জানা যায় পাথরের যুগের মানুষও সঙ্গীত এর প্রতি অনুরক্ত হয়ে মনের অজান্তে সুর ও ছন্দের খেলায় ধ্বনির ফোয়ারা তুলতো গুন গুন শুরে। যদিও এখন বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বাণিজ্য। হয়তো সেটা প্রয়োজনের তাগিদেই। তবে সঙ্গীত এর উদ্দীপন কিন্তু বাণিজ্য ছিল না। ছিল আহত বেদনাময় মরমের ক্ষরনে লাগানোর জন্য একটু মলম, একটু আরাধনা বা প্রার্থনা। তাই আমার কাছে মনে হয় সঙ্গীত জগতের অবয়ব নিয়ে আরো নিরিক্ষন দরকার। দরকার সঙ্গীত নিয়ে আমাদের আরো পরিচিন্তনে পরিজ্ঞাত হওয়া।
প্রবাসি জীবন যেনো তেতিয়ে পড়া প্রাণধারন, কোনমতে অতিবাহন। ফেলে আসা অতীত আর দেশের মাটির সুদা গন্ধে কার না অকষ্মাৎ ঘুম ভাঙে? ইন্দ্রপুরী জয়ের জৌলুস নেশায় উড়াল দিতে গিয়ে সুদুর প্রবাসের এই আটলান্টিক এর চরে ডানা ভেঙ্ েপড়ে গিয়ে আর ফিরে উড়াল দিতে না পারার বেদনায় কোন্ বাঙালির না মন হাহাকার করে উঠে? তাই এই বাঙলা গান আর তার সুরই আমাদেরকে যেনো এই পরদেশী বদ্ধ ঝিলের জলে এখনও জিইয়ে রেখেছে। কখন যে মন হাঁক দিয়ে ডেকে উঠে, বলে; ‘হায়রে কোথায় আমার সবুজ বাংলার ঐতিহ্যাশ্রয়ী কৃষ্ঠি ও সংস্কৃতি ভরা বৈচিত্র্য বর্ণিল ষঢ়ঋতুর দেশ! কোথায় আমার আউল বাউল লালন, হাছন, আব্বাস, জসিম, করিম? কোথায় সেই সবুজ গালিচা পাড়ে ঘেরা বাদামি ধুলোর উঠোন? রঙ ধনু রঙের আল্পনার মত মানুষের রঙিন মন আর লতাঘেরা সবুজ বিতান। এখানে মৃদু বাতাসের দোলায় সবুজ ধানের ক্ষেতে নদীর মত তরঙ্গ স্পন্দন উঠে না। এখানে বৈশ্বিক সংস্কৃতি প্রবাহ। বহুমাত্রিক কৃষ্টি আর সভ্যতার উন্মুক্ত বিতানে আমরা হয়তো অনুশীলন করে শিখে নিতে পেরেছি বিশ্ব সংস্কৃতির খাপে খাপ মিলায় কেমন করে বাঁচতে হয়। কিন্তু বহুমাত্রিকতার আবর্তে বাঙালি সংস্কৃতি কি না হারিয়ে যায় এমন এক উদ্বেগ কাজ করে চলছে সচেতন বাঙালি ও সংস্কৃতি প্রেমি অভিবাবক হৃদয়ে। সঙ্গীত শিক্ষক হৃদয়ে ত বটেই। এমনি একজন সঙ্গীত শিক্ষক ‘আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক’ এর অধ্যক্ষ জনাব এ এফ এম আলিমুজ্জামান। যিনি বিগত ‘দুই হাজার চার সাল’ টরন্টোস্থ বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ‘আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক’ নামে তাঁর সঙ্গীত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কানাডায় বসবাসরত কোমলমতি শিশু কিশোর সহ সঙ্গীত সাধনায় আগ্রহী যে কোন শিক্ষার্থী যেনো সঠিক পদ্ধতিগত ভাবে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য যেনো বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতার আবর্তে হারিয়ে না যায় সে চ্ষ্টোই তাঁর ব্রতি। কানাডার বহুমাত্রিক মূলধারার সমাজের সাথেও বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির চিরন্তনী অনিন্দ্য রূপকে তুলে ধরে আমাদের প্রজন্ম তাদের কল্পলোকে অবলিলায় বিচরন করতে পারে এমন সত্যনিষ্ঠ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি এ স্কুল প্রতিষ্ঠা অতপর তার পৃষ্টপোষকতায় নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বুলবুল ললিতকলা একাডেমির একাডেমির সিলেবাস অনুসরন করে তিনি “আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক” সিলেবাসও নির্মাণ করেন।
দেখতে দেখতে ‘আলমপিয়া স্কুল প্রতিষ্টা ও পরিচালনার সময় প্রায় ১৬ বছর পার করে ১৭ তে পা দিল। উচ্ছাঙ্গ সঙ্গীত, নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, গজল, লোকগীতি, সার্গাম সহ স্প্যানিশ গীটার, তবলা, পিয়ানো, চিত্রাঙ্কন ও বিনা বেতনে বাঙলা ভাষা শিক্ষা অত্র স্কুলে দান করা হয়। প্রায় ১৫/১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী বিভিন্ন বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্টানে নিয়ত নিরলস শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
একজন সুরের সাধক হিসাবে তিনি তাঁর এত সুর আর গান ভাবী প্রজন্মের কণ্ঠে কণ্ঠে নিভৃতে স্বযতেœ গোঁজে গোঁজে রাখছেন। যাবো ত আমরা সবাই, তিনিও যাবেন।
হাড় কাপুনি শীত প্রধান দেশে এত ব্যস্ততার মধ্যেও শিশু কিশোর ইতিমধ্যে ‘আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক’ এর শিক্ষার্থীরা যে টুকু জ্ঞান-শিক্ষা অর্জন করেছে তাতে নিশ্চিত বলা যায়; আঁধার ঘরে স্বপ্ন-শিখার প্রদীপ যেনো গভীর ও নিবিড় প্রজ্জ্বোলনে হাত ছানি দিচ্ছে। তার এক প্রমাণ স্বরূপ গত ২০১৯সাল এর ৩০ সে নভেম্বর, শনিবার, সন্ধ্যে ৬টায় টরন্টোস্থ ৯ ডজ রোডের রয়েল কানাডিয়ান লিজিওন হলে ‘আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক’ এর ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় “গানে গানে সুরে সুরে” নামে ঈপ্সিত, অমলিন একটি অনবদ্য সুন্দর সাংস্কুতিক অনুষ্টান এর সাথে মারিয়া এবং নিশীথ প্রশান্তি নির্ঝুম এর øাতক উপাধি ধারনের আনুষ্ঠানিকতা উদযাপন হয়েছে। অনুষ্ঠানটিতে মারিয়া খন্দকার ও নিশীথ প্রশান্তি নির্ঝুমের øাতক অনুষ্ঠান উদ্যাপনের সাথে সাথে ছিল যথাক্রমে: ওহঃৎঁসবহঃধষ ংবমসবহঃ; এঁরঃধৎ, ঞধনষধ, এৎড়ঁঢ় ঢ়বৎভড়ৎসধহপব, চড়বঃৎু ৎবপরঃধষ, উঁবঃ ঝবমসবহঃ, ঞধমড়ৎব ংড়হম, ইধহফ ংড়হফ, উঁবঃ ংবমসবহঃ. অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিল জাহিদুল কবির রিয়াদ। অনুষ্ঠানে একটি সুনিপণ স্মরণিকাও প্রকাশিত হয়েছিল। স্মরণিকায় অন্যান্য অভিপ্রায়ী স্বেচ্ছাসেবীদের নাম উলেখিত আছে। সবশেষে অত্র স্কুলের উপদেষ্ঠাদের হাত দিয়ে স্বসম্মানে স্নাতক উপাদি প্রাপ্ত ছাত্রী দু’জনকে ঈবৎঃরভরপধঃব ফরংঃৎরনঁঃরড়হ এর পর অধ্যক্ষ এ এফ এম আলিমুজ্জামান এর সহধর্মিনী স্কুলের চিফ এডিটর এর প্রাণভরা সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। জানান স্কুলের সকল শিক্ষক মন্ডলী সহ আরো আরো যারা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে তাদের সবাইকে। অভিবাবকদের আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। সবাই হাসিমুখে বাড়ী ফিরলো এটাই বড় পাওনা।
একজন পরিপূর্ণ শিল্পীরূপে তৈরি হলো কি হলো না এ বিতর্কে নয় বরঞ্চ এই কঠিন যান্ত্রিক জীবনের ধকলে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ কাজ করে করে কতটুকু পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষার্থীরা কথা, সুর, লয়, ছন্দ ও তালের শুদ্ধতা বজায় রেখে নিপুণ সাঙ্গীতিক কারুকার্যতার দক্ষতা নিয়ে এগিয়ে এসে আমাদের উপহার দিতে চেষ্টা করেছে সেই স্বীকার উক্তিটা তাদেরকে দেয়া অভিবাবক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব ছিল বলে আমি মনে করি। নভেম্বর ৩০ তারিখ সন্ধ্যের আলো-আঁধারির মায়াবী লগনে ৯ ডজ রোডে অনুষ্ঠিত “আলমপিয়া স্কুল অব মিউজিক” এর অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত হয়েছিলেন আশাকরি তাঁরা বৃতা সময় নষ্ঠ মনোভাব নিয়ে বাড়ী ফেরেননি। যাঁরা বাঙালি প্রজন্মদের কষ্টার্জিত প্রতিপাদ্য শিক্ষার ফল উপভোগ করে তাদেরকে উৎসাহ ও উদ্দীপণা জাগিয়েছেন তাদের সকলকে জানাই অষীম কৃতজ্ঞতা। সবাই ভালো থাকি এই শুভ কামনা। জামানা হাসিনা, টরন্টো