অনলাইন ডেস্ক : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, অন্টারিও মুখ্যমন্ত্রী ডোগ ফোর্ড তাকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন। করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে তিনি এই অনুরোধ রক্ষায় সব ধরনের সহায়তা দেবেন বলে জানান। গত শুক্রবার অটোয়াতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এ বিষয়ে আরো বলেন, এই মুহূর্তে অন্টারিওরই একমাত্র প্রদেশ যারা আমাদের এমন অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই। কারণ মহামারি বিস্তার রোধে আমাদের সস্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগের দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার ডোগ ফোর্ড প্রভিন্সিয়াল নেতাদের সাথে এক কনফারেন্সে এই মুহূর্তে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি এসব শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যের পরদিন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিপূর্বে প্রাদেশিক সরকারগুলো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথ কোয়ারেন্টিনের মাধ্যমে গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে অন্টারিও প্রশাসনই প্রথম তাদের নিয়ন্ত্রণের অর্থাৎ এই মুহূর্তে কানাডায় না আসার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। তাদের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় সরকার স্বাগত জানাচ্ছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রশাসন ইতোমধ্যে ফোর্ড প্রশাসনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।’
তবে ডাগ ফোর্ডের গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক ইভানা ইয়েলিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ করার কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানাইনি। আমরা শুধু মহামারী নিয়ন্ত্রণে এসব শিক্ষার্থী যে ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলোর সমাধানের উপায় জানতে চেয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, কানাডায় এখন করোনর তৃতীয় ঢেউ চলছে। এটি সামাল দিতেই আমাদের সরকার ও জনগণ হিমশিম খাচ্ছে। যদি আমাদের কোনো ভুল পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্তের কারণে মহামারীর নতুন কোনো ধরন কানাডায় আঘাত হানে তাহলে পরিস্থিতি হবে আরো ভয়াবহ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে তার বিবৃতির দ্বিমতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্যেই অটল আছি।’
এদিকে টরন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাগ ফোর্ড বলেন, বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে তিনি কানাডার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি এই মুহূর্তে পিয়ারসন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করতাম এবং স্থল সীমান্তে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে আসা-যওয়া করতে দিতাম না।’ তিনি অটোয়া প্রশাসনকেও সীমান্তে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কঠোরতা আরোপের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এসব ব্যবস্থা শুধু বিদেশী শিক্ষার্থী নয়, ব্যবসায়ীসহ সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
তবে বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খুব বেশি কঠোর না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এমন করা হলে দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারীর আগে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ২৫%ই বিদেশী। এসব বিদেশী কানাডিয়ান শিক্ষার্থীদের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ পরিমাণ টিউশন ফি দিয়ে থাকে। যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের একটি প্রধান উৎস। ২০২০ সালের আগে এই খাতে সরকারের আয় ছিল প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার।
বিদেশী শিক্ষার্থী নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অন্টারিও কলেজেস-এর সভাপতি লিন্ডা ফ্রাঙ্কলিন বলেন, নিষিদ্ধ নয়, কঠোর নিয়ম-কানুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অন্টারিও’র অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এসব বিদেশী শিক্ষার্থীর প্রয়োজন রয়েছে।
কাউন্সিল অব অন্টারিও ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট স্টিভ অরসিনিও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, তিনি আশা করছেন বিদেী শিক্ষার্থী নিষিদ্ধের চিন্তা-ভাবনা থেকে তার সরকার সরে আসবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশ থেকে আসা সব ছাত্র-ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কোভিড টেস্ট, যথাযথ আইসোলেশন এসবই মেনে চলছি। এসব শিক্ষার্থীর মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সূত্র : দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল