মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২০ অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়। উক্ত দিবসের কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রথম প্রহরে রাত ১২.০১ মিনিটে বাংলাদেশের মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় অত্র মিশনের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে নিয়ে অটোয়া সিটি হলে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অটোয়াস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী ও অটোয়াস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অটোয়া সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কানাডার পালামেন্টের সংসদ সদস্যসহ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয়ের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ হাউজে বেলা ৯.০০ ঘটিকায় জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত করা হয়। এ সময় সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৬.০০ ঘটিকায় অটোয়াস্থ “The Royal Canadial Legon Hall” এ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি আলােচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ, কূটনৈতিক কোরের প্রতিনিধি, অটোয়া মেয়রের প্রতিনিধি কাউন্সেলর Mr. Rawlson King ও সংসদ সদস্য Mr. Chandra Ariyaসহ গণ্যমান্য আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়। ডকুমেন্টরীতে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।

এছাড়াও ডকুমেন্টরীতে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাক্ষাৎকার দেখানো হয়।
পরবর্তীতে এ দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও মাননীয় সংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। অত:পর শহীদ দিবস উপলক্ষে মান্যবর হাই কমিশনার মহোদয় বক্তব্য পেশ করেন।

হাই কমিশনার মহোদয় শুরুতেই তাঁর বক্তব্যে অমর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দানকারী বাংলাদেশীদের ও একই সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি রক্ত গাঁথা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় যা, বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হচেছ। তিনি আরো বলেন যে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিষ্ঠান “The Mother Language Lovers of the World Society” প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

তিনি এ পর্যায়ে উল্লেখ করেন যে, পরবর্তীকালে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর UNESCO কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বিরাট অর্জন।

পরিশেষে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি এই মহান দিনে প্রবাসী বাংলাদেশী বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলাভাষার চর্চার জন্য আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি অন্য সকল ভাষা-ভাষীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় আমন্ত্রিত সকলকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক নির্দেশনায় অটোস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের নানমূখী কর্মসূচী ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। তিনি হাইকমিশনের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

অত:পর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ভারত, শ্রীলংকা, ফ্রান্স ও জামাইকার শিল্পীগণ নিজস্ব দেশের সংস্কৃতি ও ভাষায় গান, নাচ ও কবিতা পাঠ করেন। বিভিন্ন দেশের ও ভাষার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার যে মূল লক্ষ অর্থাৎ সকল ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান ও লালন করার বিষয়টি উঠে আসে। বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বিভিন্ন ভাষার মনোজ্ঞ ও উপভোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মধ্যে মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় প্রশংসাপত্র প্রদান করেন।
পরিশেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য দেশীয় খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি