সুহেল ইবনে ইসহাক : আজ ২৪ মে, মহারাণী ভিক্টোরিয়ার জন্মদিন যা “ভিক্টোরিয়া ডে” হিসেবে পরিচিত। কানাডার ফেডারেল পাবলিক হলিডে। ভিক্টোরিয়া দিবস একটি ফেডারেল কানাডিয়ান পাবলিক ছুটির দিন যা প্রতিবছর ২৫ মে’র আগের সোমবার পালিত হয়। প্রাথমিকভাবে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্মদিনের সম্মানে এটি কানাডার সার্বভৌমত্বের সরকারি জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়। একে অনানুষ্ঠানিকভাবে কানাডার গ্রীষ্মের শুরু বলে মনে করা হয়।

কানাডায় সম্ভবত ১৮৪৫ সাল থেকে “ভিক্টোরিয়া ডে” ছুটি পালন করা হচ্ছে, মূলত ভিক্টোরিয়ার আসল জন্মদিনে (২৪ মে) ছুটির দিনটি বরাবরই একটি স্বতন্ত্রভাবে উদযাপনের লক্ষ্য ১৮ ও ২৪ মে এর মধ্যবর্তী সোমবার কানাডাব্যাপী “ভিক্টোরিয়া ডে” উদযাপন করা হয়। মহারাণীর জন্মদিন কানাডাতে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপিত হয়। ২৪ মে’র দু’চারদিন আগ থেকেই সর্বত্র আতশবাজি ও উৎসবমুখর পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়।

“ভিক্টোরিয়া দিবস” ১৮৫৪ সাল; কানাডা ওয়েস্টের (বর্তমান অন্টারিও) টরন্টোর সরকারী বাড়ির বাইরের ভিড়।

পৃথিবীর ইতিহাসে যে কজন নারী শাসক দীর্ঘ সময় শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন তাঁদের মধ্যে রানি ভিক্টোরিয়া অন্যতম। একজন নারী হয়েও ৬৪ বছর যাবৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করেছেন তিনি। ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান। ছয় দশকের শাসনকালে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধুনিকায়ন শুরু করেন। তাঁর কল্যাণে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলোতে অনেক যুগান্তকারী উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে। রানি ভিক্টোরিয়ার জন্ম ১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন প্রাসাদে। তাঁর পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান। এই এডওয়ার্ড ছিলেন রাজা তৃতীয় জর্জের চতুর্থ ছেলে। ১৮২০ সালে ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন এক বছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা এডওয়ার্ড মারা যান। এরপর মা একাই তাঁকে বড় করে তোলেন। তাঁর মা ডাকতেন দ্রিনা বলে। ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তাঁর জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। ছোট থেকেই জার্মান ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ১৮৩৭ সালে রাজা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর খুব সকালে ভিক্টোরিয়াকে জানানো হয় তিনি এখন ব্রিটেনের রানি। ২৮ জুন প্রথা অনুযায়ী ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে মাত্র ১৮ বছর বয়সী রানির মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় রাজমুকুট।

মহারানী ভিক্টোরিয়া

১৮৪০ সালে চাচাতো ভাই প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের ঘরে ৯ সন্তানের জন্ম হয়। বিশাল সাম্রাজ্যকে আরো বিশাল করেন রানি। ভারতে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে বহু ইউরোপীয় মারা যায়। এরপরই ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির কাছ থেকে সরাসরি ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল অ্যাক্ট পাসের মাধ্যমে ভারতের সম্রাজ্ঞী হন রানি ভিক্টোরিয়া। শুধু ভারতবর্ষই নয়, ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক আগ্রাসী শাসনের কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার তাঁর হাতে থাকায় ভিক্টোরিয়া রানি থেকে হয়ে ওঠেন মহারানি। ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি ৮১ বছর বয়সে রানি ভিক্টোরিয়া মৃত্যুবরণ করেন।