অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারির সংক্রমণ প্রতিরোধে কুইবেক পুলিশের জারি করা কঠোর বিধি-নিষেধের প্রতিবাদে গত শনিবার মন্ট্রিলে বিক্ষোভ করেছে একদল লোক। এ সময় তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। তারা স্বাস্থ্যবিধির নামে কারফিউকালীন সতর্কতা জারির প্রতিবাদ এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার সুযোগ দানের দাবি জানায়। এছাড়া তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু এবং স্বাস্থ্যবিধি ভাঙ্গার সামান্য অজুহাতে পুলিশের জরিমানা করা বন্ধেরও দাবি জানায়।
বিক্ষোভকারিদের বিশাল দলটি মাইসোনেভ পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রদক্ষিণ করে ভিনু স্ট্রিট থেকে রোজমন্ট এবং বোরবনিয়ার এভিনিউর দিকে এগিয়ে যায়। এক সময় মিছিলটি প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা দখল করে নেয়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ফেডারেল পিপলস পার্টির নেতা মেক্সিম বানিয়ার বলেন, আমরা দেশের জন্য স্বাস্থ্যবিধির নামে আমাদের ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে আর খর্ব হতে দিতে চাই না। তিনি কারফিউতুল্য লকডাউন তুলে নেয়ার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, জনগণ এখন অনেক সচেতন ও দায়িত্বশীল, তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। তারা তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার ফিরে পেতে চায়।
মন্ট্রিল পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, বিক্ষোভ পুরোটাই শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে মুখোশ পরা ক্ষুদ্র একটি দল পুলিশের দিকে ককটেল ও ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে। এতে একজন পুলিশ অফিসার সামান্য আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় তারা চার জনকে আটক করেছে। এছাড়া বিক্ষোভের নামে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের দায়ে ২৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভের ফলে কয়েকটি কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচী ব্যাহত হয়েছে।
কুইবেকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান ডুবে এক টুইটার বার্তায় বলেন, আমরা যে কোন নাগরিকের আন্দোলনের অধিকারকে সম্মান জানাই, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কিছু করা ঠিক হয়নি।
বিক্ষোভের সমালোচনা করে ইউনিভার্সিটি দ্য কুইবেকের সোশাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রফেসর ক্রনি জেনড্রন বলেন, তাদের দাবি আদায়ের পথটি ঠিক নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া উপায় নেই। আর এর জন্য ঘরে থাকারও বিকল্প নেই।
মন্ট্রিলের মেয়রও এক টুইটার বার্তায় একই অভিমত ব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভ করার অধিকার সবার আছে, এ বিষয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে বর্তমানে আমাদেরকে অবশ্যই বিধি-নিষেধ মানতে হবে। আমরা চাই আগামী গ্রীষ্মকালটা আমাদের জন্য হোক স্বাভাবিক ও আনন্দময়।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বার্তায় বলেন, বিক্ষোভের নামে এ ধরনের জনসমাগম করোনা মহামারিকে আরও ছড়িয়ে দেবে। ফলে সরকার বিধি-নিষেধের সময়সীমা আরো বাড়াতে বাধ্য হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার কুইবেকে কোভিট-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ৫৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি এবং ১৫৯ জনকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। মহামারির শুরু থেকে সেখানে ১০ হাজার ৯৩৩ জন মারা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে রাত্রিকালীন কারফিউসহ কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আর এসব বিধি-নিষেধের প্রতিবাদেই বিক্ষোভকারীরা শনিবার রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া এন্টোনেলা সিকেরো নামের একজন বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এক বছর যাবত আমি ঘরে বসে আছি। এভাবে আর কতদিন? আমরা এবার মুক্তি চাই।
রাত্রিকালীন কারফিউর সমালোচনা করে আরেক জন বিক্ষোভকারী বলেন, কেন আমাকে রাত ৮ টার মধ্যে ঘরে ফিরতে হবে? কোভিড ভাইরাস কি রাত ৮ টার আগে সংক্রমিত হয় না, শুধু রাত ৮ টার পরেই হয়? সূত্র : সিবিসি