অনলাইন ডেস্ক : ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে ৬০ বিঘার অধিক কৃষি জমির মালিক হওয়া যাবে না। উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জিত ভূমির ৬০ বিঘার অধিক হলে উত্তরাধিকারী পছন্দমত ৬০ বিঘা ভূমি রাখতে পারবে এবং অবশিষ্ট ভূমি সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে খাস করবে। তবে কেউ যদি ৬০ বিঘা জমি থাকা স্বত্ত্বেও বেআইনিভাবে নামে-বেনামে নতুন করে অধিক জমি ক্রয় করে তাহলে তার অতিরিক্ত জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং এক্ষেত্রে সরকার কোনো ক্ষতিপূরণ দিবেনা।

আজ বুধবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় সংসদে গতকাল গৃহীত তিনটি ভূমি বিষয়ক বিলের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেন। মন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। এই সময় ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ থেকে মানুষকে বিরত রাখা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব ও সাহসিকতার কারণে আমরা জাতিকে এই আইন উপহার দিতে পেরেছি।

সংসদ কর্তৃক গৃহীত তিনটি ভূমি বিষয়ক বিল হচ্ছে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’, ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এবং ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩’। এই তিনটি বিলে এখন রাষ্ট্রপতি সম্মতি দান করলে তা আইনে পরিণত হবে এবং আইন হিসেবে গেজেটের মাধ্যমে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য সংসদের আইন হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, এই ভূমি অপরাধ আইন প্রণয়নের পুরো প্রকৃয়াটি ছিল বেশ জটিল ও সংবেদনশীল।

আমরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করেছি এর খসড়া তৈরির সময়। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতার কারণে আমরা আমাদের ধারণা থেকে অনেক আগেই এই আইন দেশের জনগণকে উপহার হিসেবে দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, এটা একেবারে নতুন আইন। মাঠে কার্যকর হওয়ার পর আমরা বুঝতে পারব কী কী পর্যায়ে সংশোধন প্রয়োজন। তা অনুযায়ী পরবর্তীতে সংশোধন হবে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভূমিবিষয়ক অপরাধকে ৮টি মৌলিক ভাগে ভাগ করা হয়েছ, এসব হচ্ছে ‘ভূমি প্রতারণা’, ‘ভূমি জালিয়াতি’, ‘অবৈধ দখল’, ‘ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হস্তান্তর না করা’, ‘সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধন’, ‘সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধন’, ‘সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন, ইত্যাদি’, ‘মাটির উপরি-স্তর কর্তন ও ভরাট’। এ ছাড়া আরো ৪ ধরনের অপরাধকে সম্পূরক করা হয়েছে : আদেশ অমান্য, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা, অপরাধ পুন সংগঠন, কম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন।

ভূমি জরিপ সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা মূলত যেসব এলাকায় চলমান বিএস জরিপ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি সেখানে বিএস জরিপ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। যেহেতু শেষ পর্যন্ত সেখানে বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ) হবে, সেক্ষেত্রে এখন বিএস জরিপ পরিচালনার কোনো অর্থই নেই। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া বিএস কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি, অন্যদিকে আমরা আশা করছি এর চেয়ে অনেক কম সময়ে বিডিএস কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে। এতে মানুষের হয়রানি কমবে।

ভূমি জরিপ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেসব এলাকায় চলমান বিএস জরিপ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি সেসব এলাকায় আমরা মূলত বিএস জরিপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। যেহেতু শেষ পর্যন্ত বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) হবে, তাই এই মুহূর্তে বিএস জরিপ করার কোনো মানে হয় না। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া বিএস কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে, বিডিএস কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যেতে পারে। এতে মানুষের হয়রানি কমবে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন বিষয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধের বিচার কাজ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হবার বিধার রয়েছে এতে। ১৮০ কার্যদিবসে বিচার কাজ শেষ করতে হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান এতে প্রযোজ্য হবে। ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ, ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ, অবৈধ দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত আদেশ এবং অপরাধ পুন সংগঠনের বিচার ব্যতিত আইনে উল্লেখিত অন্যান্য অপরাধ তফসিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যাবে। এছাড়া, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ অজামিনযোগ্য এবং অন্যান্য অপরাধ জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য।

ভূমিসচিব জানান, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড, অন্যান্য অপরাধে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং একই অপরাধ পুন সংগঠন করলে দ্বিগুণ দণ্ডের বিধান রয়েছে আইনে।