শাহনুর চৌধুরী : আগামী ২ জুন অন্টারিও প্রাদেশিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সময় যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ততই বাড়ছে। ৩টি প্রধান দলের নেতারা প্রাদেশিক রাজধানী টরন্টো ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বেশি সময় ব্যয় করছেন। কেননা ১২৪টি আসনের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে গ্রেটার টরন্টো এরিয়া (জিটিএ) ও হ্যামিলটন অঞ্চলে। সঙ্গত কারণেই এই এলাকাগুলোতে প্রার্থীদের বাড়তি নজর থাকবে।

সিবিসি নিউজের পক্ষে এবারের অন্টারিও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন দ্য রিট ডট সিএ’র বিশ্লেষক এরিক গ্রেনিয়ার। তিনি বলেছেন, বরাবরের মতো এই জায়গাগুলোই হতে চলেছে নির্বাচনের গতি নির্ধারক। অর্থাৎ এই এলাকাগুলোতে যারা এগিয়ে থাকবে তারাই মূলত সরকার গঠন করবে। অতীতে সব সময় এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে নির্বাচনে জয়লাভ করতে এই অঞ্চলে এবার বিভিন্ন দল সম্ভবত ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবে। প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ নেতা ডোগ ফোর্ড ২০১৮ সালের নির্বাচনে টরন্টোর ডাউন টাউনে খুব বেশি প্রচারণা চালান নি। এবারও তিনি একই পন্থা অবলম্বন করবেন বলে মনে হচ্ছে। অর্থাৎ শহরতলীতে প্রচারে দলটি খুব বেশি সময় ব্যয় করবে না।

এরিক বলেন বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভদের শক্ত ঘাঁটি হচ্ছে গ্রামীণ অঞ্চল। গত নির্বাচনে তারা জিটিএ ছাড়াও শহরতলী ও গ্রামীণ অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এবারও একইভাবে সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে চাইবে। এরিক গ্রেনিয়ার বলেন, ইতোমধ্যে তারা শহুর এলাকায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে আছে। তাই সরকার গঠনের জন্য তাদের গ্রামীণ আসনের দিকেই নজর দিতে হবে।

তবে এর অর্থ এই নয় যে অন্য প্রধান দুই দল নিউ ডেমোক্রেট ও লিবারেলরা লড়াই ছাড়াই এসব আসন তাদের ছেড়ে দেবে। এনডিপি নেতা আন্দ্রেয়া হরওয়াথ ও লিবারেল নেতা স্টিভেন ডেল ডুকা উভয়েই এবারের নির্বাচনে তাদের নিজ নিজ প্রচারণার প্রথম কয়েক দিনের বেশির ভাগই কাটিয়েছেন টরন্টোর চারপাশের এলাকাগুলোতে।

এনডিপি ব্রাম্পটনে তাদের আসনটি ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করবে। করোনা মহামারিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত একটি শহর এটি। তাই এখানকার ভোটারদের মন জয় করতে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

এছাড়া এনডিপি ও লিবারেলরা টরন্টোর উপকন্ঠে অনেকগুলো আসনে তীব্র লড়াইয়ে নামবে। এমনকি কিছু আসনে গ্রিনপার্টিও লড়াইয়ে থাকতে পারে। তাদের নেতা মাইকেল শ্রেইনার এখানে কমপক্ষে একটি আসনে জয়ী হয়ে কুইন্সপার্কে ২য় এমপিপি যোগ করতে চান।

২০১৮ সালের নির্বাচনে এনডিপি প্রাদেশিক রাজধানীর কেন্দ্রের আসনগুলো দখল করেছিল এবার কনজারভেটিভরা এই আসনগুলো দখল করতে চাইছে।

ইপসোস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সিইও ডেরেল ব্রিকার বলেন, উভয় দলই প্রচারণার প্রথম কয়েক সপ্তাহে প্রগতিশীল ভোটের সন্ধানে ‘ফোর্ড বিরোধী’ একটি আবহ তৈরি করতে চাইবে। গত নির্বাচনে টরন্টো ডাউন টাউনে এই কৌশলটি কাজে লাগায় এনডিপি কিছু আসনে সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু এবার এই কৌশল কাজে আসবে না বলেই পোলস্টাররা মনে করছেন। ইকোস রিসাচের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক গ্রেভসের মতে, অনেক ভোটার আছেন যারা ফোর্ডকে পছন্দ করেন না, কিন্তু তবুও তারা প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ দলকেই ভোট দিতে প্রস্তুত। কেননা দলটি এখনো নির্বাচনী লড়াইয়ে যথেষ্ট এগিয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এবারের নির্বাচনের মূল আকর্ষণ হবে টরন্টো অঞ্চল তবে তার মানে এই নয় যে প্রদেশের অন্য এলাকাগুলো একেবারে গুরুত্বহীন। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিওতে তীব্র লড়াই হতে পরে। আগের কয়েকটি নির্বাচনে এনডিপি এই অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এবার প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভরা তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
ডিল ডুকা গত বুধবার পিটারবরো কাওয়ার্থা এলাকায় প্রচারণার জন্য গিয়েছিলেন। এই এলাকাটি ১৯৭৭ সাল থেকে প্রাদেশিক নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
রাজনৈতিক হাওয়া কোন দিকে বইছে তার ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য এবারও এখানে সবার নজর থাকবে। এনডিপি নেতা হরওয়াথের নিজ শহর হ্যামিলটন। এই শহরের ৫টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪টিতে তাদের অবস্থান খুবই শক্ত। তবে বর্তমান এমপিপি পল মিলারকে ‘সঙ্কটজনক আচরণের’ কারণে দল থেকে বহিস্কার করায় তারা একটু সমস্যায় আছে। একজন সিটি কাউন্সিলর ও একজন সাবেক সিএফএল খেলোয়াড়সহ বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী এখানকার আসনগুলোতে লড়াই করছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে লন্ডন-উত্তর কেন্দ্রের আসনগুলোতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল এনডিপি। তবে তার আগের ১৫ বছর এখানে লিবারেলদের দাপট ছিল। এবার তারা হারানো গৌরব প‚রণরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। অন্যদিকে প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভরাও এখানে ভাগ বসানোর জন্য প্রচার-প্রচারণা জোরদার করছে। শিগগিরই দলের নেতাদের ওই অঞলে দেখা যেতে পারে।

অটোয়া ওয়েস্ট-নেপিয়ানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে কঠিন লড়াই দেখা গিয়েছিল। ১৫ বছর ধরে এটি লিবারেলদের ঘাঁটি হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রগ্রেসিভরা এখানে মাত্র ১৭৫ ভোটে এনডিপিকে পরাজিত করেছিল। এবার লিবারেলরা আসনটি ফিরে পেতে চাইছে। অন্যদিকে এনডিপি প্রথমবারের মতো এই আসনে জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। সূত্র : সিবিসি