অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিমান চলাচলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের চলমান শাটডাউনের কারণে শুক্রবার দেশটির ৫ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং আরও হাজারো ফ্লাইট ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। সরকারি কর্মীসংকট ও বেতনবিহীন অবস্থায় কর্মরত বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে লাখো যাত্রী পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
এই সংকটের মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চলমান শাটডাউন, যা টানা ৩৮ দিন ধরে চলছে। অর্থাৎ, অনেক সরকারি সংস্থার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে এবং হাজার হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে বিমান সংস্থাগুলোকে বাধ্য হয়ে বিপুলসংখ্যক ফ্লাইট বাতিল বা দেরিতে ছাড়তে হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রুটে কমপক্ষে ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে ব্যাপক ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা ঘটে। ওয়াশিংটনের রেগান বিমানবন্দরে গড়ে ফ্লাইটগুলো ২৪০ মিনিট অর্থাৎ চার ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছায়। একইসঙ্গে, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো বড় শহরের বিমানবন্দরগুলোতেও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী সিন ডেফি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “বর্তমানে প্রায় ৪ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, তবে পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী সপ্তাহে এই হার ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।” তিনি আরও সতর্ক করেন, সরকার যদি শাটডাউন বন্ধ না করে, তাহলে বাধ্য হয়ে বিমান সংস্থাগুলোকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্লাইট কমাতে হতে পারে।
বড় বড় বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা যেমন আমেরিকান এয়ারলাইনস, সাউথওয়েস্ট এবং ডেল্টা জানিয়েছে, যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তারা অর্থ ফেরত দিচ্ছে এবং বিনামূল্যে বিকল্প ফ্লাইটের সুযোগ দিচ্ছে। তবে ফ্লাইট বাতিল ও দেরির কারণে বহু যাত্রীর সময়সূচি, মিটিং এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
ফ্লাইট–ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটওয়্যার–এর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট (গ্রিনিচ সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিট) পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে শুধু রেগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরে প্রায় ১৭ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং ৪০ শতাংশ ফ্লাইট সময়ের দেরিতে ছাড়ে।
এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আটলান্টা, সান ফ্রান্সিসকো, হিউস্টন, ওয়াশিংটন ডিসি এবং নিউয়ার্কসহ কমপক্ষে ১০টি বড় বিমানবন্দরে শত শত ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে। শাটডাউনের কারণে বিমান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত প্রায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। ফলে অনেকেই কর্মস্থলে হাজির হচ্ছেন না, যা পুরো বিমান চলাচল ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।
একজন বিমান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, “গত বৃহস্পতিবার আমাদের জানানো হয় যে, আগামী সপ্তাহেও আমরা দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বেতন পাব না। অনেক সহকর্মী এখন কাজ ছাড়ার কথা ভাবছেন।” কর্মকর্তাদের এই অনুপস্থিতিই এখন বিমানবন্দরে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখছে এবং ফ্লাইটের সময়সূচি বিপর্যস্ত করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শাটডাউন শুধু সরকারি দপ্তর নয়, বরং সাধারণ নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। পরিবহন ও বিমান খাতে এই প্রভাব সবচেয়ে দৃশ্যমান। যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা, ফ্লাইট বাতিল, এবং অনিশ্চয়তা এখন পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি
