বিদ্যুৎ সরকারÑ স্কেচ : কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাস

অনলাইন ডেস্ক : জীবন মানেই অন্তবিহীন পথ চলা।
এ যাত্রা সামনে যাবার, পেছনে নয়। ৭০ পেরোনো স্মৃতিকাতর পথ হাঁটতে হাঁটতে … বিদ্যুৎ সরকার একজন ঋদ্ধ পথিক।
জীবনের অলি-গলিতে তাঁর সঞ্চার বর্ণময়। প্রচলিত গণ্ডিতে নিজেকে বন্দী করেননি বরং জীবনকে দেখেছেন একান্তই তাঁর নিজের মতো করে।
জটিলতার চক্রাজালে না জড়িয়ে, নির্মোহ বড়োবেশী সাদামাটা জীবন তাঁকে আরো রঙময়, বাঙময় করে তোলে। তাঁর নির্বিবাদী জীবন আমাদের কাছে ধরা দেয় এক অনাবিল মেঘ রোদ্দুরের খেলায়। ৭১তম জন্মদিনে এই অগ্রজ বন্ধুকে আমাদের অভিবাদন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বিদ্যুৎ সরকার (সব বামে)

বিদ্যুৎ সরকার
আলোকচিত্রী বিদ্যুৎ সরকারের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বরোরা উপজেলার জয়নগর গ্রামে। বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র সরকার ছিলেন ডাক সাইটের সরকারি আমলা। মহকুমা সার্কেল অফিসার। বাবার বদলীর চাকুরী। ফলে ঘুরতে হয়েছে পুরো দেশ। ১৯৫০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্যুৎ সরকার। মায়ের নাম অরুণা সরকার। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কিশোরগঞ্জের রামানন্দ হাই স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ইন্টারমিডিয়েটের প্রথম বর্ষ পর্যন্ত পড়াশুনা করেন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে। সে সময়ে কলেজের ছাত্রনেতা হিসেবে পান বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে।
নোয়াখালীর চৌমোহনী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। পরে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চলে যান আগরতলার মেলাঘরে। বাবা পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে কোলকাতায় যোগ দেন মুজিবনগর সরকারের পক্ষে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাবা তৎকালীন খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার এসডিও হিসাবে যোগ দেন। বিদ্যুৎ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মনোবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের টালমাতাল পরিস্থিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ সরকারের প্লানিং কমিশনের একটি প্রকল্পে। প্রকল্প শেষে অভিনেতা মানস বন্দ্যেপাধ্যায়, জনপ্রিয় গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ ও মাকসুমুল আরেফিনÑ এই তিন বন্ধুর সাথে যৌথভাবে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মিডওয়ে’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থা ছেড়ে ইউনিসেফের ‘চাইল্ড টু চাইল্ড’ প্রকল্পের ‘মিতালী’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন। পরে জাপানী অর্থায়নে আর্সেনিক বিষয়ক একটি প্রকল্পে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে বিদ্যুৎ সরকার তাঁর নিজ গ্রামে ‘উত্তমাশা’ নামে স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলেন যা পরবর্তীতে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে প্রশংসিত হয়।
১৯৯০ সালে রাড্ডা বারনেন এর প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী আরতি রোজলিন রেগোর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
২০০৮ সালে অভিবাসী হয়ে সপরিবারে বিদ্যুৎ সরকার কানাডায় আসেন এবং টরন্টো শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
সে সময়ে টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আজকাল’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য, পরবর্তী সময়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ‘অভিবাসী’ নামে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন। তিনি কানাডার এথনিক প্রেস কাউন্সিল কর্তক পুরস্কৃত হন ২০১৪ সালে।
বিদ্যুৎ সরকার ও আরতি রেগো দম্পত্তির একমাত্র কন্যা ঝিলিক মেরেলিন সরকার, পড়াশুনা করেছেন ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে চাকুরীজীবি। ভিনসিলিয়াস ডি রোজারিও তার কন্যা জামাতা। বিদ্যুৎ সরকারের প্রকাশিত গ্রন্থ ‘কথায় কথায়’।

ঢাকায় নিজেদের বিজ্ঞাপনী সংস্থায় বিদ্যুৎ সরকার (বামে), গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ (মাঝে) ও কবি আসাদ চৌধুরী

তিন.
রেখায়নের বন্ধু
বিদ্যুৎ সরকারের বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম। আমার সৌভাগ্য তার মেয়ের বিয়েতেও আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তবে, তার মেয়েটির বিয়েটা বড় জাঁকজমকভাবে হয়েছিল। বিয়েতে ঢাকার বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটি ছাড়াও, রেখায়নের বন্ধুরাও ছিলেন। রেখায়ন এখন নেই, শাহবাগে ছিল। এবং সেখানে শিল্পী-সাহিত্যিক লেখক অভিনেতা-অভিনেত্রী-একটা দারুণ জমজমাট আড্ডা হতো। আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন রাগিব আহসান। আর বিদ্যুৎ প্রায় সারাক্ষণই সেখানে থাকতেন। কাজেই তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা একদিনের না, বহুবছরের। নিপাট ভদ্রলোক। সাতেপাঁচে থাকেন না, তাঁর মুখ থেকে খারাপ কথা কখনো শুনিনি কারো সম্পর্কে। ২০০৮-এ দ্বিতীয়বার টরন্টোতে আসি আমার নাতি মাহদিনের জন্মদিন উপলক্ষে। আমার সঙ্গে আসিফ ও মাহদিন ছিল, শহর দেখতে বেরিয়েছি। হঠাৎ আহমেদ হোসেনের দেখা, সাথে বিদ্যুৎ সরকারও। হৈ হৈ করে আমরা চলে গেলাম বাংলা কাগজ পত্রিকার অফিসে। এখানে বলে রাখা ভালো, বাংলা কাগজ পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জাহাঙ্গীর শ্বশুড়বাড়ি সম্পর্কে আমার আত্মীয়। পরে তো দেখি বাংলা কাগজে আমার ও নাতির ছবি ছাপা হয়ে গেছে! শুধু আমারই নয়, আমার ছেলে-মেয়েরও প্রিয়জন বিদ্যুৎ সরকার। এরপর বিদ্যুৎ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হোন। আজকাল পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হোন। চমৎকার ছবি তুলেন। আজ বিদ্যুৎ সরকারের জন্মদিন (১৯ ডিসেম্বর)। সবাই যখন ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে, এই সময়ে তিনি অন্যকে বরং এগিয়ে যেতে সুযোগ করে দেন। ভদ্র, বিনয়ী, বিদ্যুৎ সত্তরে পা দিয়েছেন। মনেপ্রাণে প্রার্থনা তিনি শতায়ু হোন, এবং সুখে শান্তিতে জীবন কাটান।
আসাদ চৌধুরী

চার.
বিদ্যুৎ! আমার জীবনের এক আলো ঝলকানি। বড্ড বেশি ভালো মানুষ। ব্যক্তি স্বাধীনতায় প্রচণ্ড বিশ্বাসী। এতোই শান্তিপ্রিয় যে, এই ত্রিশ দশক ধরে তাকে আমি কারো সাথে কোন ঝামেলায় জড়াতে দেখেনি। বড়ই বন্ধু বৎসল, যে কোন বয়সের কাউকে অতি সহজেই বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারে। অতি সাধারণ জীবন যাত্রা তাঁর খুব পছন্দ।
আজ তাঁর জন্মদিন।
এই দিনে তাঁকে জানাই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। আগামী বছরগুলো তাঁর জন্য বয়ে আনুক সুস্থ স্বাস্থ্য ও নির্মল আনন্দ।
আরতি রোজলিন রেগো

পাঁচ.
বিদ্যুৎ আমার বন্ধু
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন ক্লাস করতে গেছি, ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানলাম ৩১২ নং কক্ষে ক্লাস। সবাই নতুন, সবাই ভিন্ন রকম অনুভূতিতে ভরপুর তাই একটু আগেই সবাই রুমে ঢুকে গেছে। রুম খুঁজে ঢুকতে যেয়ে দেখি জায়গাই নাই। কোন মতে শেষের দিকে বসলাম চাপা চাপি করে, কেউই কাউকে চেনে না। স্বল্প পরিসরে পাশের বন্ধুর সাথে পরিচিত হয়ে নিচ্ছি সবাই।
স্যার আসলেন, নিজের পরিচয় দিয়ে ক্লাস শুরু করলেন। সবাই খাতা খুলে নোট নেওয়া শুরু করলো। পকেট থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা খাতা খুলে কিছু লিখতে যেয়ে দেখি কলমই আনা হয়নি তাড়াহুড়ো করে আসার কারণে। এ পকেট ও পকেট খুঁজছি, না কলম নাই। পাশের মানুষটা বুঝতে পেরেছে কিছু খুঁজছি, বুঝলো হয়তোবা, কলমটা এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনি লেখেন আমি পরে লিখবো। সেই কলমটা দিয়েই হয়তোবা আমার বুকের মধ্যে তার নামটা লিখে দিয়েছে। যা এখনো সমুজ্জ্বল।
এই পরিচয়। সেই শুরু আমাদের আবহমান বন্ধুত্বের যা এখনো বহমান। নির্লোভ বন্ধু প্রাণ মানুষটা, যার দেহের মধ্যে হৃদয়ের আকারটাই সব চেয়ে বড়।
এই ভাবেই যেনো বেঁচে থাকে আরো দীর্ঘ সময়, দীর্ঘ প্রহর, দীর্ঘ দিন।
শুভ জন্মদিন বন্ধু।
ইউসুফ কামাল, হিউস্টন, আমেরিকা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলামের (বাম থেকে দ্বিতীয়) সাথে বিদ্যুৎ সরকার (সব ডানে)

ছয়.
বিদ্যুৎ সরকারকে আমি চিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর বাহাত্তর-তেহাত্তর সাল থেকে। তখন বিদ্যুৎ এর বাবা বাগেরহাটের সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। যদিও আমলাদের পুত্র-কন্যরা সচারাচার আমজনাতের সাথে মেলামেশা করে না, বিদ্যুৎ ছিলেন সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাগেরহাটে থাকাকালীন স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমিও তাদের অনেককে চিনতাম এবং সেইসূত্রে বিদ্যুৎ এর সঙ্গে আমারও পরিচয় হয়। ফটোগ্রাফির প্রতি তার প্যাশনের ব্যাপারটি তখনই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছিল।
বাগেরহাটের পরে বিদ্যুৎ এর সঙ্গে আমার আর খুব একটা দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না। দীর্ঘ বিরতির পরে আবার দেখা হল টরন্টোর ড্যানফোর্থে। টরন্টো ফিল্ম ফোরামে আমাদের উভয়ের সম্পৃক্ততার কারণে এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বছর দেড়-দুই আগে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আমার বাগেরহাটের বন্ধুদের সাথে তোলা একটি ছবি দেখিয়ে বিদ্যুৎ আমাকে চমকে দিয়েছেন। ফটোগ্রাফির প্রতি, নিজের কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা আমাকে অবাক করে।
আমাকে আরো অবাক করে বিদ্যুৎ এর নির্মোহ জীবনবোধ। অন্যের বৈভবে তিনি বিচলিত হন না, আবার নিজের অতি সাধারণ জীবনাচারেও অবিচল থাকতে সক্ষম। আমি নির্মোহ, নিভৃতচারী, কৌতুক প্রিয় ও বন্ধুবৎসল বিদ্যুৎ এর সত্তরোত্তর দীর্ঘ আয়ু কামনা করি।
শেখ শাহনওয়াজ

সাত.
প্রিয় বিদ্যুৎ দা,
আজকাল চিঠি লেখা আর হয়ে ওঠে না। ইন্টারনেট কেড়ে নিয়েছে দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। প্রকৃতি বদলে যায় বারবার। আমিও চেষ্টা করি। পারি না। শীতের কনকনে ঠান্ডায় লিখতে বসলাম পত্র, আপনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা লিখতে গিয়ে যীশুর চেহারা ভেসে ওঠে, বাংলাদেশের জন্মের কথা মনে হয়। জয় বাংলা ধ্বনির সেই উত্তাল দিনে ফিরে যাই। শত আলোকিত মুখের মুখোমুখি হই। ভাবনার দরজা খুলে বিদ্যুৎ চমকানোর মতই দেখি একজন ভালোবাসার মানুষ, শিল্প প্রেমিক, চেনা মুখ, সুদীর্ঘ পথ হাঁটা যুবকের মুখোচ্ছবি। আমাদের প্রিয় বিদ্যুৎ দা। সাথী, বন্ধু, সজন। সত্তরের যুবকের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। মিলিত হবো শতবর্ষে আনন্দ করবো, উৎসব করবো। আশা করি ততদিনে করোনার বিদায় হবে। আমাদের জীবন ফিরে পাবে গতি।
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা জয় হোক জীবনের।
ইতি,
এনায়েত করিম বাবুল

আট.
শুভ জন্মদিন, শুভ ৭০
তারুণ্য – তিনি বেঁধেছেন অস্থিতে, রেখেছেন মজ্জায় টান টান। ধমনিতে যেনবা যুবার রঙের আগুন; ফাগুন তাঁর হৃদ উঠানে সব ঋতুতে। দেখেছি তাঁকে রঙচটা হাই ফ্যাসন ছেড়া বøæ কি কালো জিন্সে। পরনে টি শার্ট, বাহারী জ্যাকেট, কালো রোদ চশমায়। দেখি নাই কখনো পায়জামা পাঞ্জাবীতে।
তিনি-ই আমার প্রিয়জন বিদ্যুৎ সরকার। প্রিয় মানুষ মাটির টানের বিদ্যুৎদা।
আচ্ছা। আমি কি করে বুঝবো বিদ্যুৎ সরকার ৭০টি বসন্ত পার করেছেন।
ঠিক এমনি থাকুক বিদ্যুৎ দা। উজার করা ভালোবাসার প্লাবনে ডুবে থাক খোকনদার যাপিত জীবন।
বিদ্যুৎদার সু-স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করি।
শুভ ৭০।
আহমেদ হোসেন

নয়.
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। বৃহত্তর টরন্টোর স্কারবরোয় একটি ব্যাঙ্কুয়েট হলে শিল্পী শিখা রউফ ও জগলুল আজিম রানা দম্পতি বন্ধু-স্বজন-শুভান্যুধ্যায়ীদের জন্য এক প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। মধ্যাহ্ন ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে আরেকটি আকর্ষণ ছিল সেখানে – কবি আসাদ চৌধুরীর উপস্থিতি। সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলেন- কখন কবি তাঁর জাদুকরী কথায় সবাইকে মোহিত করবেন! এক সময় কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হলো। মঞ্চে উঠেই কবি তাঁর ভরাট কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন-
দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, আজকের এই অনুষ্ঠানে, সামনে বসা আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু বিদ্যুৎ সরকারকে দেখে বড় ভালো লাগছে! এই যে কবি আসাদ চৌধুরী বিদ্যুৎ সরকারকে বন্ধু সম্বোধন করলেন, এরকমভাবে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের কীর্তিমান-খ্যাতিমান অনেকেই তাঁকে বন্ধু বলে তাঁর ফেলে আসা দিনের উজ্জ্বল ও উচ্ছ্বাসভরা সৃজনশীল দিনগুলোর কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু বিদ্যুৎ দার মুখে কখনোই কোন আত্মশ্লাঘার ইঙ্গিত ফুটে উঠেনি।

২. আমাদের সহযোদ্ধা-বন্ধু সংস্কৃতিজন আবৃত্তিকার আহমেদ হোসেন যাদের সঙ্গে আবৃত্তি করেছেন – তাদের অনেকেই বাংলাদেশের আবৃত্তির তারকা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের কেউ কেউ আবৃত্তির গুরু। অথচ, টরন্টো প্রবাসী আহমেদ হোসেনের আবৃত্তির কোন সিডি বা এলবাম প্রকাশের আগ্রহই নেই। সহসা আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত বিদ্যুৎ সরকারের লেখা কয়েকটি গদ্য পাঠ করে আহমেদ হোসেন বিমোহিত। শুধু বিমোহিত বললে কম বলা হবে। সিদ্ধান্ত নিলেন বিদ্যুৎ দার এই হৃদয়স্পর্শী লেখাগুলোর পাঠ রেকর্ড করে সিডি বের করবেন। অতঃপর আহমেদ হোসেন তার অনবদ্য পাঠের রেকর্ড -‘মাটির টানে’ নাম দিয়ে এলবাম বের করলেন। বলা বাহুল্য মাটির টানের এলবাম শ্রোতামহলে বিপুলভাবে সাড়া ফেলে দিল। আমি বারবার মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। যেমন সহজ সরল কথার হৃদয়স্পর্শী অনবদ্য বুনন, তেমনি সাবলীল ও পরিমিত আন্তরিক আবেগের অনবদ্য পাঠ। বাংলাদেশের সোঁদা মাটির গন্ধমাখা প্রকৃতির অপরূপ ছবি, পালতোলা নৌকা বয়ে চলা ছলচ্ছল নদীর আন্দোলিত ঢেউ, শুভ্র কাশবনে বাতাসের তোড়ে এলায়িত নৃত্যের ভাষাচিত্রের ছবি। আহমেদ হোসেনের মমতাময়ী উচ্চারণে মাটির টানের গদ্য পাঠ শুনে আমার প্রবলভাবে মনে হয়েছে – আপাত নিরীহ বিদ্যুৎ সরকারের প্রাণে হৃদয় তোলপাড় করা এক খাঁটি কবি প্রাণের বসবাস।

৩. টরন্টো শহরের ডানফোর্থ এভিনিউয়ের রাস্তার পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরকারকে হাঁটতে দেখি মাঝে মাঝে। ধীর গতি। নির্বিকার। ছোট ছোট বিনীত পদক্ষেপ। রাস্তার পাশ ঘেঁষে ছোট পার্কে অথবা পার্শ্ববর্তী কোন বৃক্ষের ডালে হয়তো একটি উড়ে এসে বসেছে। গভীর মনোযোগে দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য অবলোকন করছেন বিদ্যুৎ দা। সহসা দূরে উড়ে যাওয়া কোন পতঙ্গের দিকেও তাঁর দৃষ্টি চলে যাচ্ছে দৈবাৎ! আবার কোন ফুলের উপর থেকে উড়ে যাওয়া প্রজাপতির রঙের আবির স্থির করে রেখেছে তাঁর আঁখির অঞ্জন। অথচ, ফিল্ম ফোরাম অফিসে প্রায়শই কোন সভা, অনুষ্ঠান, ছবি, গান, রাজনীতি, লুটের বিরোধী আন্দোলন, কবি-কবিতা, সাহিত্য, শিল্পী-শিল্প ইত্যাদি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা সরগরম হয়ে ওঠে। বিদ্যুৎ দা চুপ। ঠোঁটের কোণে একটি মিষ্টি হাসি ও উৎসুকভাবে তিনি কেবল শুনবেন। কিন্তু প্রায় কখনোই তিনি কিছু বলেন না। চুপ থাকেন। এ নিয়ে তার কোন উদ্বিগ্নতা নেই। অস্থিরতা কিংবা অস্বস্তি নেই। কেননা, আমি জানি, তাঁর কোন অভিযোগ নেই? আমি জানি, নিজের কথা বলা তাঁর প্রবণতায় নেই? আমি জানি, কুৎসিত কোন কিছু তাঁর দৃষ্টির সীমানায় থাকে না। আমি জানি, প্রাত্যহিক জীবন যাপনে তাঁর নিজস্ব অভিধানে কয়েকটি শব্দই নেই : না, শত্রæ, শাসন, স¤প্রদায়। কোথাও তাঁর উপস্থিতিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় না। কিন্তু বাতাসের মতো এই মানুষদের অনুপস্থিতিই একটি নির্মল মানবিক বিশ্বকে অমানবিক করে তুলে। না থাকলেই কেবল তাঁদের অনুপস্থিতি মানুষ টের পায়! দমবন্ধ হয়ে যাওয়া এক অনাকাক্সিক্ষত পৃথিবী সেটা! আমি তাঁদের দেখি। গোপনে আরো বেশি করে দেখি। কত্ত সুন্দর মানুষ আছেন আমাদের চারপাশে এখনো! বিদ্যুৎ সরকার, আমাদের এক অজাতশ্মশ্রæ অগ্রজ বন্ধুর নাম।
দেলওয়ার এলাহী

স্ত্রী, কন্যা ও জামাতার সাথে বিদ্যুৎ সরকার

দশ.
শুভ জন্মদিন দাদু
বিদ্যুৎ দা’র ৭১তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা। আমাদের সদাহাস্য চির তরুণ বিদ্যুৎ দা এখনও ফরিদপুরের অনেক নারীর সাথে নাড়ীর টান অনুভব করেন। আমার বাড়ি ফরিদপুর জেনে, আমার প্রতি পক্ষপাত; প্রশয় আর তাঁর বাড়তি ভালোবাসা ও স্নেহ আমিও অনুভব করি। দাদা সম্পর্কে আমি আর একটু পারসনালাইজড করি। আমি তাকে ‘দাদু’ বলে ডাকি। বিদ্যুৎ দা’ও মাঝে মাঝে আমাকে ‘দাদু’ বলে ডাকেন। আমার এই দাদুর দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করি।
সাহিদুল আলম টুকু

এগার.
ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র বাংলা পাড়ায় হাঁটার সময় একজন ব্যক্তিকে দেখলে একটি গানের কথা আমার প্রায় মনে পড়ে যায়,
রং চটা জিন্সের প্যান্ট পরা
জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে ধরা,
লাল শার্ট গায়ে তার বুক খোলা
সানগøাস কপালে আছে তোলা,
রাখ না কেন ঢেকে ঐ দুটি চোখ
হে যুবক-
সেই যুবক আমাদের সবার প্রিয় বিদ্যুৎ দা। সত্তর বছর বয়সেও যিনি অবলীলায় জীবন পথে হেঁটে চলেন একজন যুবকের মত, কিন্তু মানুষ আর সমাজের প্রতি এক পরম ভালোবাসা নিয়ে। আমার ভালো লাগে, এই মানুষটি আমার বন্ধু যার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখি কিভাবে মানুষকে সম্মান জানাতে হয় আর বিনয়ী হতে হয়। আমাদের প্রিয় বিদ্যুৎ দা’র জন্মদিনে আমার পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
ফয়েজ নুর ময়না
বার.
“সত্তর বছরের যুবা বিদ্যুৎ সরকারকে অভিনন্দন। কলম এবং ক্যামেরা চলুক যুগপৎ।”
শাকিল হান্নান

তের.
ওহ! অমলকান্তি। ওহ! বিদ্যুৎ দা-
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বিখ্যাত কবিতা ‘অমলকান্তি’। কবিতায় অনেকেই অনেক কিছুই হতে চেয়েছিল, কেউ মাস্টার, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল আর অমলকান্তি শুধু রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো – কিন্তু অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। টরন্টো শহরে সেই রোদ্দুর হতে না পারা অমলকান্তিকে আমি প্রতিনিয়ত দেখি। সেই অমলকান্তির সংগে আমি টরন্টোর জনপথে হাঁটি, রাস্তায় জীবনানন্দ দাশের ট্রামগাড়ী দেখি, ছবি তুলতে যাই, হ্রদের ঢেউ দেখি, হাড় হিম করা ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে যাই, পাতা ঝরা উৎসবে দ্বিতীয় বসন্তে মেতে উঠি।
সেই অমলকান্তি আমাদের বিদ্যুৎ দা- বিদ্যুৎ সরকার। ডাক নাম খোকন।
পারভেজ চৌধুরী

চৌদ্দ.
২০১৩ সালের আগস্ট মাসের এক সকালে ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র রাস্তার অপর পারের কফি টাইম এর টেবিলে মুখোমুখি বসে প্রথম কথা হয়েছিল বিদ্যুৎ দা’র সাথে। কানাডায় আসার তখন আমার কেবল মাস পেরিয়েছে। তখন টরন্টোতে একেবারে আত্মীয়-বন্ধুবান্ধহীন এক মানুষ আমি। নিজের মত থাকি, ঘুরি আর টরন্টো শহর দেখি। তখন বারে বারেই হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠতো রাজশাহী আর ঢাকার আড্ডার সব স্মৃতি।
কফি টাইম এ কফি খেতে খেতে বাংলা কাগজগুলো পড়ে পড়ে সময় কাটাই। বিদ্যুৎ দা’র সাথে প্রথম আলাপে বলেছিলেন লেখালেখি করি কি না। তারপর একদিন তিনি কফি টাইম এর অপর পারের সাপ্তাহিক ‘আজকাল’ এর অফিসে নিয়ে গেলেন। তখন জেনেছিলাম তিনি ওই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক।
বিদ্যুৎ দা’র ভালোবাসায় সেই মাসেই ‘আজকাল’ এ আমার একটা লেখা বের হয়েছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ আর সিনেমাটোগ্রাফার মিশুক মুনীরকে নিয়ে। সেই আগস্টের দু’ বছর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই দুই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিকে আমরা এক দূর্ঘটনায় হারিয়েছিলাম। সেই দু’জনের সেই সময়ের সাথে আমার ছিল এক দ্গদগে স্মৃতি। সাপ্তাহিক ‘আজকাল’ এ লেখাটি বের হবার কিছু দিনের মধ্যেই দেখলাম বেশ কিছু মানুষ আমার সুহৃদ হয়ে গেলেন।
তারপর বিদ্যুৎ দা’র সংস্পর্শ, সাহচর্য আর ‘আজকাল’ এর আড্ডায় টরন্টো আমার কাছে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো আমার রাজশাহী আর ঢাকা। তখন আমার বার বার মনে হয়েছিল, এই পৃথিবীর যে কোন নগর বা প্রান্তর নিমিষেই হয়ে উঠতে পারে আমাদের প্রাণের স্থান, যদি থাকে বিদ্যুৎ দা’র মত এক সুন্দর মনের মানুষ, যার থাকে অবলীলায় প্রাণকে স্পন্দিত করে তোলার এক মোহনীয় ক্ষমতা।
মাঝেই মধ্যেই ভাবি, আমার এই চলার পথ দেখানো বিদ্যুৎ দা’র কাছে আমার অনেক ঋণ, যা কখনোই এ জীবনের শোধ হবার নয়। মুহূর্তেই আবার ভাবি, তাঁর ঋণ পরিশোধের স্পর্ধা আমি দেখাই কোন সাহসে। তিনিতো আমার বটবৃক্ষ, যার ছায়া আর আশ্রয়ে বয়ে যাবে আমার জীবন নদী, আজীবন-
শুভ জন্মদিন দাদা আমার!
মনিস রফিক

পনের.
রং চটা জিন্সের প্যান্ট পরা।
সাথে তার এক রঙা জুতো পরা
কাঁধে তাঁর একখানা ক্যামেরা ঝোলা।
সানগøাস আছে তাঁর কপালে তোলা।
চলনে-বলনে, ভেতরে-বাহিরে, মাটির মানুষ।
৭০ পাড়ি দিয়েও,
হে যুবক!
আমার দা, তোমার দা
বিদ্যুৎ দা, বিদ্যুৎ দা
৭১তম জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা দাদা।
জগলুল আজিম রানা

ষোল.
আজ ১৯ ডিসেম্বর।
আজ আমাদের দাদা বিদ্যুৎ সরকারের ৭১তম জন্মদিন। কানাডার স্বল্প প্রবাস জীবনে যে ক’জন ঘনিষ্ঠজন আছে, তার মধ্যে বিদ্যুৎ অন্যতম। টরন্টো ফিল্ম ফোরামে আমাদের আড্ডায় নিয়মিত উপস্থিতি এই মানুষটির। বিকাল হলে ফোন, দাদা আমাকে জানালো ড্যানফোর্থে থাকো একসাথে হাঁটতে যাব তারপর আড্ডায় যাবো। যথারীতি আমি ড্যানফোর্থে এ পৌঁছে দেখি দাদা দাঁড়িয়ে আছেন, এবার দুজনে হাঁটা শুরু আরা নানা রাজ্যের কথা। কোন একটি প্রসঙ্গ নিয়ে নয়, বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ হতে থাকে আমাদের মাঝে। আমাদের বয়সের ব্যবধান খুব কম নয়, তবুও দাদার সঙ্গে আমার বন্ধুর মত সবকিছু নিয়েই আমাদের আলাপচারিতা।
বিদ্যুৎ দা একজন সুদক্ষ ফটোগ্রাফার, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ দার ছবি তোলার সঙ্গী হয়েছি। দল বেঁধে কানাডার বিভিন্ন সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মন উজাড় করে দাদার ছবি তোলা এবং সেগুলি নিয়ে আবার আমাদের আলোচনা। আমার জীবনে বিশাল পাওয়া এমন একজন মানুষের সঙ্গ পাওয়া, আমি বল?ত পারি বন্ধু হিসাবে পাওয়া। যাপিত জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখ কষ্ট এই মানুষটিকে কোনভাবেই ছুতে পারে না। কারণ মানুষটি মধ্যে কোন ধরণের অহংকার বোধ নেই।
দাদা, ৭১তম জন্মদিনে আমার প্রাণঢালা অফুরন্ত শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
আরিফ হোসেন বনি

সতের.
বিদ্যুৎ দা, যার সাথে পরিচয়ের পর্বটা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে কোন এক অনুষ্ঠানে। যেখানে তিনি এক চিত্রগ্রাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। “প্রথম দর্শনে প্রেম” এর মতই সেদিন তাকে দেখে ভাল লেগেছিল। পরিচয়ের সুত্রে ঠিকানা চাওয়ায় “আজকাল” পত্রিকায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেই সাথে যাতায়াতের একটা সেতু বন্ধন রচিত হয়েছিল। নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে প্রায়শই তাঁর অফিসে গিয়ে অতিথির সীমা লংঘন করে বিরক্তির কারণ ঘটিয়েছি। তাঁর লেখায় একটা উতকর্ষতা আছে। বিভিন্ন আঙ্গিকে সুন্দর করে তিনি লিখেন। যেহেতু সতীর্থের খাতায় নাম আছে, সেহেতু আমার সাথে তাঁর মনের মিলটাও প্রকট। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে ‘টরন্টো ফিল্ম ফোরাম’ এর খেয়াঘাটে নাও ভিড়িয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন বজ্র আঁটুনির দৃঢ়তা পায় যা আজো ফসকো গেরোতে রূপ নেয়নি।
আমার দৃষ্টিতে বিদ্যুৎ দা’কে একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবেই দেখে আসছি। স্বল্পভাষী স্মিত হাস্যে জীবন দর্শন এবং চোখের ভাষায় দূরদর্শিতা জীবন্ত হয়ে ফুতে ওঠা অনুভব করেছি।
এহেন পরনিন্দা-বিদ্বেষী মানুষটার শতবর্ষ আয়ূষ্কাল কল্পে অনাগত জীবনালেখ্য চিরভাস্বর হয়ে থাকুক এটাই কাম্য।
দেলোয়ার হোসেন দুলাল

আঠার.
একজন সুন্দর নির্লোভ মানুষের কথা স্মরণ করতে গেলে যে মানুষগুলোর কথা আমার প্রায়শ মনে পড়ে তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন, আমাদের সবার প্রিয় বিদ্যুৎ সরকার, যার কথা ও কাজে সব সময় ফুটে ওঠে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। বিদ্যুৎ দা মানুষকে বিচার করেন তার মনুষ্যত্ব নিয়ে। তিনি সব সময়ই জাতি, ধর্ম ও বর্ণের উর্ধ্বে থেকে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। টরন্টো’র বাঙ্গালী কমিউনিটিতে বিদ্যুৎ দা’র এই সুন্দর জীবনাচারের জন্য তিনি সকল পর্যায়ের মানুষের কাছে এক অতি প্রিয় মুখ।
তাঁকে পাওয়া যায় ক্যামেরা হাতে অথবা টরন্টো’র বিভিন্ন বাংলা পত্রিকার বিভিন্ন লেখায়। আমাদের আড্ডায় অন্যতম স্বল্পভাষী সদস্য হলেও তিনি যখন অল্প কথায় কোন বিষয়ে কোন কথা বলেন, তখন আমরা সবাই চুপ হয়ে তাঁর কথা শুনতে থাকি। তিনি এক সুন্দর মানুষ। তিনি আমাদের সবার প্রাণের মানুষ। তাঁকে আমরা সবাই ভালোবাসি। তাঁর সত্তরতম জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার হৃদয়ের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।
সোলাইমান তালুত রবিন

উনিশ.
নগদের বাঁচা আজ,শূন্য পড়ে থাক কালের ঘরে
টানটান নিশ্বাসে হাসি ভরে ফুসফুসে
ভাবনার পাতা উড়ে বাতাসে
গোপিকান্ত গোঁসাইয়ের মত মেজাজটা ফুরফুরে
দাদা দাঁড়িয়ে মাত্র একাত্তরে।
জন্মদিনটা শুধু সংখ্যা বাড়ায় তাতে কি আসে যায়
সফর হউক বাঁচার আনন্দ ঘিরে
বৃথা কেন নষ্ট সময়, গন্তব্য কোথায় কে মাথা ঘামায়
বাঁচার জন্য সংখ্যা কি আর মেটার করে?
এইতো সময় মধুময় যাপন
নেই ছেলেবেলার সিলেবাসের শাসন
অফিসের ঝামেলা নেই ফাইলের দায় নেই ঘারে
নেই কাজের বালাই স্মৃতির আঙিনায় কোথা দিয়ে কোথা চলে যাই
কখনো প্রকৃতিতে বিচরণতো কখনো মানুষের ভীড়ে
নাই সময়ের বাঁধন বেড়িয়ে পড়ি যখন তখন
তুড়ি মেরে বয়সটাকে
ফোরামের সন্ধ্যায় আড্ডার প্রতিদিনের যাপন
ইউটিউব হৈচৈ, চা আর সিঙাড়ায় রাতের বয়স বাড়ে
বাঁচার জন্য সংখ্যা কি আর মেটার করে?
বয়সটা ধরা থাক তারিখের ক্যালেন্ডারে
কি লাভ ফারাক খোঁজে যদি আশঙ্কা বাড়ে
এই হাসি অমলিন থাক দীর্ঘকাল
দীর্ঘ জীবন সুস্থ শরীরে
জপে, তপে, দোয়ায়, মৌন মন্তরে
রেখেছি আমাদের অন্তরে
আমাদের বিদ্যুৎ দা চির সবুজ এই একাত্তরে।
হিমাদ্রী রয়

কুড়ি.
বিদ্যুৎ আমার ভাই। মা’র কাছে শুনেছি ওর জন্ম কিশোরগঞ্জ। ও ছোট বেলায় খুব চঞ্চল ছিল। আমি ওর বড়। আমি পড়তে বসলে ও পেছন থেকে এসে আস্তে করে আমার বইটা বন্ধ করে দিত। আবার মাঝে মধ্যে এসে চুলটা টান দিয়ে যেত। আর ছোট থাকতে সে সাপ ধরতে যেত। ও খুব চটপটে ছিল। ও কিশোরগঞ্জ হাই স্কুলে পড়তো, ও ভাল ছাত্র ছিল।
প্রহেলিকা সরকার খুকি
কোলকাতা

একুশ.
আমি ভিনসিলিয়াস ডি রোজারিও বিদ্যুৎ সরকারের কন্যার জামাই। আমরা দু’জন বাসায় একদল আর মা-মেয়ে তারা একদল। আমার ও আমার শ্বশুরের অনেক কিছু মিলে, যেমন আমরা দু’জনেই ক্রিকেট পাগল ও এক সাথে বসে চানাচুর-মুড়ি খাওয়া পছন্দ করি। মানুষকে পচাতেও আমরা দু’জন ওস্তাদ। যাই হোক, বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়। এত কিছু আর নাই বললাম। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
ভিনসিলিয়াস ডি রোজারিও

বাইশ.
আমি বিদ্যুৎ সরকারের একমাত্র মেয়ে। আমি প্রথমেই বাবাকে বলতে চাই, হ্যাপী বার্থ ডে বাবা! বাবাকে নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়, আমি ছোটবেলার কিছু স্মৃতি উল্লেখ করতে যাই। আমরা কালচারালি অনেক সমৃদ্ধ একটি পরিবার। ছোট বেলা থেকেই আমি বিভিন্ন ধরনের গান শুনে এসেছি। এর জন্যে বাবা সব সময়ই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর একটা গুণ আমার ভিতরেও আছে, সেটা হচ্ছে ফটোগ্রাফী। আপনারা জানেন আমার বাবা একজন ভালো ফটোগ্রাফার। তাঁর অজস্র গুণ আছে যেগুলো আমি সব সময় গ্রহণ করার চেষ্টা করি। আমার বাবার সাথে আমি সব সময় ওপেন। তিনি আমার খুব ভালো একজন বন্ধু। সত্যি বলতে কি, তিনি আমার জীবন।
ঝিলিক মেরেলিন সরকার