রেজাউল ইসলাম : গত ২৫শে মার্চ, শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে টরন্টোর নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের সার্বিক পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় ২৬৭০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র বাংলাদেশ সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস এ ‘ইয়ুথ রিফ্লেকশন অন লিবারেশন এন্ড চেঞ্জ’ শিরোনামে এক ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রতিকুল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে অনেকের উপস্থিতিতে অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের এই অনুষ্ঠানটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা না পর্যন্ত দর্শক-শ্রোতা এবং অভিভাবকদের কাছে অনুষ্ঠানটির বিষয়বস্তু একেবারেই অজানা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, এখানকার নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা, তাদের মতো করে তাদের বক্তব্য শোনা। আমরা অভিভাবকরা এবার শ্রোতার ভ‚মিকায় ছিলাম আর বক্তার ভ‚মিকায় ছিল নতুন প্রজন্মের কয়েকজন অসাধারণ মেধাবী তরুণ-তরুণী। যে সব বিষয় এই কমিউনিটিতে কখনই তেমনভাবে আলোচিত হয়নি, সেই সব বিষয় এবার এখানকার নতুন প্রজন্ম সবার সম্মুখে আলোচনা করেছে?

আমরা তাদের সেইসব অজানা কথা জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি এখানে বেড়ে উঠার মধ্য দিয়ে তারা আসলে কি মূল্যবোধকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ‘ল্যান্ড একনলেজমেন্ট’ এবং ‘এন্সেস্টরস প্রোক্লেমেশন’ দিয়ে। এই পর্বটিতে বক্তব্য রাখেন সৃজনী রহমান এবং মাহিমা শেখ। এরপর চমৎকার একটি গান পরিবেশন করে অরিত্রি। গানটি শেষ হবার পরেই দৃষ্টিনন্দন একটি নৃত্য পরিবেশন করে নুহা।

এরপর শুরু হয় মূল পর্ব। মূল পর্বের ‘প্যানেল ডিসকাশন’ এর মধ্য দিয়ে উঠে আসে এখানকার নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনা। সেখানে স্থান পায় নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের পটভ‚মি, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তারা বাংলাদেশ নিয়ে কি ভাবে, বাংলাদেশের কি বিষয় নিয়ে তারা গর্ব করে, উন্নত দেশের চোখে বাংলাদেশ কিভাবে চিত্রিত হয়। অভিবাসী বাবা-মা’র সাথে এই কানাডায় চলে আসার পর তাদের নানা রকম প্রতিবন্ধকতা, সিস্টেমেটিক রেসিজম, ওরিয়েন্টেশনের বৈচিত্র্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলি নতুন প্রজন্ম অত্যন্ত সাবলীল এবং প্রাণবন্তভাবে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে মূলত: নতুন প্রজন্মের সাথে আমাদের একটা সেতুবন্ধন রচিত হয়।

এই প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখে নতুন প্রজন্মের সৃজনী রহমান, নিকিতা সামিন, মাইসা জারিন, মাহিমা শেখ, সৌহার্দ্য ভদ্র।

এরপর শুরু হয় ‘ওপেন ডিসকাশন’। এই পর্বটিতে দর্শক সারি থেকে প্যানালিস্টদের সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। দর্শক সারি থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্যানালিস্টদের নানারকম প্রশ্ন করেন। কয়েকজন দর্শক প্যানালিস্টরা এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) কমিউনিটি’কে কিভাবে দেখেন, এক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা থেকে উত্তরণের পথ কি, অভিভাবকরাই বা বিষয়টিকে কিভাবে দেখছে, কিভাবে মোকাবেলা করছে ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। প্যানালিস্টদের মধ্য থেকে নতুন প্রজন্মের বক্তারা দর্শকদের পক্ষ থেকে করা সকল প্রশ্নের খুব সুন্দর যুক্তিসহকারে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে।

‘প্যানেল ডিসকাশন’ এবং ‘ওপেন ডিসকাশন’ এই দুটি পর্ব মূলত নতুন প্রজন্মের সাথে দর্শকদের ভাবের আদানপ্রদান। প্রবীণদের সাথে নবীনদের একটি মেলবন্ধন। অনুষ্ঠান সম্পর্কে নানাজনের মন্তব্য এবং স্বাক্ষর সংগ্রহের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সফলভাবে সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানটির জন্য স্পেস ফ্রি দিয়েছে বাংলাদেশ সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস।

আর পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন মান্নাফ লোকাস, সেলস ম্যানেজার, টরন্টো হোন্ডা।
পুরো অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দর এবং দক্ষতার সাথে কো-অর্ডিনেট করেন সৃজনী রহমান।