হাসান আমিন : উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এ বছর কানাডিয়ানরা তাদের খরচের হাতকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সংকুচিত করে ফেলছে। আর এতে করে ছুটির এ ভরা মওসুমে বিপাকে খুচরা বিক্রেতারা। অর্থ খরচ করাতে ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষির বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে গেছে তাদের জন্য।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ দিবস। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে। কানাডায়ও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দিনে ব্যবসায়ীরা পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় প্রদান করে থাকে আর এই ছাড়ের পরিমাণ থাকে অবিশ্বাস্য আর তা ক্রেতাদের মধ্যে হিড়িক ফেলে দেয়।

এই বছর বার্ষিক খরচের পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অফার থাকলেও তারা এমন গ্রাহকদের প্রেক্ষাপটে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যারা আগের চেয়ে বেশি খরচ সচেতন।

খুচরা পরামর্শদাতা ব্রæস উইন্ডার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি সত্যিই ডিসকাউন্টের বছর।’ ভোক্তারা দেখিয়েছেন যে তারা মিতব্যয়ী, তারা এই বছর কৃপণ এবং সুলভ মূল্যে বিক্রি না হলে তারা কিনতে যাচ্ছেন না।

বাজারে সবকিছুর একটি বড় যোগান থাকার কারণে ডিসকাউন্ট এই বছর স্বাভাবিকের চেয়ে অত্যাধিক হতে পারে। মহামারীর প্রথম দিকে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য সরবরাহের ধারাবাহিকতায় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, যার ফলে অনেক পণ্য বিভাগে খালি তাক ছিল। কিন্তু ওয়াইন্ডার বলেছেন, সে পরিস্থিতি এখন পুরোই ভিন্ন, কারণ অনেক খুচরা বিক্রেতার কাছে বছরের এই সময়ে তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পণ্যের মজুদ জমা হয়েছে – যা তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে আরও দ্রুততার সাথে এবং আগে ছাড় দেওয়ার জন্য এক রকম বাধ্য করছে।

এটি স্টকের বাইরে এমন অবস্থা থেকে কিছু ক্ষেত্রে ‘অত্যধিক স্টক’ মজুদ হওয়ার দিকে পরিবর্তিত হয়েছে; তবে এটি ভোক্তাদের জন্য ভাল, বলেন উইন্ডার। ইওয়াই কানাডার মুদি এবং ভোক্তা প্যাকেজড পণ্যের প্রধান এলিয়ট মরিস বলেছেন, খুচরা বিক্রেতারা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ধরা পড়ে।

অর্থনীতি মন্থর হওয়ার সাথে সাথে, এমন কিছু জায়গা রয়েছে যা স্পষ্টতই খুচরা বিক্রেতাদের সাথে তৈরি হয়েছে, তিনি বলেন। যেমন আমরা ছুটির মওসুমে ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, এতে করে যদি পণ্যের বিশাল অংশ তাকগুলোতে থেকে যায়… আপনি আরও বড় ছাড় দেখতে পাবেন। খুচরা বিক্রেতারা নিজেরাই এ বিষয়ে সচেতন যে গ্রাহকরা এই বছর অন্য বারের তুলনায় একটু বেশিই যাচাই-বাছাই করছেন। ফলে পণ্য অবিক্রিত থাকার শঙ্কায় অনেক খুচরা বিক্রেতাই হয়তো বø্যাক ফ্রাইডেতে ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে বাধ্য হবে।

মেলিসা অস্ট্রিয়া টরন্টোতে গটস্টাইল নামে একটি ইউনিসেক্স পোশাকের দোকান চালায়।
তিনি সাধারণত বছরের এই সময় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করেন না, তবে এখন তার দোকানটি ৫০ শতাংশ ছাড়ে কিছু স্যুট এবং স্পোর্ট জ্যাকেট অফার করছে। আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদের দৈনন্দিন নৈমিত্তিক গ্রাহক, যারা সাধারণত এখানে কেনাকাটা করেন না তাদের জন্য একটু বেশি মূল্য সংবেদনশীল জিনিস আনতে হবে, তিনি একটি সাক্ষাৎকারে সিবিসি নিউজকে বলেন।

কানাডার রিটেইল কাউন্সিলের মিশেল ওয়াসিলিশেন বলেছেন, তিনি এই বছরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আশাবাদী, তবে এটি স্পষ্ট যে মূল্য নির্ধারণ করা হবে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি মনে করি প্রত্যেকেরই মন্থর অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবে দেখে মনে হচ্ছে ভোক্তারা এখনও ব্যয় করছেন, তারা কেবল আরও চিন্তা-ভাবনা করে ব্যয় করছেন, তিনি একটি সাক্ষাৎকারে সিবিসি নিউজকে বলেছেন।

টরন্টোর ডিস্টিলারি ডিস্ট্রিক্টে কেনাকাটা করছেন প্রধিপা সাইমনপিল্লাই। তিনি বলেছেন, তিনি এই ছুটির মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কম খরচ করার পরিকল্পনা করেছেন। আমি একেবারে প্রয়োজনীয় না হলে কিছু কিনি না, সে জানায়। আমি এই মওসুমে অর্থ ব্যয় না করার জন্য সত্যিই সৃজনশীল উপায় খুঁজে বের করতে যাচ্ছি। আরেক ক্রেতা আমির আলি বলেছেন, তিনি শুক্রবার কেনাকাটা করার পরিকল্পনা করেছেন কারণ তিনি মনে করেন সেখানে কিছু অফার থাকবে।

অপর ক্রেতা অ্যানি টিথেরিজ বলেন, “আমার স্বামী এবং মেয়ে মনে করে আমি বø্যাক ফ্রাইডেতে কেনাকাটা করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।” অ্যানি অনলাইন শপিংয়ের চেয়ে সশরীরেই কেনা-কাটা করতে বেশি পছন্দ করেন। অ্যানি বলেন, যদি ভালো অফার পাই তাহলে কেন নয়?
সূত্র : সিবিসি নিউজ