Home জাতীয় ভুটানে ১০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ

ভুটানে ১০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক : দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট-পিটিএ) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এটি কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি। গতকাল রবিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থ-বাণিজ্য মন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বেভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। গতকাল দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই দিনটিকেই দুই দেশ চুক্তি স্বাক্ষরের দিন হিসেবে বেছে নেয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই চুক্তির ফলে ভুটান তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য এবং ইলেক্ট্রনিক্সসহ ১০০টি বিভিন্ন বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে ফলমূলসহ ৩৪টি ভুটানের পণ্য বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে আরো পণ্য দুই দেশের তালিকায় সংযুক্ত করা হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের যাত্রা শুরু হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং সেদেশের রাজধানী থিম্পু থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান স্বাক্ষরিত পিটিএ পারস্পরিক স্বার্থের দিক দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুসংহত করবে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এবং ভুটান থেকে বিস্তৃত পণ্য একে অপরের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভুটানই প্রথম দেশ, যেটি একাত্তরে প্রথম আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজি এবং অর্থ-বাণিজ্য মন্ত্রী লোকনাথ শর্মা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত কুসাব রিনচেন কিউয়েনটিল অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ প্রান্তের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এবং ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একে এম শহিদুল করিম থিম্পু প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে উভয় প্রধানমন্ত্রী একযোগে একটি লোগো উম্মোচন করেন এবং পৃথক কেক কাটেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছরটি আশীর্বাদযুক্ত, কেননা আমরা আমাদের জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করছি এবং জিগমে সিংহে ওয়াংচুক-এরও ৪০তম জন্মবার্ষিকী। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের ৩য় রাজা এবং জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে, সমগ্র বাংলাদেশের হূদয়ে ভুটানের একটি বিশেষ অবস্থান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্থায়ী জায়গা রয়েছে। এসময় ১৯৭১ সালের এই দিনে ভুটানের স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনার স্মৃতিরোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘সেই দিনটি আমাদের পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। কাজেই ভুটান আমাদের হূদয়ে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।’

বাংলাদেশ ও ভুটানের যোগসূত্রকে ‘অত্যন্ত প্রাচীন’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ভুটানের পাথর ব্যবহারে লাভবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে ওষুধগুলো ভুটানের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখতে পারে।’ তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের চিলমারী বন্দরের উন্নয়ন করছি, নারায়ণগঞ্জের পানগাঁও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত। শুধু তাই নয়, আমাদের তিনটি বন্দর চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা ভুটান চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে অঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে এর উন্নয়ন করা হচ্ছে, যা ভুটানের জন্য উন্মুক্ত। তিনি ভুটানের অগ্রগতির জন্য এর ৪র্থ রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারির প্রভাব হ্রাস এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আগামী দিনে শক্তিশালী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং তার ভাষণে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ এবং বিএসএমএমইউতে প্রায় ১০ বছর অধ্যয়নকালীন বাংলাদেশে অবস্থানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশকে তার ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সবসময়ই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, কেননা বাংলাদেশ সবসময়ই আমার হূদয়ের খুব কাছাকাছি রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশও সবসময়ই ভুটানের পাশে থেকেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। তখন বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা লোপ পাবে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

যেসব পণ্যে মিলবে শুল্কমুক্ত সুবিধা :ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প, সিমেন্ট, চা, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী যেমন- জুস, কনডেন্সড মিল্ক, বিস্কুট, মিনারেল ওয়াটার, পাউরুটি, কৃষিজাতপণ্য আলু, প্রসাধনসামগ্রী, টয়লেট্রিজ পণ্যের মধ্যে সাবান ও শ্যাম্পু, শুঁটকি মাছ, প্লাইউড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এছাড়া জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, আন্ডারওয়্যার, বাচ্চাদের পোশাক, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম ডোর, কাঠের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফুটওয়্যার, ক্যাবলস, ঘড়ি, বেল্ট, মেটাল ও প্লাস্টিক ফার্নিচার ইত্যাদি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আর ভুটান থেকে বোল্ডার, জিপসাম, ডোলোমাইট, ফল ও জুস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন জ্যাম ও জেলি, মসলা, ফার্নিচারসহ অন্যান্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে।

Exit mobile version