শাহনুর চৌধুরী : সারা বিশ্বের মতো কানাডাতেও পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি শুধুমাত্র মোটর বাইক ও প্রাইভেট কারেই সীমাবদ্ধ আছে। বড় আকারের যানবাহন যেমন ট্রাক অথবা বাস-মিনিবাসগুলো এখনো শতভাগ ব্যাটারি চালিত হতে পারেনি। তবে বৈদ্যুতিক যানবাহনের পরবর্তী ধাপে এগুলো যুক্ত হতে পারে। শিগগিরই ইভির পরবর্তী ধাপ আসছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে কানাডাজুড়ে রাস্তা ও হাইওয়েগুলোতে বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রমবর্ধমানহারে বাড়ছে। রাস্তার পাশে পেট্রোলপাম্পের মতো চার্জিং পয়েন্টের সংখ্যাও অনেক বেশি দেখা যায়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত ট্রাক দেখা বিরল। বিশেষ করে পিকআপের চেয়ে একটু বড় যানবাহনগুলো এখনো গ্যাসোলিন অথবা জ্বালানী দিয়েই চলছে।

তবে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই ক্যালগারি ভিত্তিক এনম্যাক্স এক জোড়া নতুন ট্রাক নামিয়েছে যা বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে। এনম্যাক্স বলছে, এটিই কানাডার প্রথম মাঝারি আকারের প্রথম বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার। এই ট্রাক জোড়া বছরে ৪ হাজার ৩০০ লিটার ডিজেল সাশ্রয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এনম্যাক্স পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট জনা মোসলে বলেন, এই মাঝারি আকৃতির একটি বৈদ্যুতিক ট্রাকের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম। ইঞ্জিনের গাড়ির তুলনায় এই ব্যাটারির গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৫০ শতাংশ কম। কোম্পানি আশা করছে তাদের বহরের মোট ৪০০ গাড়ির সবগুলোই ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তর করা হবে। এসব গাড়ির মধ্যে বড় আকৃতির ট্রাকও রয়েছে।

তবে যখনই ব্যাটারি বা বিদ্যুৎশক্তিতে বড় ট্রাক চালানোর কথা আসে তখনই চার্জিং স্টেশনের স্বল্পতার কথাটি ভাবতে হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এনম্যাক্স নিজস্ব চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কথাও চিন্তা করছে।

অন্যদিকে বাইসন ট্রান্সপোর্ট পরীক্ষামূলকভাবে গত গ্রীষ্মে দুই মাসের জন্য এক জোড়া বৈদ্যুতিক কার্গো ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত চালিয়েছিল। করোনা মহামারি আর সীমান্ত অতিক্রমের কিছু ঝামেলা ছাড়া তাদের ওই প্রকল্প সফল ছিল বলে কোম্পানি দাবি করছে।

বাইসন ট্রান্সপোর্টের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক গোমস বলেছেন, বর্তমানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে এ ধরনের বড় বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রাপ্যতা। কারণ এগুলো সস্তা নয়, বর্তমান গাড়ির দামের প্রায় দ্বিগুন। তাছাড়া এই বিশাল আকারের যানবাহনগুলোর জন্য উপযুক্ত চার্জিং স্টেশন নির্মাণেরও প্রয়োজন রয়েছে। গোমেস বলেন, এই বিষয়গুলোর জন্য কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের শিল্পে অবশ্যই বড় আকারের বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে। সা¤প্রতিক বাজেটে ফেডারেল সরকারও মাঝারি ও ভারি যানবাহনের ক্ষেত্রে কার্বণ নির্গমণ শূন্যে নামিয়ে আনতে আগামী চার বছরের জন্য ৫৪৭.৫ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের কথা বলেছে। সরকার চায় ২০৩০ সালের মধ্যে এ ধরনের যানবাহনের ৩৫ শতাংশ যেন বৈদ্যুতিক গাড়িতে পরিণত হয়। এ বিষয়ে ক্লিন এনার্জি কানাডার ক্লিন ট্রান্সপোরটেশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার জোয়ানা কিরিয়াজিস বলেন, এটি সরকারের উচ্চাভিলাসি লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি। তবুও আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

আর তা-ই যদি হয় তাহলে শিগগিরই কানাডার পথে পথে দেখা যাবে বৈদ্যুতিক বাস ও ট্রাক। সূত্র : সিবিসি