অনলাইন ডেস্ক : সারা বিশ্বের মতো কানাডাতেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। করোনা মহামারির ধকল সামাল দিতে না দিতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এই মূল্যস্ফীতিতে নতুন রসদ যুগিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় সুদহার সমন্বয় করে চলেছে। কিন্তু এতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। কানাডায় নিত্যপন্যের দাম বেড়েই চলেছে এবং তা দ্রুতই বাড়ছে। তবে এই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বিরোধী রাজনীতিবিদেরা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন সেগুলো খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতিবিদেরা কখনও কখনও জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব অবাস্তব বক্তব্য দিয়ে থাকেন। পরিসংখ্যান কানাডা চলতি সপ্তাহের শুরুতে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবারের মুদ্রাস্ফীতি ৬.৭ শতাংশ বেশি। এটি ১৯৯১ সালের জানুয়ারির পর সিপিআইতে সবচেয়ে বড় উত্থান।

জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান এই ব্যয় বৃদ্ধি অনেক রাজনীতিবিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু তারা যা বলছে তা কি সব সত্যি? তাদের অনেকের বক্তব্য শুনলে মনে হয় যেন, ফেডারেল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই মুদ্রাস্ফীতি ঘটাচ্ছে। অথবা এই মুদ্রাস্ফীতির জন্য সরকারই দায়ী।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক অর্থ সমালোচক পিয়েরে পোলিভার বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিজনিত পরিস্থিতিকে তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি অংশ বানিয়েছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি দাবি করছেন, ট্রুডো সরকারের ভুল ব্যয় ও ট্যাক্স নীতি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পোলিভার সা¤প্রতিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলেছেন, ট্রুডো সরকারের বড় বড় প্রকল্পের ব্যয়, ঘাটতি এবং কর দেশের মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তার এই দাবি কি ঠিক আছে? এ বিষয়ে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ব্যাংক অব কানাডার সাবেক সহকারি প্রধান অর্থনীতিবিদ জাঁ পল লাম বলেন, সরকারি ব্যয় মূল্য বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে একটি। তবে এটি একটি গৌন কারণ। আমি মনে করি না যে এটি বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ, যদিও গত দুই বছরে এই খাতে পরিস্থিতির যথেষ্ট অবণতি হয়েছে।

তিনি বলেন, পোলিভার যেভাবে সরকারকে দোষারোপ করছেন তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। তিনি শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই এসব বলছেন।

অন্যদিকে ক্যালগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক পলিসির রিসার্চ ফেলো ট্রেভর টম্বে বলেছেন, সরকারি ব্যয় ও করনীতি মূল্যস্ফীতির একটি কারণ হতে পারে। কেননা আর্থিক নীতি মূল্যস্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খরচ ও করের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো মুদ্রাস্ফীতির সাথে খুব বেশি সম্পর্কযুক্ত নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়। তাই পোলিভারের দাবি আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি ঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, একটি দেশের সরকার কতটা খরচ করে তা আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বৈশ্বিক কারণে তেলের দাম বাড়লে বা কমলে সেখানে সরকারের কিছু করার থাকে না।

এনডিপি নেতা জগমিত সিং গত বুধবার ইনস্টাগ্রামে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সম্পর্কে কথা বলেছেন। তার দাবি সরকারি ভুল নীতির সাথে বড় বড় কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফার লোভে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, যখন নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে এটি ‘খুবশীর্ষে’ থাকা কিছু ব্যক্তির উপকার করে।

লাম বলেন, জগমিত সিং যে চিত্রটি এঁকেছেন তার কিছুটা সত্যতা রয়েছে। তবে এটিও পুুরোপুরি সঠিক চিত্র নয়। আমার মনে হয় মুদ্রাস্ফীতির ব্যাখ্যার জন্য তিনি একটু বেশি সরল পথ বেছে নিয়েছেন। মূলত মুদ্রাস্ফীতির জন্য বিশ্বব্যাপি পণ্য সরবরাহের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, মহামারির সময় গাড়ির যন্ত্রাংশের তীব্র ঘাটতি এই খাতের পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি খরচের বোঝা বহন করতে হয়েছে। সরকার সাধ্যমত ভর্তুকি দিয়েও গাড়ির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।

লাম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানি ও খাদ্যের দামকে প্রভাবিত করেছে। এ ধরনের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টাগুলো খুব একটা কাজে লাগে না। রাজনীতিবিদরা সরকারকে যত দোষারোপই করুক এগুলো আসলে খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়। সূত্র : সিবিসি