্ছেন না। “বিল-৯৮” ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনড প্রফেশনালদের সে সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। আমি আমাদের কমিউনিটির বিভিন্ন প্রফেশনালদের সাথে কথা বলে উনাদের ফিডব্যাক নিয়ে পার্লামেন্টে উপস্থাপিত বিলের ঘাটতির জায়গায় কমপ্লিমেন্ট দিয়েছি, আশা রাখি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার দেরও ইনক্লুড করা হয়ে যাবে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমার কমিউনিটির কী প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী কিভাবে এগোতে হবে, সমস্যার সমাধান করতে হবে তা বোঝার মতো আমার সেই জ্ঞান আছে।
বাংলা কাগজ: অন্টারিও প্রদেশ সহ কানাডার বিভিন্ন স্থানে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত জটিলতায় বাংলাদেশী সহ বিভিন্ন দেশের অনেকেই জর্জরিত। আপনি নির্বাচিত হলে তাদের সমস্যা সমাধানে কী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন? যদিও আমরা জানি যে ইমিগ্র্যাশন অ্যাফেয়ার্স টি ফেডারেল গভর্নমেন্টের রেস্পসিবিলিটি।
ডলি বেগম: সাধারণত প্রভিন্সিয়াল প্লাটফর্মে ইমিগ্র্যাশন সম্মন্ধে কিছু দেখবেন না। কিন্তু এবার আমাদের এনডিপির প্লাটফর্মে আপনারা ইমিগ্র্যাশন সম্পর্কে অনেক কিছুই পাবেন।কিভাবে আমরা ইমিগ্রান্ট কমিউনিটিকে সাপোর্ট করতে পারি ফেডারেল সরকার এর সঙ্গে একসাথে কাজ করতে পারি ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির সমস্যা লাঘবে ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে, এ নিয়ে আমাদের এনডিপি প্লাটফর্মে আমরা আলোচনা করেছি ও আমাদের কর্মযজ্ঞে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জব রিলেটেড নানান সমস্যায় আমি ফেডারেল গভর্নমেন্ট এর মিনিস্ট্রিতে একটি চিঠি লিখেছিলাম, যার ফলশ্রুতিতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জব রিলেটেড সমস্যাটির একটি সুরাহা হয়েছিল।
তাছাড়া, স্টুডেন্টদের ডাইরেক্ট স্ট্রিম (এস.ডি.এস.) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য আছে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো করা হয়নি। এ বিষয়টি আমি পার্লামেন্টে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছি। আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের দক্ষতার মূল্যায়ন দেয়ার জন্য কাজ করছি।
কোনো ইস্যুতে আমাদের কণ্ঠস্বর যদি আমরা সঠিক উচ্চতায় তুলে ধরতে পারি, আমি দেখছি আমরা সফলকাম হই।
কারা কানাডাতে ইমিগ্রান্ট হবে না হবে এটা হচ্ছে ফেডারেল ইস্যু। ইম্মিগ্রান্টদের সেটেলমেন্ট রিলেটেড অনেক বিষয় প্রভিন্সের হাতে রয়েছে।
শিক্ষা, ক্রেডেনশিয়াল রিকোগনিশন, হাউসিং ফেসিলিটিজ, এখানকার প্রপার এডুকেশন, হেলথ কেয়ার, ইংলিশ ভাষা দক্ষতা, জব সিকিউরিটি ও প্রটেকশন এসব বিষয়ে প্রভিন্সের সাপোর্ট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এসকল বিষয়ে আমি কাজ করে যাব। বিষয়গুলো নিয়ে এতদিন সেরকম আলোচনা পার্লামেন্ট পর্যন্ত উঠে আসেনি। কিন্তু এখন উঠে আসবে এবং ইম্মিগ্রান্টদের জন্য যে রকম “বিল-৯৮” এর বাস্তবায়ন হতে চলেছে, ঠিক তেমনি ইম্মিগ্রান্টদের জন্য আলোচ্য বিষয়গুলিরও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাবো।
আমাদের এখানে ইমিগ্র্যান্ট বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ এবং সংগঠনের সাথে বসেছি তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি তাদের সমস্যাগুলো। পাশাপাশি অন্য প্রভিন্সের একই পেশাজীবীদের সাথে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি ওরা কিভাবে সমাধান খুঁজে পেয়েছে, এবং সে অনুযায়ী আমরাও এগুচ্ছি। ইমিগ্রান্টদের দ্বারাই কানাডা এগিয়ে যাচ্ছে, তাই কানাডাকে এগিয়ে যেতে হলে ইমিগ্র্যান্ডদের কোনো অবস্থাতেই পেছনে রাখা যাবে না। সেই লক্ষ্যে আমাদের এনডিপি এবং আমি আপ্রাণ কাজ করে যাবো।
বাংলা কাগজ: নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এই পর্যন্ত ভোটারদের কাছ থেকে কী রকম সাড়া পাচ্ছেন?
ডলি বেগম: আমাদের বিশাল টিম অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রতিদিন। ডোর-টু-ডোর নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রচন্ড রকমের সাড়া পাচ্ছি। রাইডিংয়ের মানুষেরা আমাদের বিভিন্ন কাজ দেখেছে, আমাদের সকল কাজকর্মে মানুষেরা মুগ্ধ, খুবই খুশি। এবং সেজন্য তাঁরা আমাকেই চায় এই রাইডিংয়ে। সেদিন একটি এলাকায় দরজায় নক করতেই দরজা খুলে আমাকে বলছে, “তোমাকে এখানে এসে সময় নষ্ট করতে হবে না। আমরা তোমার সাথেই আছি, সময়টাকে অন্যত্র ব্যয় করো। তোমার-ই জয় হবে।” লোকজনের এহেন ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ ও আরও দ্বায়িত্বশীল করে তুলে। তাছাড়া বিভিন্ন অর্গানাইজেশন যেমন অন্টারিও সেকেন্ডারি স্কুল টিচার্স ফেডারেশন, টিটিসি ট্রানজিট ওয়ার্কার্স সহ আরো অনেক অর্গানাইজেশন ইতোমধ্যে আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছে যে, আমাকেই তাঁরা সমর্থন করবে। এভাবে প্রতিনিয়ত মুগ্ধকর সব সাড়া পাচ্ছি।
বাংলা কাগজ: নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ডলি বেগম : আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুবই আশাবাদী।
বাংলা কাগজ: নির্বাচনে জয়ী হলে আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী হবে?
ডলি বেগম: আমি চেষ্টা করবো যে, আমি যে সকল কাজ শুরু করেছি তা কন্টিনিউ করা। আর যে সকল কাজের কথা আমি বললাম, সেগুলো সম্পাদন করা। কমিউনিটিতে লোকাল রিপ্রেসেন্টেশন কিভাবে বাড়ানো যায়, অধিক একাউন্টেবল করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা। আমি চাই আমাদের কমিউনিটিতে আরও যারা পলিটিক্যালি ইনভল্ব হতে চায়, বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশন তাদেরকে আমি সাহায্য করবো ও ট্রেইন্ড করবো। যাতে তারা রাজনীতিতে আরো এগিয়ে যেতে পারে।
বাংলা কাগজ: ধরুন, কোনো কারণে নির্বাচনে জয়ী হতে পারলেন না সেক্ষেত্রে ভোটারের কাছে আপনার কমিটমেন্ট কি হতে পারে?
ডলি বেগম: কমিউনিটির জন্য আমার কমিটমেন্ট ২০১৮ সালের আমার প্রথম নির্বাচনের আগে যে রকম ছিল, আজও সেই একই রকম আছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে কিংবা না হলেও কমিউনিটির জন্য আমার একই রকম কমিটমেন্ট থাকবে। এটা আমার কমিউনিটি, আমি এখানেই বড় হয়েছি। এখানকার মানুষের জন্য কাজ করা আমার মূল লক্ষ্য। সেটা যে কোন অবস্থান থেকেই আমি করে যাবো। কিন্তু যেভাবে রেস্পন্স পাচ্ছি তাতে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।
বাংলা কাগজ: বাংলাকাগজের সম্মানিত পাঠক এবং আপনার রাইডিংয়ের ভোটারদের প্রতি আপনার কী মেসেজ?
ডলি বেগম: বাংলা কাগজের সকল সম্মানিত পাঠকেরা আমার স্বজন। আসন্ন ঈদে সকলের প্রতি আমার ঈদ শুভেচ্ছা। আমার রাইডিংয়ের বাহিরে আমার সকল স্বজনেরা দেখেছেন গত চার বছর আমরা অনেক মেহনত করেছি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, যখন যা দরকার, যেভাবে সম্ভব সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। স্মল বিসনেস, হাউসিং, ওয়ার্কার রাইটস ইস্যু সহ নানান ইস্যুতে অনেক সময় সমাধান বের করতে কাজ করেছি। আমি আপনাদের কমিউনিটির একজন, আমাদের সমস্যা সমাধানে কমিউনিটির কাজ করার জন্যে আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি। আমপোনাদের হয়ে, আপনাদের কথা কুইন্সপার্কে তুলে ধরার জন্য আমি আপনাদের সমর্থন, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সুদৃষ্টি একান্তভাবে কামনা করছি।আপনারা সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনারা আপনাদের পরিচিতজনকে যারা স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্ট -এর ভোটার আমাকে ভোট দেয়ার জন্য। সকলের প্রতি সালাম ও শুভেচ্ছা।
বাংলা কাগজ: আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে বাংলা কাগজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সফলতা কামনা করি।
ডলি বেগম: আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ।