অনলাইন ডেস্ক : আদিবাসীদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ভাষা সুরক্ষা ও প্রসারে প্রায় তিন বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দেবে সরকার। গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্কুলে প্রায় এক শতক ধরে আদিবাসী শিশুদের ওপর চলা নির্যাতনের ক্ষতিপূরণস্বরূপ এই অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ২১শে জানুয়ারি, শনিবার ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে ক্রাউন-ইন্ডিজেনাস রিলেশন এর মন্ত্রী মার্ক মিলার এ ঘোষণা দেন। সে সময় আদিবাসীদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি।
‘গটফ্রিডসন’ মামলা নামে পরিচিত মামলায় ২০১২ সালে সমষ্টিগত ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি করা হয় আদিবাসীদের পক্ষ থেকে। তবে এ মামলার প্রাপকদের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে সেটিকে ফেডারেল আদালত দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে, যা এখনও হয়নি। তবে এ অনুমোদন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। আদালত চুক্তিটি অনুমোদন করলে ২.৮ বিলিয়ন ডলারের এই তহবিল একটি নতুন ট্রাস্ট এ দিতে সম্মত হয়েছে সরকার যা ২০ বছরের জন্য কাজ করবে। কর্মকর্তাদের মতে, তহবিলটি ফেডারেল সরকারের থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই অর্থ একটি অলাভজনক ট্রাস্ট এ দেওয়া হবে এবং অদিবাসীদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষার প্রসারে এটি খরচ করা হবে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আদিবাসী পরিবার থেকে শিশুদের জোর করে সরিয়ে তাদের গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলে ভর্তি করাতো কানাডার সরকার। এসব স্কুলে আদিবাসী পরিচয়ের বদলে তাদের ইউরোপীয়-খ্রিস্টান পরিচয়ে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হতো। কানাডায় এমন স্কুল ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
৩২৫টি আদিবাসী গোষ্ঠীর যৌথ মামলার ফলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কানাডা সরকার। এর লক্ষ্য হলো ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ক্ষতিসহ গির্জার আবাসিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থার কারণে যে সামষ্টিক ক্ষতি হয়েছে, তার স্বীকৃতি আদায় এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত ও রক্ষা করা, আদিবাসী স¤প্রদায় এবং তাদের সদস্যদের সুস্থতা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন মামলার বাদীরা।
মামলার বাদীদের একজন আদিবাসী নেতা গ্যারি ফেসচুক বলেন, নিজের ইতিহাস স্বীকার করতে, নিজের করা গণহত্যার দায় স্বীকার করতে এবং আবাসিক স্কুলগুলোর মাধ্যমে আমাদের জাতির সম্মিলিত ক্ষতি স্বীকার করতে অনেক বেশি সময় নিয়েছে কানাডা। তিনি বলেন, কানাডার কেবল ক্ষতি স্বীকার না করে, আমাদের সঙ্গে হাঁটা উচিত, পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে সহায়তা করা উচিত। এই বন্দোবস্ত একটি ভালো প্রথম পদক্ষেপ।
মামলার আরেক বাদী চিফ রোজান ক্যাসিমির বলেন, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির ‘গভীর ক্ষতি’ পুনরুদ্ধার করতে ‘অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা’ প্রয়োজন হবে। ঊনিশ শতকের শেষ থেকে শুরু করে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত অন্তত দেড় লাখ ফার্স্ট নেশন, মেটিস এবং ইনুইট স¤প্রদায়ের শিশুদের ১৩৯টি আবাসিক স্কুলে পাঠিয়েছে কানাডার সরকার। এসব শিশুর অনেকেই শিক্ষকদের হাতে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হাজার হাজার শিশু অপুষ্টি, অবহেলা এবং রোগের কারণে মারা গেছে বলেও ধারণা করা হয়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া গির্জার স্কুলগুলোর আশপাশ থেকে ২০২১ সালের পর থেকে একের পর এক অচিহ্নিত গণকবর খুঁজে পাওয়া যেতে শুরু করে। এসব কবর থেকে শত শত আদিবাসী শিশুর মরদেহের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার হয়? একে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ দাবি করে নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে কানাডার ন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন।
গত বছর কানাডা সফরের সময় পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক গির্জার অধীনে আদিবাসী আবাসিক স্কুলগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সূত্র : সিবিসি নিউজ