মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে অন্যমেলা টরন্টো। এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে সংগঠনটি।

অন্যমেলা টরন্টোর কর্ণধার সাদি আহমেদ সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের শক্তি ছিল বিপুল ও বিস্তৃত। এই শক্তির জোর আমরা দেখি ‘৭১-এ, এই শক্তির জোর দেখি যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে। এ জন্যই একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ আমাদের প্রেরণা দেয়।’
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কানাডার জনপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল বেøয়ার। তিনি বলেন, বৃহত্তর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা স্কারবোরোর একজন এমপি হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে উদ্যাপন করার জন্য এই আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। এ বছর সবাই এই আয়োজনে ‘ইন পারসন’ একত্রিত হতে না পারলেও পরবর্তীতে সেটা হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, এই বিশেষ দিবসটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা এবং মাতৃভাষা উদ্যাপনের গুরুত্বকে উৎসাহিত করছে। ইংরেজিতে বক্তব্য শেষে তিনি বাংলায় ‘ধন্যবাদ’ জানান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে প্রতিষ্ঠিত করতে যে দুজন কানাডাবাসী অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন, তাঁরা হচ্ছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম। তাঁরা দু’জনেই ছিলেন কানাডার ভ্যাঙ্কুভার প্রদেশের অধিবাসী। রফিকুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে একুশে ফেব্রæয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাব পেশ করেন। আবদুস সালাম তাঁর একজন অন্যতম সহযোদ্ধা। তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভারস অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি। ভ্যাঙ্কুভার প্রদেশ থেকে এই আয়োজনে যুক্ত হয়ে আবদুস সালাম বলেন, ‘বাঙালির একুশ এখন বিশ্বময়। এর কারণ পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ বা জাতি-গোষ্ঠী নেই, যারা নিজের মাতৃভাষাকে ভালোবাসে না। যার নিজের ভাষার প্রতি অহংকার নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। একুশ বারবার যুগে যুগে আসবে ফিরে বাঙালির জীবনে এবং শেখাবে একটি মন্ত্র। আর সেই মন্ত্রটি হচ্ছে, মাথা নত না করার মন্ত্র।’

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভারস অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরে তাঁরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্থায়ী সৌধ ‘লিঙ্গুয়া একোয়া’ নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া কমিউনিটির সংযোগের জন্য এই শহরের ১৭২টি ভাষাভাষীর অধিবাসীদের নিয়ে ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ফেস্টিভ্যাল’ উদ্যাপন করা হচ্ছে ২০১২ সাল থেকে। ২০১৫ সালে স্থানীয় স্কুল ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে অন্তর্ভুক্ত করার সফলতাও অর্জন করেছে সংগঠনটি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে অন্যান্য প্রদেশের স্কুল ব্যবস্থায়ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রদেশের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ও নতুন প্রজন্ম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

আলবার্টা থেকে যুক্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ রফিক। তিনি জানান, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ক্যালগেরিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে।

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) এমপিপি (স্কারবোরো দক্ষিণ-পশ্চিম) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগম বলেন, বর্তমানে শহর ও প্রদেশ পর্যায়ে এই দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। কিন্তু কানাডার জাতীয় পর্যায়েও যেন এই দিবসকে পালন করা হয় এ বিষয়ে তিনি স¤প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন।
বর্তমানে টরন্টো নিবাসী কবি আসাদ চৌধুরী অন্যমেলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ একুশের চেতনা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারানো সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে বলে আমি মনে করি।’ বাংলাদেশে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষার্থে তাদের পাঁচটি ভাষায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য পুস্তক প্রকাশ করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তিনি তার প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠে ছিলেন- কবি ও আবৃত্তিকার মেহরাব রহমান, আবৃত্তিকার জ্যাকুলিন রোজারিও এবং কবি শিউলী জাহান। একুশের গানের দলীয় পরিবেশনা করেছে পদাতিক বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি ধারণ ও সার্বিক প্রযোজনা করেছে ক্যানবাংলা টেলিভিশন।