অনলাইন ডেস্ক : অন্টারিও প্রদেশে শ্রমিক ঘাটতির সমস্যা রয়েছে। তবে মজুরির হার, সুবিধা এবং বেকারত্বের চিরাচরিত উদ্বেগের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্টারিওর চাকরির বাজারে প্রায় পৌনে চার লাখ পদ খালি রয়েছে। শ্রমিকের অপর্যাপ্ত জোগান অন্টারিওর স্বাস্থ্য-পরিচর্যা খাতে সমস্যার মূল কারণ, পাশাপাশি এটি কানাডার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও সীমিত করছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের গ্রাহকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর শ্রম ঘাটতি হল দক্ষ ব্যবসাগুলোতে। প্রাদেশিক সরকারের অনুমান, আগামী দশকে ব্যবসায় ১ লাখ অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। তাদের ছাড়া প্রদেশের জরুরী প্রয়োজনীয় আবাসন তৈরির পরিকল্পনা সফল হবে না।
কয়েক দশক ধরে বেকারত্ব শ্রমিকদের প্রধান সমস্যা ছিলো, যা সর্বাধিক জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলো। বর্তমানে কম বেকারত্বের হার একটি ভালো খবর। লোকেরা সহজেই কাজ খুঁজে পাচ্ছে এবং অর্থনীতি তার স্বাভাবিক গতিতে চলছে এটি তার একটি চিহ্ন।
তবে কম বেকারত্বের হার কখনই বিশাল অর্জন নয়, যখন বড় সংখ্যাক চাকরির পদ খালি পড়ে থাকার সাথে এটাকে সংযুক্ত করা হবে। আর বিষয়টি উপলব্ধি করতে কিছু মানসিক সমন্বয় প্রয়োজন। শ্রমিকদের জন্য চাকরির উচ্চ শূন্যতার হার উপকারী হতে পারে। আজকাল চাকরি পাওয়া বেশিরভাগের জন্য কঠিন নয়। তবে সমাজের জন্য খবরটি সুখকর নয়।
আমরা দীর্ঘদিন যাবত ধরে নিয়েছি যে, আমরা যে পণ্য ও পরিষেবাগুলো চাই তা পাওয়া যাবে এবং সরকারের কাছে তার গুরুত্বপূর্ণ দায?িত্ব পালনের জন্য পর্যাপ্ত লোক থাকবে। তবে সেটা আর হয়ে উঠে না। প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ডের কনজারভেটিভ সরকার সমস্যা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন এবং শ্রমের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করার জন্য কিছু দরকারী কাজ করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে সে পদক্ষেপ গুলো যথেষ্ট হবে না।
প্রাদেশিক সরকার পেশা হিসাবে ব্যবসার উপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করেছে এবং চাকরি-সম্পর্কিত দক্ষতার উপর আরও ফোকাস করার জন্য স্কুল পাঠ্যক্রমকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে। এটি অন্টারিওতে অভিবাসীদের তাদের দক্ষতা ব্যবহার করতে বাধা দেয় এমন কিছু প্রতিবন্ধকতাও সরিয়ে দিয়েছে।
এই সপ্তাহে প্রদেশে বিদেশী-প্রশিক্ষিত নার্সদের কাজ করা সহজ করতে কীভাবে নিয়ম পরিবর্তন করা হবে তার রূপরেখা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিলভিয়া জোনস। শ্রমমন্ত্রী মন্টে ম্যাকনটন একটি শ্রমপন্থী নীতি অবলম্বন করেছেন যা প্রাদেশিক কর্মশক্তিকে উপকৃত করবে, যা তিনি বলেছেন যে এই গ্রীষ্মে তার দলকে নির্বাচনী সমর্থন জিততে সাহায্য করেছে। একটি শ্রমশক্তিকে চাকরির বাজারের চাহিদার সাথে আরও ভালভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ পার্টির প্রচেষ্টা একটি ভাল বিষয়, তবে এটি নিজেই শ্রমের সরবরাহ প্রসারিত করতে খুব বেশি কিছু করবে না। শ্রমের ঘাটতি এখন যতটা বড় আকার ধারণ করেছে, তা আরও খারাপ হতে চলেছে। ২০ শতাংশেরও বেশি কানাডিয়ান কর্মী ২০২৬ সালের মধ্যে অবসর নেওয়ার যোগ্য এবং তাদের প্রতিস্থাপন করার জন্য পর্যাপ্ত তরুণ কর্মী নেই, যা আছে তা কর্মশক্তি প্রসারিত করার জন্য অনেক কম।
এই ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে সুস্পষ্ট উপায় হল স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং অভিবাসন, আর উভয়টিই মূলত প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্বয়ংক্রিয়তা প্রাথমিকভাবে বেসরকারি খাতের ব্যবসার উপর নির্ভর করবে এবং অভিবাসন ফেডারেল সরকারের দায়িত্ব। বলা হয়েছে, লিবারেল সরকার অভিবাসীদের আনার ক্ষেত্রে অন্টারিওর ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অর্থনীতিতে শ্রমের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রদেশগুলোকে সরাসরি কিছু অভিবাসী বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। অন্টারিওতে বিশাল শ্রম ঘাটতি রয়েছে, অথচ এখানেই অভিবাসী বাছাইয়ের ক্ষমতা সবচেয়ে কম। এখানে যারা আসে তাদের মাত্র ৫ শতাংশের নিচে বাছাই করতে পারে অন্টারিও। অন্যদিকে কুইবেক অর্থনৈতিক অভিবাসীদের ৫০ শতাংশ বেছে নিতে পারে।
এই বছর অন্টারিও ২ লাখ ১১ হাজার অভিবাসী গ্রহণ করবে বলে আশা করছে, যা জাতীয় মোটের অর্ধেকেরও বেশি। প্রাদেশিক সরকার তাদের মধ্যে ৯ হাজার ৭০০ জনকে সরাসরি নির্বাচন করার অনুমতি দেবে। গত বছর সীমা ছিল ৯ হাজার এবং ফোর্ড সরকার এই বছর এ সংখ্যা ১৮ হাজারে উন্নিত করার জন্য আবেদন করেছে যার বিপরীতে কেন্দ্র অন্টারিওকে অতিরিক্ত মাত্র ৭০০ জনকে বেছে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। অন্টারিওর অগ্রাধিকার হল দক্ষ বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, কিন্তু প্রদেশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন দক্ষতা নির্বাচন করার ক্ষমতা সরকারের প্রায় নেই। কেন্দ্রের প্রক্রিয়াও অমার্জনীয়ভাবে ধীরগতির। অন্টারিও একজন অভিবাসী ব্যবসায়ী নির্বাচন করতে ৯০ দিন সময় নেয়, জানান ম্যাকনটন। সেই ব্যক্তিকে অভিবাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানান্তর করতে ফেডারেল সরকার ৪২ মাস পর্যন্ত সময় নেয়। ফেডারেল সরকারকে অভিবাসন সম্পর্কে আরও বুদ্ধিদীপ্ত হতে হবে, কিন্তু অসম্ভব কিছু ঘটলেও অভিবাসন অন্টারিওর শ্রমের ঘাটতি পুরোপুরি সমাধান করবে না।
অভিবাসন সাধারণত রাজনৈতিকভাবে শ্রমিক সরবরাহের ভিত্তিতে বিক্রি করা হয়, কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট কর্মশক্তির চাহিদা উপেক্ষা করা হয়। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে স্কুল, হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, রাস্তাঘাট, ট্রানজিট এবং অন্যান্য সব ধরণের পরিষেবার প্রয়োজন হয়। অভিবাসনের মাধ্যমে আমাদের শ্রম সমস্যা সমাধানের প্রায় ততটা সুযোগ রয়েছে, যতটা একটি কুকুর তার লেজ ধরতে পারার ক্ষেত্রে রয়েছে। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট