Home কানাডা খবর এবারের অন্টারিও নির্বাচনে অনেক বিষয় থাকলেও আদিবাসী সমস্যা তাদের মধ্যে নেই :...

এবারের অন্টারিও নির্বাচনে অনেক বিষয় থাকলেও আদিবাসী সমস্যা তাদের মধ্যে নেই : পর্যবেক্ষকদের অভিমত

শাহনুর চৌধুরী : গত তিন সপ্তাহ ধরে অন্টারিওর প্রাদেশিক নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতারা অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তারা বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেছেন এবং সেগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতা, আবাসন সমস্যা ও স্বাস্থ্য সেবা। পরের মাসের ভোটে নির্বাচিত হলে তারা এসব সমস্যা কিভাবে সমাধন করবেন তার রোডম্যাপও দিয়েছেন। কিন্তু আদিবাসীদের সমস্যাগুলো নিয়ে এখনো প্রার্থী ও নেতারা যথেষ্ঠ সরব হননি।

বর্তমান ও সাবেক কিছু রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের অন্টারিও নির্বাচনে প্রার্থীরা অনেক বিষয়ে কথা বললেও এসবের মধ্যে আদিবাসীদের সমস্যার কথা নেই। অন্টারিওর প্রধানগণ এপ্রিলের শেষদিকে ১৩৩ জন ফার্স্ট নেশন প্রধানদের নিয়ে একটি ফোরামের আয়োজন করেছিলেন যেখানে প্রধান ৪টি রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচিত হলে তাদের অগ্রাধিকারগুলো সম্পর্কে জানা।

কিন্তু অ্যাসেম্বলি অব ফার্স্ট নেশনস ফর অন্টারিওর আঞ্চলিক প্রধান গেøন হেয়ার বলেছেন, তিনি দলগুলোর কাছ থেকে কিছুই শুনেন নি। অর্থাৎ আদিবাসীদের বিষয়ে নেতারা তেমন কিছুই বলেননি। হেয়ার বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। আমি ভেবেছিলাম আমরা কোথাও যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের আশা পূরণ হয়নি।’

তিনি অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর আমরা যতই এগিয়ে যাচ্ছি, নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমাদের ততই অবজ্ঞা করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোন দলই এখন পর্যন্ত আদিবাসীদের জন্য আলাদা কোন নীতি ঘোষণা করেননি এবং প্রধান দলগুলোর কোন নেতাই আদিবাসী স¤প্রদায়ের কাছে যাননি। এনডিপি নেতা আন্দ্রেয়া হরওয়াথ একটি প্রত্যন্ত ফার্স্ট নেশনে ভ্রমণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পজেটিভ হওয়ায় সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এবারের ৯০ মিনিটের দু’টি রাজনৈতিক বিতর্কের সময় এনডিপি, পিসি, লিবারেল ও গ্রিণপার্টির প্রধানেরা মাত্র চারবার আদিবাসী জনগণের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি ৮ মাস আগে অনুষ্ঠিত ফেডারেল নির্বাচনের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। সে সময় অটোয়াতে অনুষ্ঠিত ৫টি বিতর্কের একটি বিষয় ছিল আদিবাসী জনগণ ও তাদের সংস্কৃতি।

সিবিসি নিউজ থেকে দলগুলোর কাছে আদিবাসীদের সম্পর্কে তাদের প্রতিশ্রæতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্টারিও লিবারেল, পিসি ও এনডিপি পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের প্রাথী ও নেতারা প্রচারাভিযানের পথে আদিবাসীদের সাথে কথা বলে চলেছেন এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অন্য দিকে গ্রিণপার্টি মিডিয়ার অনুুরোধে সারা না দিলেও তাদের প্লাটফর্মেও আদিবাসীদের বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রæতি রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

কিন্তু অন্টারিওর সাবেক আঞ্চলিক প্রধান ইসাডোর ডে বলেছেন, অন্টারিওর ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারনার মতোই ২০২২ সালের প্রচারনাতেও আদিবাসী বিষয়গুলো অনেকাংশে অনুপস্থিত। কানাডার বিভিন্ন স্থানে আবাসিক স্কুলে গণকবরের সন্ধান ও এগুলো নিয়ে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচারণার পরও এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় আদিবাসী ইস্যুটি যথেষ্ট গুরুত্ব না পাওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সম্পূর্ণ উৎসাহ ও লক্ষ্যযুক্ত প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। এটি হতাশাজনক ও বিস্ময়কর।’

আদিবাসীদের সমস্যাগুলোর দীর্ঘ তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে আবাসন, মানসিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশুদ্ধ পানি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতিসংঘের ঘোষণা বাস্তবায়ন। টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট নেশনস গবেষণা কেন্দ্র ইয়েলোহেড ইনস্টিটিউটের গবেষক ও লেখক রিলে ইয়েসনোর মতে, চারটি প্রধান দলের মধ্যেই আদিবাসী ইস্যুতে ‘বিশাল ফাঁক’ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী অগ্রাধিকারের বিষয়ে তাদের কোন প্রতিশ্রুতি নেই।
আদিবাসী স¤প্রদায়গুলোর স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা প্রদানেরও বিষয়েও কোন রোডম্যাপ নেই।
আনিশিনাবেক নেশনের সাবেক গ্রান্ড কাউন্সিলর প্রধান জন বিউকেজ বলেন, গত চার বছরে আদিবাসী স¤প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। আদিবাসীদের অর্থনীতি, দারিদ্রের মাত্রা, আবাসন, পানি সমস্যা এগুলো নিয়ে অনেক কথা হলেও কাজ খুব বেশি হয়নি। স্বাস্থ্য সেবা, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদের মতো বিষয়গুলো ফেডারেল সরকারের এখতিয়ারে থাকায় এগুলো নিয়ে স্থানীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। তবে তিনি আশা করেন যে প্রচারের বাকি দুই সপ্তাহে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। যে দল পরবর্তী প্রাদেশিক সরকার গঠন করবে তারা তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে যাবে না। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version