Home সাহিত্য মুক্তিযুদ্ধে একটি পরিবারের উদ্বাস্ত হওয়ার গল্প

মুক্তিযুদ্ধে একটি পরিবারের উদ্বাস্ত হওয়ার গল্প

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>রুমা বসু &colon;<&sol;strong> বাবার বিশ্বাস ছিলো আমাদের গ্রামে কিছু হবে না। এখানে সব ধর্মের মানুষরা ভাই ভাই হয়ে আছে&comma; তাই এ গাঁয়ে রাজাকার&comma; আলবদর বাহিনী গড়ে উঠবে না। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিচিত কিছু লোকের বেশ-বাস এর পরিবর্তন হতে শুরু করলো&comma; সাথে সাথে তাদের কথাবার্তাও।<&sol;p>&NewLine;<p>এর মধ্যে একজন সুহৃদ বাবাকে এসে খবর দিলো যে গৈলাতে পাকিস্তানী মিলিটারী দু’এক দিনের মধ্যেই ঢুকে পরবে&comma; সেজন্য রাজাকার বাহিনী যে লিস্ট বানিয়েছে তার মধ্যে বাবার নামও আছে। তাই আজ রাতের মধ্যেই বাড়ি ছাড়লে রক্ষা পেতে পারেন। তখন সন্ধ্যা হয় হয়&comma; কি করা হবে মার সাথে পরামর্শ করে&comma; সে রাতেই মামা বাড়ি রাজিহারে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। তখন বর্ষাকাল ছিলো&comma; আর বরিশাল তো বিল এলাকা&comma; তাই একজন মাঝি ঠিক করে কিছু দিন বাড়ি ছাড়ার জন্য অল্প কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস&comma; নগদ টাকা নিয়ে আমরা রাতের বেলা মামা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম।<&sol;p>&NewLine;<p>আমাদের কাছে তো সেটা পুজোর আনন্দের মতো মনে হলো&comma; কারণ পুজোতেই আমরা মামা বাড়ি থাকতে যেতাম। আমার দাদার তখন ১২ বছর&comma; দিদির à§®&comma; আমার à§«&comma; ছোট দুজনের ৪ ও ২ বছর বয়স। সুতরাং গৃহত্যাগের কোন বেদনাই আমাদের তখন স্পর্শ করতে পারে নি। আমার সেই ছোট চোখেও বাবার বিষাদকৃষ্ট মুখটা এরকম একটা আনন্দের মূহূর্তে কেমন যেন বেমানান লাগছিল।<&sol;p>&NewLine;<p>যাই হোক&comma; ভোরের দিকে আমরা রাজিহার পৌঁছে গেলাম। রাজিহার গ্রামটা শস্যের দিক থেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রাম বলা যায়। আর আমার মামা বাড়ির নিজেদের ৪০ -৫০ টা বাড়ি একসাথে নিজেদেরই একটা গুচ্ছ গ্রামের মতো। কিন্তু অন্যবারের মতো আনন্দে ভরপুর পরিবেশ লাগল না। সবার মুখেই দুশ্চিন্তার রেখা প্রবলভাবে ধরা পরেছে।<&sol;p>&NewLine;<p>এখানে আমরা সাত দিনের মতো ছিলাম&comma; আর সবাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যেহেতু বছরের বালাম চাল ঘরে উঠে গেছে&comma; তখন মামারা বড় বড় মাটির জালার মধ্যে চাল ভরে তারপর মাটিতে গর্ত করে তার ভেতরে জালাগুলো ঢুকিয়ে ঢাকনা দিয়ে আবার মাটি চাপা দিয়ে বাড়ি ত্যাগ করে কোলকাতার পথে রওনা হলো।<&sol;p>&NewLine;<p>তখন আমার দিদিমার বয়স ৯২ বছর&comma; হেঁটে কোলকাতা যাওয়া ওনার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাই দু’জন লোক ঠিক করা হলো যারা ভারের মতো করে কাপড়ের পালকিতে ওনাকে বহন করবে। এভাবে হাঁটা পথে কোলকাতা যাওয়ার ব্যবস্থা হলো। আমরা কিছুটা হেঁটে কিছুটা নৌকায় করে দশ দিনে কোলকাতার উদ্বাস্তু শিবিরে যেয়ে পৌঁছে গেলাম।<&sol;p>&NewLine;<p>যাওয়ার পথের ঘটনাগুলো বার বার শুনতে শুনতে বোধ হয়&comma; সেই পাঁচ বছরের আমার চোখেও মনে হয় গেঁথে গেছে। আমি এখনো চোখ বন্ধ করলেই সব ভয়াবহ দৃশ্য ছবির মতো দেখতে পাই।<&sol;p>&NewLine;<p>প্রতিদিন সকালে আমাদের এক মামার কাজ ছিলো সবচেয়ে উঁচু গাছটায় উঠে দেখা কোন দিক থেকে ধোঁয়া আসছে। ধোঁয়ার বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করা হতো। কারণ ধোঁয়া দেখা মানে মিলিটারীরা ঐ দিকের গ্রামে আগুন লাগিয়েছে&comma; তাই উল্টো দিকে হাঁটলে মিলিটারীদের কাছ থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব। আর ছেলে বুড়ো সবাইকে নির্দেশ দেয়া ছিলো কোন বিপদ দেখলে যে যেদিকে পারে ঝোপে ঝাড়ে লুকোনোর জন্য। এমন এক দিনে সবাই যখন লুকাচ্ছে আমি আর আমার ছোট ভাই একটা পাট ক্ষেতে লুকাতে গেছি। পরে বাবা বলেছিলো আমরা দু’জন নাকি মাথাটা ঝোপের ভেতরে ঢুকিয়ে পেছনটা বের করেই লুকিয়েছিলাম। মিলিটারীরা বোধ হয় আমাদের দেখতে পায়নি&comma; তবে মিলিটারীরা চলে গেলে এই ভয়াবহ সময়েও সবাই এ ঘটনায় হেসে লুটোপুটি করেছে।<&sol;p>&NewLine;<p>এর পরদিনই আমি আমার জীবনের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড দেখেছি। আমরা একটা চার্চ পার হচ্ছিলাম&comma; দেখলাম সামনের মাঠে বিভৎসভাবে সেই চার্চের পাদ্রি এবং তার পুরো ফ্যামিলিকে হত্যা করে সামনে ফেলে রেখে গেছে। আমাদের চোখ যত তাড়াতাড়ি পারে বড়রা ঢেকে দিয়েছিলো কিন্তু এর মধ্যেই আমার চোখ যা দেখেছিলো&comma; এখনো ঘুমের মধ্যে ঐ দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার হয়ে উঠি।<&sol;p>&NewLine;<p>এর মাঝেই একদিন আমাদের দলের এক বৃদ্ধা তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন কিন্তু তাকে দাহ করার মতো কোন অবস্থা না থাকাতে এক ডোবার মধ্যে তার মরদেহ ফেলে দিয়ে বাকিরা গন্তব্যের দিকে যেতে শুরু করে। এ দশ দিনের মধ্যেই আমার এক মামী মৃত সন্তান প্রসব করলেন। সে সময় মৃত্যুবরণ করাটা যেন স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো। কোন মৃত্যুর জন্যই শোক তাপ ছিল না। কোনমতে জীবিত মানুষগুলো অন্তত এক বেলা খেয়ে বর্ডার পার হওয়াটাই ছিল মূল চিন্তার বিষয়।<&sol;p>&NewLine;<p>এভাবে চলতে চলতে আমরা পৌঁছে গেলাম বর্ডারের ওপারের এক স্কুলের উদ্বাস্ত শিবিরে। গ্রামের মোটামুটি কিছু স্বচ্ছল পরিবার এক সাথে ভিখিরির মতো গিয়ে হয়ে উঠলাম অন্য এক দেশের রিফ্যুজি ক্যাম্পে।<br &sol;>&NewLine;রুমা বসু &colon; কবি&comma; অটোয়া&comma; কানাডা<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version