অনলাইন ডেস্ক : শেষ পর্যন্ত এক বছরের কম সময়ের মধ্যে বাজারে আসতে যাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন। সাধারণত কোনো একটি ভ্যাকসিনের গবেষণা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময় লাগে।
শেষ পর্যন্ত এক বছরের কম সময়ের মধ্যে বাজারে আসতে যাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন। সাধারণত কোনো একটি ভ্যাকসিনের গবেষণা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময় লাগে।

কিন্তু ১৪ লাখের বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া করোনার ভ্যাকসিন সবচেয়ে দ্রুত সময়ে বাজারে আসার ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দেবে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো। এএফপি।

কখন আসবে হাতে : কয়েক মাস ভ্যাকসিন সংক্রান্ত খবর চাপা ছিল। কিন্তু নভেম্বরে সব কিছু ঘটে যায় দ্রুত। কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ঘোষণা করে তাদের ভ্যাকসিনের প্রাথমিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইউরোপের ওষুধ অনুমোদনের সংস্থা দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) আগামী মাসে বা ২০২১ সালের শুরুতে প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হতে পারে। অন্যদিকে আটলান্টিকের বিপরীত পাড়ে থাকা আমেরিকাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিই শুরু হবে ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ।

মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) দ্রুত টিকা দেয়ার টাইমটেবল অনুমোদন করেছে। ফলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে চলে আসছে বহুল প্রত্যাশিত ভ্যাকসিন। তবে দ্রুততার সঙ্গে করা হলেও ভ্যাকসিনের মান ও কার্যকারিতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে সব কোম্পানি।

কোন ভ্যাকসিনটি সেরা : এটি এখনও বলার সময় হয়নি। ৯ নভেম্বর চারটি ওষুধ কোম্পানি ঘোষণা করে, তাদের ভ্যাকসিন কাজ করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভ্যাকসিনই ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমে সফলতার দাবি করে মার্কিন মেডিসিন জায়ান্ট ফাইজার ও জার্মান উদ্যোক্তা বায়োএনটেকের টিকা।

তারপর মার্কিন কোম্পানি মর্ডানা, ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ডের যৌথ টিকা এবং সর্বশেষ রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির স্পটুনিক ভি ভ্যাকসিন।

সবগুলো টিকা উৎপাদকের দাবি তাদের টিকা চূড়ান্ত তথা তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বিভিন্ন বয়সী স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে সফল ও কার্যকর ফল দেখিয়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেক ১৭০ সংক্রমিত ব্যক্তিকে টেস্ট করে ৯৫ শতাংশ সফলতার দাবি করেছে।

মর্ডানার ৯৫টি পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের ১৩১টি পরীক্ষায় ভিন্ন দুই ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সফলতা পাওয়া গেছে ৭০ শতাংশ। রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনের ৩৯টি পরীক্ষায় ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে আরও ৭টি ভ্যাকসিন। প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে ১৬৪টি।

অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অ্যাডানম গ্যাব্রিয়েসাস বলেন, ‘আমরা জানি, মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ভ্যাকসিন দরকার। কিন্তু এটি গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখতে হবে, আমাদের হাতে থাকা অন্যান্য বিষয়ের সহযোগী হবে ভ্যাকসিনটি; স্থলাভিষিক্ত নয়।’

এর অর্থ হচ্ছে ভ্যাকসিন আসার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সতর্কতার বিকল্প নেই। টিকা কেবল দীর্ঘ অন্ধকার সুড়ঙ্গকে উজ্জ্বল করা শুরু করেছে। টিকা নিলে কতক্ষণ সুরক্ষা মিলবে? লন্ডনের কিংস কলেজের ফার্মাসিউটিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর পেনি ওয়ার্ড বলেন, টিকার স্থায়িত্ব সম্পর্কে জানতে এখনও আমাদের সময় লাগবে।

ভ্যাকসিনগুলো কী ধরনের : কিছু ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতি নমুনা তৈরি ও পরীক্ষা করার মাধ্যমে। আর কিছু করা হয় এক্সপেরিমেন্টাল পদ্ধতিতে। প্রথাগত কিছু ভ্যাকসিনে মৃত ভাইরাসের জার্ম ব্যবহার করা হয়। আর কিছু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দুর্বল ভাইরাস প্রজাতি ও ডিএনএ সেল ব্যবহৃত হয়।

অনাস্থা-অবিশ্বাসের কিছু আছে কী : কোন ভ্যাকসিনটি আগে সরবরাহ করা যাবে বিজ্ঞানীরা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ।

তবে কর্তৃপক্ষকে অবিশ্বাসের এ যুগে কত বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকার করে, সেটাই বড় বিষয়। অনেক মানুষ ভ্যাকসিনকে ভুয়া মনে করছে, কেউ ভাইরাসটিকেই ভুয়া মনে করে।

মেক্সিকোর অনেক মানুষ মনে করেন, বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন বিক্রির জন্য ভুয়া মহামারী দেখানো হচ্ছে! ১৫টি দেশে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক মানুষের সংখ্যা আগস্ট মাসের পর ৭৭ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে নেমে এসেছে।